ভৈরবে কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশীয় পদ্ধতিতে স্টেরয়েড ইনজেকশনমুক্ত গরু মোটাতাজাকরণ করছেন খামারিরা। তবে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে গরু খামারিরা নায্য দাম পাওয়া নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ভৈরবের খামারে পালিত গরু, মহিষ ও ছাগলে কোনোরকম স্টেরয়েড জাতীয় ইনজেকশন দেওয়া হয় না। এবছর কুরবানি উপলক্ষে উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও পৌর শহরে ৫০টির বেশি ছোট-বড় খামারে গরু, ছাগল, মহিষ মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। এসব পশু সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার দিয়ে পালন করেছেন খামারিরা। ২৩ বছর ধরে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশি গরু মোটাতাজাকরণ করে আসছেন ভৈরবের রুজেন ডেইরি ফার্মের মালিক আশরাফুল আলম রুজেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, চলতি বছর তার গরুর ফার্মে কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে ১৫টির বেশি গরু মোটাতাজাকরণ করেছেন। তবে তার ২৩ বছর যাবত গরু মোটাতাজাকরণের মধ্য এবছরের মতো গোখাদ্যের দাম আর কখনো বৃদ্ধি পায়নি। এই বছর গোখাদ্যের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে তা আসলেই দুশ্চিন্তার বিষয়।
এখন ভাবছি কিভাবে বাড়তি টাকা দিয়ে গোখাদ্য কিনে গরু মোটাতাজাকরণ করে লাভবান হবো সেই চিন্তায় দিন পার করছেন তিনি। যদি গত বছর যে গরু ১ লাখ টাকা বিক্রি করছি সেই গরু যদি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং দেড় লাখ টাকার গরু যদি দুই লাখ টাকায় বিক্রি করি তাহলে কিছুটা লাভবান হবেন বলে তার দাবি। পৌর শহরের চন্ডিবের এলাকার আইকন বাংলা এগ্রো ফার্মের মালিক ফোহাসাদ রাব্বী স্বজল বলেন, এই বছর আমার খামারে কুরবানির ঈদে বিক্রিযোগ্য ছোট-বড়-মাঝারি মিলে ৩০টি গরু রয়েছে। এছাড়া ১৫টি বড় জাতের ছাগল রয়েছে তা ঈদ উপলক্ষ্যে মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। এই খামারে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে দেশীয় খাবার দিয়ে পালন করা হয়েছে। এই খামার থেকে কোনো ক্রেতা যদি গরু কিনেন তাহলে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত তারা গরু লালন পালন করে দেবেন। তার খামারে রয়েছে আল্লাহরদান, আল্লাহ ভরসা, মাসল্লাহ, আল্লাহর রহমত, আল্লাহর বরকত, লাখ বাহাদুর, আল্লাহর নিয়ামত, কালোজাম, আল্লাহর ফজিলত, আলহামদুল্লিল্লাহ, তুফান নামের আকর্ষণীয় বড় বড় গরু। তিনি তার খামারের গরুকে কোনো ধরণের মুরগির খাবার খেতে দেন না। গ্রামীণ খাবার যেমন গমের ভূষি, ছোলা বুটের ভুষি, ভুট্টার ভূষি, নেপিয়ার ঘাস ও চিকন খড় খাওয়ান তিনি। তবে বর্তমান বাজারে গোখাদ্যের দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যে ভুষির এক বস্তার দাম ছিলো এক হাজার পাঁচশ টাকা এখন সেই ভুষির প্রতি বস্তার দাম তিন হাজার টাকা।
এবিষয়ে ভৈরব উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শিরিনা খাতুন বলেন, এই বছর উপজেলায় ৫০টি ছোট-বড় খামারে প্রায় ১১ হাজার গরু, ছাগল মহিষ মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। তা দিয়ে এই বছর উপজেলায় যে পরিমাণ পশুর চাহিদা রয়েছে সেই কুরবানির চাহিদা পূরণ করবে। এসব খামারে পশুদের স্টেরয়েড জাতীয় কোনো ধরণের ইনজেকশন ছাড়াই মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও সেবা প্রদান করে খামারিদের সহযোগিতা প্রদান করেছেন। তবে এবছর গোখাদ্যের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি থাকায় খামারিরা তাদের পালিত গরু, ছাগল, মহিষ ও ছাগলের নায্য দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে তিনি জানান।