ঠাকুরগাঁওয়ে বৃষ্টির অভাবে চাষের জমি সঙ্গে আমন ধানের উৎপাদনও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি অফিস। গতবছর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ৫১ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। ফলন উৎপাদন হয় ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৬১০ মেট্রিক টন। জুলাই ১-৩১ তারিখ পর্যন্ত মূলত আমনের চারা রোপণের কাজ চলে। কিন্তু এ বছর জুলাইয়ের শুরু থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহ পেরোলেও বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিরা চারা রোপণ করতে পারেননি। ঠাকুরগাঁও কৃষি অফিস সূত্র বলছে, উপজেলা জুড়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে আমন চাষ মূলত বৃষ্টি নির্ভর। সরকারি হিসেবেই আমন চাষের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ জমিতে সেচের ব্যবস্থা নেই। যেখানে সেচের ব্যবস্থা সেখানকার চাষিরাও বাড়তি খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। ফলে টানা ভারী বৃষ্টি না হলে কী হবে তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে চাষিদের। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষ্ণ রায় বলেন, প্রতি বছর জুলাই মাসে গড়ে ৭০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। এ বছর এখনও পর্যন্ত বড়জোর ১৭০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। পানির সমস্যায় অনেকে পাট কেটে আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না। তানিয়ে আমরাও চিনতায় আছি। তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত ১০ শতাংশ জমিতে আমনের চারা রোপণ করা হয়েছে। দ্রুত ভারী বৃষ্টিপাত না হলে সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় উৎপাদন যেন ব্যহত না হয় সেজন্য চারার বয়স ঠিক রেখে সম্পূরক সেচ প্রদান করে রোপন কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে বিএডিসি এবং বিএমডিএর সেচ পাম্পগুলো চলমান রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদরের ২২টি ইউনিয়নে আমন ধানের চাষ হয়। মূলত পাট কেটে নেওয়ার পরে চাষিদের একাংশ ওই জমিতে আমনের চারা লাগান। এ বার বৃষ্টির অভাবে খাল-বিল প্রায় শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে পাট পচাতে পানির সমস্যা তৈরি হয়েছে। ফলে এখনও পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিরা পাট কাটতে পারেননি। যাঁরা পাট কেটেছেন বা খালি জমিতে আমনের চারা রোপণ করবেন ভেবেছিলেন তাঁদের অনেকেও বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। সদরের রুহিয়া, রাজাগাঁও, ঢোলারহাট, আখানগর, সেনুয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় আবার চারা রোপণের পরেও বিস্তীর্ণ এলাকায় চড়া রোদের জেরে মাটির রস শুকিয়ে জমি ফেটে হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে চাষিদের একাংশের দাবি। রাজাগাঁও ইউনিয়ন এলাকার চাষি নৃপেন রায় বলেন, আলুর দাম মেলেনি, পানির অভাবে পাট পচাতে সমস্যা চলছে। তার ওপর আমন ধান চাষের কাজেও প্রায় অনাবৃষ্টি পরিস্থিতির ছায়া পড়েছে। সর্বত্র তো সেচের ব্যবস্থা নেই। রুহিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা চাষি মকবুল হোসেন বলেন, বৃষ্টির জন্য অপেক্ষায় থেকে লাভ হয়নি। তাই বিদ্যুৎ চালিত মোটর লাগিয়ে পানি উত্তোলন করে তিন বিঘায় দু’দিন আগে আমনের চারা লাগিয়েছি। চড়া রোদে ওই জমি শুকিয়ে চারার ক্ষতির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাড়তি খরচ করে পানি সেচ নিয়ে চিন্তায় আছি। আমাদের গ্রামের অনেকের সেচ ব্যবস্থা না থাকায় অবশ্য চারাই লাগাতে পারেনি। ঠাকুরগাঁও সদরের রাজাগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা নন্দ বর্মন বলেন, চার বিঘাতে চাষ করি। এখনও বৃষ্টি না হওয়ায় মাত্র দেড় বিঘাতে চারা লাগাতে পেরেছি। বীজতলার চারা গাছ তৈরির পর এক মাসের মধ্যে রোপণ করতে হয়। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।