রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে বিএনপির নেতা কর্মীদের কাজ করতে হবে বনশ্রী আফতাব নগর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি বাবলু পন্ডিত, সম্পাদক জহুরুল ইসলাম ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ১৫তম সভা মহানগরী জোন আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মাইলস্টোন কলেজের কৃতিত্ব স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী নগরকান্দায় দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ওসি, সাংবাদিকসহ আহত- ৩০ কালীগঞ্জে নানা সংকটে গ্রাম আদালত সুফল পেতে প্রয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ মুন্সীগঞ্জে লুন্ঠিত মালামালসহ ৭ ডাকাত গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বর্ণিল পিঠা উৎসব

জীবনের ভরা কটাল বনাম মরা কটাল

গোলাম মাওলা রনি:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২

সে বহুকাল আগের কথা। আমি সম্ভবত তখন দশম শ্রেণীতে পড়ি। একদিন কী একটা কারণে যেন আমার মনটা ভীষণ খারাপ ছিল। সারা দিন নিদারুণ অস্থিরতা এবং রাতে একধরনের শঙ্কার কারণে না ঘুমিয়ে বিছানায় ছটফট করছিলাম। আমাদের গ্রামবাংলায় তখন প্রায়ই গভীর রাতে মাইক বাজানো হতো। বিয়েশাদি, সুন্নতে খতনা কিংবা নবজাতকের আকিকা উপলক্ষে অনেক পরিবারই উৎসবের আয়োজন করত এবং দিনের বেলায় খানাপিনা হলে উৎসবের আগের রাতে এবং পরের রাতে ঘটা করে মাইক বাজানো হতো। সে রাতেও হয়তো আশপাশের কোনো বাড়িতে উৎসব চলছিল এবং মাইকে অবিরত গান চলছিল এবং গানগুলোর মধ্যে রথীন্দ্রনাথ রায়ের কণ্ঠে ‘যৌবন জোয়ার একবার আসে রে বন্ধু- চলে গেলে আর আসে না’।
কুটি মনসুরের কথা ও সুর করা গানটি সেই রাতে আমাকে নিদারুণভাবে কাঁদিয়েছিল। মাত্র ১৫ বছর বয়সে আমি এমনতর একটি গানের কথামালা সুর এবং রথীন্দ্রনাথ রায়ের কিংবদন্তিতুল্য কণ্ঠ দ্বারা কেন এবং কিভাবে আবেগতাড়িত হয়েছিলাম তা আজ আর মনে করতে পারছি না। ঘটনাটি পরিণত বয়সে বহুবার স্মরণ করেছি এবং নিজের জীবনের বালখিল্য বলে হেসে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। কারণ আমার জীবনে তখন কিশোর বয়স চলছিল। কিশোরের পর তরুণ বয়স- এরপর যৌবন এবং পরবর্তী সময়ে বার্ধক্য। মানুষ যদি যৌবনে নিদারুণ ব্যর্থ হয় তবে এ ধরনের গান শুনলে হৃদয়ে আবেগ সৃষ্টি হয়- আর বৃদ্ধ বয়সে এই ধরনের গান শুনলে সব শ্রেণী পেশার বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তা তিনি সফল হন কিংবা ব্যর্থ তাতে কিছু আসে যায় না- তিনি আবেগতাড়িত হবেনই।
উল্লিখিত ঘটনার প্রেক্ষাপট এবং পরিণত বয়সের বুদ্ধিশুদ্ধি মিলিয়ে আমি যতবারই সে রাতের গানের সুরের সঙ্গে আমার অবিরত নয়নের জলের রসায়নকে বালখিল্য বলে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি- ততই নতুন করে মন খারাপের কালো মেঘ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছি। আজকের নিবন্ধের শিরোনাম প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে কেন আমার সেই কিশোরবেলার অশ্রুজলের কথা স্মরণে এলো তা বলার আগে শিরোনাম নিয়ে কিছু বলে নেই। অমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমার প্রভাবে নদী-সাগর-মহাসাগরে যে অতিমাত্রার জোয়ার আসে সেটিকে সবাই ভরা কটাল বলে। একইভাবে চন্দ্রের প্রভাবে যখন ভাটার টান প্রবল হয় তখন আবার সেটিকে মরা কটাল বলা হয়ে থাকে। মানবজীবনের উত্থান-পতনের সঙ্গে অনেকে ভরা কটাল অথবা মরা কটালের তুলনা করে অনেক নামী-দামি বাণী রচনা করেছেন। কেউ কেউ গল্প-কবিতা-উপন্যাস অথবা নাটক সিনেমা তৈরি করে যথেষ্ট সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত না বলে সংক্ষেপে যেটা বলতে চাই- তাহলো অমাবস্যা অথবা পূর্ণিমার প্রভাবে যেমন ভরা কটাল-মরা কটালের সৃষ্টি হয় ৎদ্রূপ মানবজীবনের উত্থান ও পতনের সঙ্গেও অমাবস্যা ও পূর্ণিমার মতো অনেক বিষয়বস্তু রয়েছে যেগুলো নিয়ামক হিসেবে কাজ করে থাকে এবং এসব নিয়ামকের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গ অর্থাৎ নারীর জন্য পুরুষ এবং পুরুষের জন্য নারী কিভাবে ভরা কটাল অথবা মরা কটালের পরিণতি বয়ে নিয়ে আসে তাই আজকের নিবন্ধে সবিস্তারে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
পুরুষের জীবনে কন্যা-জায়া-জননী অর্থাৎ তিনজন রমণী কিভাবে ত্রিমাত্রিক রসায়ন সৃষ্টি করতে পারে তার তিনটি ঐতিহাসিক উদাহরণ দিলে বিষয়টি আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। আপনি যদি কিংবদন্তির আব্বাসীয় খলিফা হারুন আল রশিদের জীবনী পর্যালোচনা করেন তাহলে দেখতে পাবেন যে, তার জীবনের পুরোটাই ছিল ভরা কাটাল। অসংখ্য সফলতা, কর্মের সার্থকতা ও স্বীকৃতি ছাড়াও যুদ্ধে বিজয় এবং ব্যক্তিগত শরীর স্বাস্থ্য, সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের বিচারে তিনি মহাকালের ইতিহাসের এক অন্যান্য মহানায়করূপে কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন। তার এই সফলতার পেছনে দুই নারী নিয়ামকরূপে কাজ করেছেন। প্রথমজন হলেন তার মা খায়জুরান এবং দ্বিতীয়জন হলেন তার স্ত্রী জুবায়দা বিনতে জাফর। এ ছাড়া তার একজন দাসী ছিলেন মারাজিল উম, যার বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে আরব্য রজনীর অনেক গল্প রচিত হয়েছে এবং এই মারাজিল উমের ‘গর্ভে’ই আরেক কিংবদন্তির খলিফা আল মামুনের জন্ম হয়।
খলিফা হারুন আল রশিদের জীবনের ভরা কটালে তিনজন গুরুত্বপূর্ণ নারী কিভাবে ভূমিকা রেখেছেন তা সংক্ষেপে আলোচনা করে তার বিশ্বস্ত দাসী মারাজিল উমের একটি কাহিনী বলে পরবর্তী উদাহরণ অর্থাৎ জুলিয়াস সিজার, সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জীবনের ভরা কটাল এবং মরা কটাল নিয়ে আলোচনা করব। প্রথমত বাদশাহ হারুনের রাজকর্ম, ব্যক্তিগত জীবন এমনকি গোপন জীবন নিয়েও তার মা-স্ত্রী কিংবা প্রিয়তমা দাসীরা কোনোকালে মেয়েলি কূটনীতি করেননি। বরং তার সমস্যাগুলো সমাধান, তার দুর্বল মুহূর্তে তাকে সান্ত¡না দেয়ার মতো উঁচুমার্গের শিক্ষা-দীক্ষা এবং আন্তরিকতা প্রদর্শন করে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ নারীরা অমর হয়ে আছেন। তার যখন ফ্রান্সের সম্রাট শার্লিমেনের সাথে বন্ধুত্ব চলছিল কিংবা স্পেনের উমাইয়া বা কায়রোয়ানের ফাতেমিদের সাথে বিরোধ চলছিল তখন তার স্ত্রী-মা কিংবা দাসীরা তসবি টিপে ঝাড়ফুঁক দেননি কিংবা উতু-পুতু কথা বলে সান্ত¡না দেয়ার নামে তার রাজসিক ব্যক্তিত্বকে হেয় করার অপচেষ্টা করেননি। তারা দূর থেকে দোয়া করেছেন এবং সর্বদা বলেছেন, সাহেবে আলম যা করবেন সেটিই আমরা সমর্থন করব এবং আপনার পাশে থাকব। তাদের এই সমর্থন-ভালোবাসা যে কতটা গভীর ছিল তা বাদশাহর দাসী মারাজিল উমের নি¤œবর্ণিত কাহিনীটি পড়লেই বুঝতে পারবেন।
মারাজিল উম সম্ভবত কৃষ্ণাঙ্গ দাসী ছিলেন। তার প্রতি বাদশাহ হারুনের অতিরিক্ত ভালোবাসা নিয়ে আমির ওমরাহদের মধ্যে নিদারুণ কানাঘুষা শুরু হলো। কিন্তু বাদশাহ কোনো কিছু পরোয়া না করে বরং মারাজিলকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দিলেন এবং সেই কারণে মারাজিল নজিরবিহীনভাবে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন। রাজধানীর অভিজাত মহলে ছি ছি রব পড়ে গেল। সবাই বলতে থাকলেন যে, ‘একটি হাবসী বাঁদীর ছলাকলায় বাদশাহের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’ বিচক্ষণ হারুন আল রশিদ সব কিছু জানতেন। তিনি একদিন রাতে সব আমির ওমরাহকে নৈশভোজে নিমন্ত্রণ জানালেন এবং যেখানে নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হবে সেখানে অসংখ্য মণি-মুক্তা, হীরা জহরত, সোনাদানা ইত্যাদি বড় বড় পাত্রে করে সাজিয়ে রাখলেন এবং সেই অনুষ্ঠানে দাসী মারাজিল উমকেও নিমন্ত্রণ জানানো হলো।
খানাপিনা শেষে বাদশাহ অভ্যাগত অতিথিদের বললেন- এই কামরায় যা কিছু রয়েছে সবকিছুই আমি আপনাদের উপহার দিতে চাই। এবার আপনারা নিজেদের পছন্দমতো যার যা ইচ্ছে তা নিতে পারেন। বাদশাহের নির্দেশ পাওয়া মাত্র সবাই উপহার সামগ্রীর ওপর হামলে পড়ল এবং বেহুঁশ ও মাতালের মতো কয়েক মুহূর্তের মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে কাড়াকাড়ি করে যে যেভাবে পারল সোনাদানা-মণি মাণিক্য দিয়ে নিজেদের পকেট এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভারী করে ফেলল। সবাই যখন ধনসম্পদ কাড়াকাড়িতে ব্যস্ত তখন মারাজিল উম নির্লিপ্তভাবে বাদশাহের মাথায় হাত রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। বাদশাহ বললেন- একি মারাজিল! তুমিতো কিছুই নিলে না। মারাজিল বললেন- আপনি বলেছিলেন- এই কামরায় যা কিছু রয়েছে সবই আপনাদের উপহার হিসেবে দিতে চাই! সম্মানিত আমিরুল মুমেনিন! এই কামরার মধ্যে আপনিও আছেন এবং আমার কাছে আপনার চেয়ে কোনো কিছুই মূল্যবান বলে মনে হয়নি। তাই আপনাকে পাওয়ার জন্য আপনার মাথায় হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছি।
কৃষ্ণাঙ্গ দাসীর কথা শুনে বাদশাহের দুটো আঁখি অশ্রুসিক্ত হলো এবং উপস্থিত আমির ওমরাহরা লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখলেন। বাদশাহ হারুনের পর আমি আপনাদের জুলিয়াস সিজারের কাহিনী বলব। সিজারের চেয়ে প্রায় ৩০ বছরের ছোট ক্লিওপেট্রার সাথে তার প্রণয় এবং বিয়ে রোমান সাম্রাজ্যে নিদারুণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। ক্লিওপেট্রার অতিরিক্ত প্রেম, বালিকাসুলভ চপলতা এবং অরাজনৈতিক আবদার পূরণ করতে গিয়ে মহামতি সিজার তার ব্যক্তিত্ব হারিয়ে অনেকের বিদ্রূপের পাত্রে পরিণত হন। প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, ‘বড় বড় সম্রাটদের ঈশ্বর, ঈশ্বরের পুত্র অথবা প্রতিভূ মনে করা হতো। সিজার সম্পর্কেও সবার ধারণা ছিল তিনি ঈশ্বরের প্রতিভূ এবং তার রক্ত পবিত্র। সুতরাং তাকে হত্যা করা যাবে না।’ কিন্তু ক্লিওপেট্রার প্রেমের আদিখ্যেতার কবলে পড়ে সিজার এমন সব কর্ম শুরু করলেন যা ইদানীংকালেও দেখা যায়। ধরুন ৭০ বছরের বৃদ্ধ কুড়ি বছরের কিশোরীকে বিয়ে করে দাড়ি কামিয়ে ফেললেন। তারপর চুলে কলপ দিয়ে জিন্স প্যান্ট এবং হাফহাতা গেঞ্জি পরে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি শুরু করলেন এবং সেই দৃশ্য দেখে আপনার যে প্রতিক্রিয়া হবে ঠিক তদ্রূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল সিজারের ক্ষেত্রে। সিজারের ছেলেমানুষীর কারণে তার সম্পর্কে মানুষের যে ভয়, আস্থা ও সম্ভ্রম ছিল তা কেটে গেল। যারা তাকে ঈশ্বরের প্রতিভূ বলে সমীহ করত এবং তাকে হত্যা করা অসম্ভব বলে মনে করত তারা ভাবলেন যে, কিশোরী ক্লিওপেট্রার প্রেমিক সিজার দেবতা হতে পারেন না এবং তার রক্তও পবিত্র নয়। সুতরাং তাকে হত্যা করা সম্ভব এবং এই সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য যিনি সবার আগে এগিয়ে এলেন তিনি হলেন সিজারের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু ব্রুটাস। আপনি যদি সিজারের জীবনের ভরা কটালে কী করে রাতারাতি মরা কটালে পরিণত হলো তা বিশ্লেষণ করেন তবে দেখবেন যে, একজন নারীর বাস্তবতাবিবর্জিত প্রেম এবং একজন পরিণত বয়সের মানুষ কর্তৃক তার পদ-পদবি ভুলে অর্বাচীন প্রেমের কাছে নিজেকে বিসর্জন দেয়ার কারণে বিশ্বের সর্বকালের সেরা মিলিটারি জিনিয়াস এবং সফল রাজনীতিবিদের জীবনে করুণ বিয়োগাত্মক পরিণতি ঘটেছিল।
জুলিয়াস সিজারকে বাদ দিয়ে এবার সম্রাট জাহাঙ্গীরের কথা বলি। তার অনিয়ন্ত্রিত জীবন, অবাধ্যতা এবং পিতা মহামতি সম্রাট আকবরের সঙ্গে বিরোধের কারণে তিনি ক্ষমতা লাভের অনেক আগেই মরা কটালের কবলে পড়েছিলেন। তিনি এত উঁচু মাত্রার অ্যালকোহল পান করতেন যা বিশ্বের কোনো রাজা বাদশাহ কোনোকালে করেননি। ইতিহাসবিদরা বলেছেন, তার জন্য পরিবেশিত মদে শতকরা ৬০ ভাগ অ্যালকোহল থাকত যা সাধারণ মানুষ সেবন করলে সাথে সাথে মারা যেত। সুতরাং এমন একজন মদ্যপ ব্যক্তি যখন দিল্লির সিংহাসনে বসলেন তখন সবাই ধরে নিয়েছিলেন যে খুব দ্রুত মোগল সাম্রাজ্যের দিন শেষ হতে যাচ্ছে। অথচ বাস্তবজীবনে তিনি যে সফলতা দেখিয়েছেন তা ভারতবর্ষে তো দূরের কথা- সারা দুনিয়ার খুব অল্পসংখ্যক সম্রাটের ভাগ্যে জুটেছে।
সম্রাট জাহাঙ্গীর সম্পর্কে আমি প্রায় চার বছর টানা গবেষণা করেছি এবং তার জীবনী অবলম্বনে একটি উপন্যাস লিখেছি। মোগল হেরেমে দুনিয়া কাঁপানো প্রেম শিরোনামে প্রায় তিন বছর ধরে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রতি সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে সেটি প্রকাশিত হয়েছে। আমি দেখেছি যে, জীবন-যৌবন এবং রাজনীতির মরা কটালে পড়া একজন প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত মানুষকে টেনে তুলে তার বিদূষী প্রিয়তমা নূরজাহান তাকে কিভাবে ইতিহাসে অমরত্ব দিয়েছেন। ফলে সম্রাট জাহাঙ্গীরের ইতিহাস পড়তে গেলে কোনো অবস্থাতেই নূরজাহান প্রসঙ্গ বাদ দেয়া সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে আজকের নিবন্ধে আর বিস্তারিত না বলে সম্রাট নেপোলিয়নের পতনের কাহিনী বলে উপসংহারে চলে যাবো।
সম্রাট নেপোলিয়নের মেধা-মননশীলতা, সাহস, নেতৃত্বের গুণ-সুশাসন প্রতিষ্ঠা, যুদ্ধ জয় থেকে শুরু করে ব্যক্তিত্বের মধ্যে যে বিরল চৌম্বক শক্তি ছিল অমনটি পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ এই মহামানবের সব গুণাবলি ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন জোসেফাইন নামক একজন চরিত্রহীনা, বদরাগী এবং কুৎসিত মহিলা। জোসেফাইন তালাকপ্রাপ্ত এক মহিলা যিনি বয়সে নেপোলিয়নের চেয়ে বড় ছিলেন। সম্রাট বড় ভালোবেসে তাকে বিয়ে করেছিলেন এবং সেই মহিলার হাজারো অপকর্ম সত্ত্বেও তাকে ক্রমাগত ভালোবেসে গেছেন এবং জীবনের পরতে পরতে চরিত্রহীনা ভ্রষ্টা এক মহিলার দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সম্রাটের জীবনে যে কী বিপর্যয় ঘটেছিল তা ইতিহাসের ছাত্রমাত্রই কমবেশি জানেন।
আমরা আজকের প্রসঙ্গের একেবারে প্রান্তসীমায় চলে এসেছি। নিবন্ধের মূল কথা হলো, জীবনে বিঘœ সৃষ্টিকারী আপনজন থেকে যথাসময়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রাখতে পারলে জীবনের অপার সম্ভাবনাগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে। অন্য দিকে জীবনকে উজ্জীবিত করে মনে প্রশান্তি আনে এবং বিশ্বাস-আস্থা ও নির্ভরতার জায়গাগুলো যেসব আপনজন তাদের জীবনের বিনিময়ে সংরক্ষণ করে তাদের সান্নিধ্যকে নিজের জন্য অপরিহার্য করতে না পারলে জীবন পূর্ণতা পায় না। সুলতান মাহমুদের ক্রীতদাস আয়াজ অথবা বাদশাহ হারুন আল রশিদের ক্রীতদাসী মারাজিল উমের মতো অপরিহার্য সঙ্গী পেলে আপনার সফলতার পথে বাধা সৃষ্টি করার দুঃসাহস কেউ দেখাবে না।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com