বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) এমপি। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সাথে শ্রীলঙ্কার অনেক মিল আছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স গ্রহণ করে, পর্যটন থেকে আয় করে আবার গার্মেন্টস শিল্প থেকেও আয় করে দু’টি দেশ। করোনা বা ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়নি। শ্রীলঙ্কায় প্রায় ১০ বছর গৃহযুদ্ধ চলেছে কিন্তু শ্রীলঙ্কা তখনো দেউলিয়া হয়নি। শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়েছে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে।’ গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কাার্যালয় মিলনায়তনে দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম হুসেইন মোহম্মদ এরশাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিরোধী দলের এই উপনেতা আরো বলেন, ‘আমরা যে বাজেট করছি তাও ঋণ নির্ভর। তাই পরিচালন ব্যয় কমাতে বলেছি সরকারকে কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেই। আবার কারণে-অকারণে ফুর্তি করতে ব্যয় হচ্ছে হাজার কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, গত বছরও পুরো ট্যাক্স আদায় করতে পারেনি সরকার। কিন্তু এবার সাধারণ মানুষ ট্যাক্স দিতে না পারলে অবস্থা আরো খারাপ হবে। বিদেশি ঋণ নিয়ে বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। যখন সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হবে তখন দেশের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাবে। যদি ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কোনো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় আর সেখান থেকে প্রতিদিন এক কোটি টাকা হারে বছরে ৩৬৫ কোটি টাকা আয় হয় তাহলে শুধু আসল পরিশোধ করতে ৯০ বছর লেগে যাবে। আবার সুদের টাকাও পরিশোধ করতে হবে। সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে গিয়েই শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়েছে। ঋণ নির্ভরতার কারণে দেশের ব্যাংকে টাকা নেই। পরিচালন ব্যায় না কমালে ব্যাংক থেকে ঋণ করে বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে। এ কারণেই দেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে। জিএম কাদের আরো বলেন, মেগা প্রকল্পের নামে দেশে লুটপাট চলছে। প্রতি বছর দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। এতদিন সরকার টাকা পাচারের কথা স্বীকার করেনি। এখন ট্যাক্সের বিনিময়ে অবৈধ পন্থায় অর্জিত পাচার হওয়া হাজার কোটি টাকা বৈধ করার পন্থা বের করেছে। এমন নজির পৃথিবীর কোথাও নেই। ট্যাক্স দিলেই যদি অপরাধ মাফ হয়ে যায় তাহলে ভবিষ্যতে খুন ও ডাকাতিও ট্যাক্সের মাধ্যমে বৈধতা পেতে পারে।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো: মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, ফকরুল ইমাম এমপি, সুনিল শুভরায়, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সফিকুল ইসলাম সেন্টু, অ্যাড. মো: রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া, নাজমা আকতার এমপি, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রওশন আরা মান্নান এমপি, জহিরুল আলম রুবেল, নাজনীন সুলতানা, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফখরুল আহসান শাহজাদা ও মিজানুর রহমান মিরু। রওশন এরশাদের তরফে দোয়া মাহফিল : হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গুলশানস্থ ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি’র পক্ষে দোয়া ও মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহের তত্ত্বাবধানে এই মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
মিলাদ-মাহফিল ও দোয়া পরিচালনা করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্বারী মো: হাবিবুল্লাহ বেলালী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী এম এ সাত্তার, সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মিলন, সাবেক এমপি জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু প্রমুখ। এরশাদের প্রতিকৃতিতে ডা. জাফরুল্লাহর শ্রদ্ধা : এদিকে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডা. জাফরুল্লাহ প্রথমে মরহুম এরশাদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন ও মোনাজাত করেন। শ্রদ্ধা জানানো শেষে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কিছু সময় অতিবাহিত করেন তিনি। এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের মুঠোফোনে ডা. জাফরুল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।