শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৫ অপরাহ্ন

বরিশাল পোর্টরোড মোকামে নিষেধাজ্ঞা সত্বেও ট্রাকে ট্রাকে আসছে ইলিশ

বরিশাল প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২

ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ আইন রয়েছে। এই সময়ে সমুদ্রে সব ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, সংরক্ষণ ও ক্রয়-বিক্রয় আইনগত দন্ডনীয়। কাগজে কলমে এই আইন থাকলেও বরিশালের পোর্টরোড মোকামে অবাধে চলছে সামুদ্রিক ইলিশসহ অন্যান্য মাছের কেনা-বেঁচা। ভোলার চরমোন্তাজ এবং পাথরঘাটা উপকূল থেকে শিকার করা ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ ট্রাকে ট্রাকে আনা হচ্ছে পোর্ট রোড আড়তে। এখান থেকে পাইকারি ইলিশ কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করছে বেপারিরা। সকাল থেকে দুপুর অবধি পোর্ট রোডে প্রকাশ্যে সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হলেও মৎস্য বিভাগ কিংবা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী একেবারেই নিশ্চুপ। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যোগসাজসে উপকূলে শিকার করা কিছু সামদ্রিক মাছ বরিশালের বাজারে আসছে বলে স্বীকার করেছেন বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা। ৬৫ দিনের জন্য সামুদ্রিক মাছ ধরা, সংরক্ষণ, পরিবহন এবং ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ হলেও প্রতিদিন ট্রাকে করে দেড়শ’ থেকে ২শ মন সামুদ্রিক ইলিশ আসছে বরিশাল পোর্ট রোড মোকামে। স্থানীয় নদ-নদী থেকে আহরিত ৪০ থেকে ৫০ মন ইলিশ প্রতিদিন আসছে স্থানীয় আড়তগুলোতে। বুধবার পাইকারি বাজারে স্থানীয় নদীর ১ কেজি ২শ’ গ্রাম বা এর কাছাকাছি সাইজের এক মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬০ হাজার টাকায়। কেজি সাইজ প্রতি মন ৫৫ হাজার, রপ্তানিযোগ্য (৬শ’ গ্রাম থেকে ৯শ’ গ্রাম) এলসি সাইজ ৪৪ হাজার, ভেলকা সাইজ (৪শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ গ্রাম) ৩৪ হাজার এবং গোটলা সাইজ (আড়াই শ’ গ্রাম থেকে সাড়ে সাড়ে ৩শ’ গ্রাম) প্রতিমণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৭ হাজার টাকায়। এদিকে প্রকাশ্য ডাকে পোর্ট রোডে কেজি থেকে তদুর্ধ সাইজের প্রতি মণ সামুদ্রিক ইলিশ ৩৮ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায় এবং এর ছোট সাইজের লট বিক্রি হয়েছে ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকা মণ দরে। ইলিশ বিক্রেতারা জানান, স্থানীয় নদ-নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে কম। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ মণ নদীর ইলিশ আসছে মোকামে। অপরদিকে প্রতিদিন সামুদ্রিক ইলিশ আসছে দেড়শ’ থেকে ২শ’ মন। ভোলার চরমোন্তাজ, পটুয়াখালীর চলতাপলী এবং বরগুনার পাথরঘাটা থেকে ট্রাকে ট্রাকে সমুদ্রে আহরিত ইলিশ আসছে পোর্ট রোডে। মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির বর্তমান দুই নেতা এবং প্রয়াত এক সাবেক সভাপতির ছেলে সামুদ্রিক এই ইলিশ মোকামে আনেন বলে জানিয়েছেন তাদের কাছ থেকে মাছ কেনা বেপারিরা। ব্যস্ততম পাইকরী বাজারে ট্রাক ঢুকিয়ে খালাস করা হয় সামুদ্রিক ইলিশ। বাজারের মধ্যে ট্রাক ঢুকানোয় পাইকার-ক্রেতা-বিক্রেতা চলাচলে সমস্যা হলেও তারা প্রভাবশালী হওয়ায় টু-শব্দ করে না কেউ। আড়তদাররা জানান, বাজারে আসা এসব ইলিশ সমুদ্র মোহনার। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং মৎস্য বিভাগের যোগসাজসে সাগর মোহনায় শিকার করা মাছ বরিশাল মোকামে আসছে। পরে সাইজ ভেদে প্রকাশ্য ডাকে লট বিক্রি করেন তারা। বরিশাল বিভগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আনিচুর রহমান তালকুদার বলেন, সাগর উপকূলে শিকার করা ইলিশসহ কিছু মাছ বাজারে আসছে বলে শুনেছি। সবাই ভালো হলেও তো দেশটা আরও এগিয়ে যেত। মৎস্য বিভাগের লোকবল স্বল্পতা রয়েছে। কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ এবং নৌ বাহিনীর কতিপয় সদস্যের যোগসাজসে সাগর মোহনায় ইলিশ শিকার এবং পরিবহন করা হচ্ছে। মৎস্য বিভাগ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন-উল আহসান বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যোগসাজসে সাগরে মাছ ধরার বিষয়টি সঠিক নয়। তারা বরং সহযোগীতা করে যাতে সাগরে মাছ না ধরে। বিশাল কোস্টাল এরিয়া। সব জায়গায় আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যেতে পারে কিনা জানি না। বিষয়টি নজরদারী করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com