তিন বছর মেয়াদী কমিটি দিয়ে দীর্ঘ একযুগ যাবৎ পরিচালিত হচ্ছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের কার্যক্রম। প্রায় বিশ বছর যাবৎ দুই মেয়াদে সংগঠনটির নেতৃত্বে রয়েছেন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। একই ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন নেতৃত্বে থাকায় সংগঠনে সৃষ্টি হয়েছে নেতৃত্বের বন্ধাত্ব। চাঁদাবাজি, হত্যাচেষ্টা, অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সংগঠনের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে একাধিক মামলা। জুয়াখেলা অবস্থায় র্যাবের হাতে আটক হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক, প্রতারনার মামলায় জেলহাজতে রয়েছেন এক সহ-সভাপতি। উপজেলা যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের চারিত্রিক ও নৈতিক স্খলন, অসাংগঠনিক কাজ, কমিটি ও পদবী বানিজ্যের ফলে ভাবমূর্তি সংকটে ভুগছে সংগঠনটি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অতিদ্রুত বিতর্কিতদের নেতৃত্বে চলা সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে স্বচ্ছ ও দক্ষ সংগঠকদের নেতৃত্বে এনে উপজেলা যুবলীগে প্রাণসঞ্চার ঘটানোর দাবি সকলের। তাড়াশ উপজেলা যুবলীগ সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১১ সালে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ২০০৩ সালে গঠিত উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খান সভাপতি ও একই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো: ফরহাদ আলী বিদ্যুৎকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরই এই দুজন শুরু করেন রাজনৈতিক অনিয়ম। পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনে বাদ দেয়া হয় সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বাবুল শেখকে। অভিযোগ রয়েছে, পূর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের দীর্ঘদিন পর নতুন করে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সহ-সভাপতিসহ বেশকিছু পদে বসান তাড়াশের ‘সাহেদ’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া প্রতারক ডিজে শাকিলসহ বেশ কয়েকজনকে। ইউনিয়ন কমিটি গঠনেও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার খান ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী বিদ্যুৎ। অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে তাড়াশ সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সভাপতি বাবুল আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক ফারুখ মহুরিকে পূনাঙ্গ কমিটি করতে বাঁধা দিয়ে নির্বাচিত কমিটি বাতিল করে দেন। এছাড়াও সগুনা ইউনিয়ন যুবলীগের দুটি কমিটি অনুমোদন দেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক। কমিটি বাণিজ্য করা ও স্বপদে টিকে থাকার লোভে বর্তমানে কমিটির মেয়াদ না থাকার পরও চিঠি বিলি করে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের কমিটি গঠনের পায়তারা করছেন এই দুই যুবলীগ নেতা। সাংগঠনিক অনিয়মের পাশাপাশি উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার খান ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলীর বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ রয়েছে। দুজনের বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি ও অর্থ আত্মসাতের মামলা। শুধু তারা দুজনেই নন উপজেলা কমিটির বেশ কয়েকজন বিভিন্ন মামলার আসামি। এর মধ্যে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে রয়েছে সংখ্যালঘুদের নিকট থেকে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ। গনেশ চন্দ্র সরকার নামের একজন আদিবাসি চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন তার বিরুদ্ধে। জুয়ার আসর থেকে টাকাসহ র্যাবের হাতে আটক হওয়া উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলীর বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যাচেষ্টা, চাদাবাজি ও অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগের অন্তত হাফ ডজন মামলা। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় নিজ দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যানকে হত্যাচেষ্টা চালান তালিকাভুক্ত এক রাজাকারের মেয়ে জামাই এই বিদ্যুৎ। এছাড়া একই কমিটির সহ-সভাপতি ডিজে শাকিল, বাহাদুর আলী, সদস্য আব্দুল বারেক, গোলাম মোস্তফা, বেল্লাল হোসেন, মুর্শিদ মনিরুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে নানা অভিযোগের মামলা। সর্বপরি উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট সংগঠনের নাম ব্যবহার করে ক্ষমতাসিন দলের প্রভাব বিস্তার করে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। এই বিশদ অপকের্মর পরও তাড়াশ উপজেলা যুবলীগ তাদের অনৈতিক কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে, এ যেন দেখার কেউ নেই। দুই কমিটি মিলিয়ে প্রায় ২০ বছর নেতৃত্বে থাকা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের বিতর্কিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে রাজনীতি করতে অনিহা রয়েছে উপজেলাটির বিভিন্ন প্রান্তের আওয়ামী সমর্থক যুব সমাজের। যার ফলে চরম অগ্রহণযোগ্য ও অর্জনপ্রিয় বন্ধা সংগঠনে পরিনত হয়েছে তাড়াশ উপজেলা যুবলীগ। এ অবস্থায় বর্তমান কমিটি বাতিল করে দক্ষ, যোগ্য ও স্বচ্ছ ভাবমুর্তির নেতৃত্বের মাধ্যমে নতুনরূপে উপজেলা যুবলীগ গড়ে রাজনীতিতে প্রানের সঞ্চার করার দাবি জানিয়েছে যুবলীগের কর্মি ও সমর্থকবৃন্দ। এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের ২০১১ সম্মেলনে সাধারন সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তাড়াশ সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো: বাবুল শেখ বলেন, সম্মেলনের পরই দলীয় সহকর্মিদের প্রতিদ্বন্দ্বি ভেবে পদবঞ্চিত করে সাংগঠনিক অনিয়ম শুরু করেছে তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক। তাড়াশে যুবলীগের রাজনীতিতে বন্ধাত্ব ঘুচিয়ে প্রানের সঞ্চার করতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের বিকল্প নেই। তাড়াশ সদর ইউনিয়ন যুবলীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এস এম ফারুখ মহুরি বলেন, অগঠনতান্ত্রিকভাবে চলছে তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের কর্মকান্ড। অন্যায়ভাবে আমাদের নির্বাচিত কমিটি বাতিল করা হয়েছে। যুবলীগের নেতৃত্বে আসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে এ অঞ্চলের একঝাক যুবককে। নির্বাচিত কমিটি অনুমোদন হয় না, অথচ রাতের অন্ধকারে পকেট কমিটি পাশ করা হয়। তাই অতিদ্রুত উপজেলা যুবলীগের বিতর্কিত কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করা উচিত। নিজেদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলমান থাকার বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী বিদ্যুৎ জানান, আমরা দির্ঘদিন রাজনীতি করি, যুবলীগের নেতৃত্বে রয়েছি। আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। আমরাও চাই উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন দেয়া হোক, নতুন নেতৃত্ব আসুক। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা পেলে সম্মেলন দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।