জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলায় বন্যার পানি সয়লাভ করেছে।মঙ্গলবার (২১জুন) যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পাওয়ায় সারা জেলায় প্রায় ১২০টি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে পড়ায় তারমধ্যে ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা কার্য্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করেছে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.আব্দুর রাজ্জাক। একই দিন ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের পশ্চিম বামনা ঘোনাপাড়ার এলাকার বাসিন্দা আলম মিয়ার ৮বৎসর বয়সী শিশু কন্যা আরিফা আক্তার পনিতে ডুবে মারা গেছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চিনাডুলি ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম। অপর দিকে ইসলামপুর গংগাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ধলা মিয়ার ছেলে ময়না মিয়া(৩০) বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে বিদ্যুৎতায়িত হয়ে পড়লে তাকে এলাকাবাসি দ্রুত ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফুর রহমান তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।এদিকে পাউবো সুত্রে জানাগেছে সোমবার বিকাল ৫টা নাগাদ ২৪ ঘন্টায় যমুনার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১৭ সেন্টি মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৪৯সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পানি মাপক গেজ পাঠক আব্দুল মান্নান ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ। জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সুত্র জানায় বন্যার পানিতে এ পর্যন্ত ১৭১৮ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এরমধ্যে ২৫ হেক্টরের আমন বীজতলা, ২১৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, ১৩২৬ হেক্টরের পাট, ১২২ হেক্টর জমির শাকসবজি ও ৩০ হেক্টর জমির মরিচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, বকসিগঞ্জ ও জামালপুর সদর ৭টি উপজেলায় বন্যার পানি সয়লাভ করেছে। ফলে বন্যা কবলিত কর্মহীন দরিদ্র পারিবারের জন্য এ পর্যন্ত ৭ উপজেলায় ৫০ মেঃ টন করে মোট ৩৫০ মেঃ টন চাল, নগদ ৭লাখ টাকা এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্ধ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা ত্রান ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন।এ বিষয়ে জামালপুরের জেলা প্রশাসক শ্রাবন্তী রায় নিহত ক্ষতিগ্রস্ত পারিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে আর্থিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।জামালপুরে বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু। অপরদিকে জামালপুরে বন্যায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি জামালপুরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষনে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার (২১ জুন) দুপুর ২ টা পর্যন্ত যমুনার পানি বেড়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জানিয়েছেন গেজ পাঠক আব্দুল মান্নান।সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলান্দহ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, সরিষাবাড়ী ও মাদারগঞ্জ উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের নি¤œাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ডুবে গেছে নি¤œাঞ্চলের বিভিন্ন ফসল।
পাঠদান বন্ধ হয়েছে জেলার অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জেলায় ৯০টি বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বাকিগুলো পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানান, পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বন্যা পরিস্থি’তি ভয়াবহ রূপ নেয়নি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবধরনের প্রস্থতি রয়েছে।জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন জানায়, পরি¯ি’তি মোকাবিলায়সরকারিভাবে জেলার সাতটি উপজেলায় ৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১ লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দুর্যোগ মোকাবিলা ৮৬টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ৮০টি মেডিকেল টীম প্র¯ত রাখা হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্থতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে রয়েছে।