বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত মাইলস্টোন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

জুনে সড়কে প্রাণ গেলো ৫২৪ জনের

খবরপত্র ডেস্ক
  • আপডেট সময় সোমবার, ৪ জুলাই, ২০২২

গত জুন মাসে দেশে ৪৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫২৪ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত আরও ৮২১ জন। নিহতদের মধ্যে ২০৪ জনই মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়; যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
গতকাল সোমবার (৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এ তথ্য জানিয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫২৪ জনের মধ্যে নারী রয়েছেন ৬৮ জন এবং শিশু ৭৩টি। আর মোট ৪৬৭টি দুর্ঘটনার মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৯৭টি; যা মোট দুর্ঘটনার ৪২ দশমিক ১৮ শতাংশ। এছাড়াও বলা হয়, এসব দুর্ঘটনায় ১০৭ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮৬ জন, অর্থাৎ ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। এই সময়ে ৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত, ১৬ জন আহত হয়েছে এবং ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে। ১৮টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র:দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২০৪ জন (৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ); বাস যাত্রী ২৪ জন (৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ); ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি, ডাম্পার আরোহী ৩৯ জন (৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ); মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, জিপ যাত্রী ১৪ জন (২ দশমিক ৬৭ শতাংশ); থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, লেগুনা, হিউম্যান হলার) ১০৬ জন (২০ দশমিক ২২ শতাংশ); স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, চান্দেরগাড়ি) ১৩ জন (২ দশমিক ৪৮ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান আরোহী ১৭ জন (৩ দশমিক ২৪ শতাংশ) নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন:রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৫৯টি (৩৪ দশমিক ০৪ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৭৪টি (৩৭ দশমিক ২৫ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৭২টি (১৫ দশমিক ৪১ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ৫৬টি (১২ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬টি ১ দশমিক ২৮ শতাংশ সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন:দুর্ঘটনাসমুহের ১০৩টি (২২ দশমিক ০৫ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৯৮টি (৪২ দশমিক ৩৯ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৯টি (২৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়া, ৩৮টি (৮ দশমিক ১৩ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৯টি (৪ দশমিক ০৬ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন:দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ; ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি, তেলবাহী ট্যাঙ্কার, প্রিজনভ্যান, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ; মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, জিপ, পুলিশ পিকআপ, আর্মি ট্রাক ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ; যাত্রীবাহী বাস ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ; মোটরসাইকেল ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ; থ্রি হুইলার (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, লেগুনা, হিউম্যান হলার) ১৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ; স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন, ভটভটি, টমটম, মাহিন্দ্র, চান্দের গাড়ি) ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ; বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, প্যাডেল ভ্যান ২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য (ডাম্পার, ড্রাম ট্রাক, রোড রোলার, ইটভাঙ্গার গাড়ি) ১ দশমিক ১৩ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা:দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭৯৩টি। এর মধ্যে ট্রাক ১৩০টি, বাস ৭৮টি, কাভার্ডভ্যান ২৪টি, পিকআপ ৫৪টি, ট্রলি ১১টি, লরি ৫টি, ট্রাক্টর ১৩টি, তেলবাহী ট্যাংকার দুইটি, প্রিজনভ্যান দুইটি, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক একটি, মাইক্রোবাস আটটি, প্রাইভেটকার ১৩, অ্যাম্বুলেন্স চারটি, জিপ দুইটি, পুলিশ পিকআপ একটি, আর্মি ট্রাক একটি, মোটরসাইকেল ২১২টি, থ্রি হুইলার ১৪৯টি (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, লেগুনা, হিউম্যান হলার), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৫১ (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, টমটম, চান্দের গাড়ি), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান ২৩টি এবং অন্যান্য ৯টি (ডাম্পার, ড্রামট্রাক, রোড রোলার, ইট ভাঙ্গার গাড়ি)।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ:সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ, সকালে ৩৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, দুপুরে ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ, বিকালে ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং রাতে ১৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান: দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগেদুর্ঘটনা ২৫ দশমিক ০৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, রাজশাহীতে দুর্ঘটনা ১৫ দশমিক ৪১ শতাংশ, প্রাণহানি ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ, প্রাণহানি ১৬ দশমিক ২২ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ, প্রাণহানি ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৮ দশমিক ২০ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ, প্রাণহানি ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, প্রাণহানি ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ১০ শতাংশ ঘটেছে। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে, ১১৭ টি দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৩ টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ২৯ টি দুর্ঘটনায় ৪১ জন নিহত। সবচেয়ে কম রাঙ্গামাটি, মাগুরা, লালমনিরহাট ও সুনামগঞ্জ জেলায়। এই চারটি জেলায় ৯টি সাধারণ মাত্রার দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও ছয় জন আহত হয়েছে।
দুর্ঘটনায় নিহতদের পেশাগত পরিচয়: গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য চার জন, বিমান বাহিনীর সদস্য একজন, বিজিবি সদস্য তিনজন, স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষক ১৭ জন, চিকিৎসক দুই জন, পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানী দুই জন ও প্রকৌশলী দুই জন, সাংবাদিক তিন জন, আইনজীবী দুই জন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ৯ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১১ জন, সমবায় উপপরিদর্শক একজন, বিআরডিবি কর্মকর্তা একজন, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২১ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৩২ জন, পোশাক শ্রমিক ছয় জন, ইউপি সদস্য দুই জনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৩ জন এবং দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭৮ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। প্রতিবেদনে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কয়েকটি কারণের কথাও উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, দুর্ঘটনা হয়ে থাকে মূলত ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি। দুর্ঘটনা কমানোর ১০ দফা সুপারিশ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। তারা ‘দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে’ প্রভৃতি সুপারিশ তুলে ধরে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com