ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গা পূজাসহ যে কোনো উৎসবেই শেকড়সন্ধানী বাঙালি হয়ে ওঠে আনন্দে মাতোয়ারা। আর তাদের এই আবেগকে পুঁজি করে গণপরিবহনের টিকিটের সিন্ডিকেট-বাণিজ্য গেড়ে বসে দেশের একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। জীবিকার তাগিদে কিংবা পড়াশোনার জন্য গ্রাম থেকে শহরে আসা প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ এলাকায় প্রিয়জনের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ উপভোগের সুপ্ত ইচ্ছা বাস্তবায়নে রেল, নৌ, সড়ক কিংবা বিমানপথে ছোটে আপন আপন গন্তব্যের দিকে।
এ সময় যাতায়াত মাধ্যমগুলোর প্রতিটিতেই উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। ঈদ কিংবা পূজার ছুটিতে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর ছেড়ে যায় গ্রামের উদ্দেশ্যে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি এবং শহুরে একঘেয়ে জীবন থেকে বাইরে গিয়ে একটু নিজেদের মতো করে সময় কাটাতে চায় আপনজনদের সঙ্গে। আর এই চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা মেতে ওঠে টিকিটের সিন্ডিকেট-বাণিজ্যে। ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, হিন্দুদের সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা এমনকি মৌসুমি ছুটির সময়ও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ চাহিদা বৃদ্ধি পেলেই শুরু হয় সিন্ডিকেট। এ সময়ে একটি টিকিটের ব্যবস্থা করতে নিজের ধৈর্যের সর্বোচ্চ পরীক্ষা দিতে হয় যাত্রীর। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দিন গড়িয়ে রাত হয় তবু টিকিটের দেখা মেলে না। আবার কোনো মতে ব্যবস্থা করা গেলেও দ্বিগুণ-বহুগুণ মূল্যে তা সংগ্রহ করা মধ্যবিত্ত কিংবা নি¤œবিত্ত মানুষের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই তাদের অপেক্ষার প্রহরও ফুরায় না। যে কোনো উৎসবের সময় বা সরকারি ছুটির দিনে বাড়ি যেতে ১৫-২০ দিন আগে টিকিট সংগ্রহ করতে গেলেও দেখা যায় সেই দিনের সব টিকিট আগেই বিক্রি বা বুকড হয়ে গেছে! দুঃখজনক সত্য হলো, এটা শুধু মধ্যবিত্ত কিংবা নি¤œবিত্ত লোকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যারা ক্ষমতাবান-ধনবান অর্থাৎ দ্বিগুণ, চার গুণ দামে টিকিট কেনার সামর্থ্য রাখেন, তাদের জন্য থাকে টিকিটের ‘বিশেষ ব্যবস্থা’। সাম্প্রতিক সময়ের ‘টিকিট সিন্ডিকেট’ এবং তাদের সর্বময় দৌরাত্ম্য কারো অজানা নয়। বিশেষ করে, ট্রেনের টিকিট সংগ্রহের ক্ষেত্রে এর প্রভাব অতি প্রকট। ভোগান্তি লাঘবে টিকিট সংগ্রহে ‘অনলাইন ব্যবস্থা’ চালু করা হলেও অব্যস্থাপনার কারণে তার সুফল ভোগ করতে পারছে না জনসাধারণ। এতে চরম বিপত্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।
টিকিট কালোবাজারি তথা টিকিট সিন্ডিকেটের জেঁকে বসার নেপথ্য কারণ হিসেবে দেখা যায়, নৈতিকতার দুর্বল অবস্থান, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা, সচেতনতার অভাব, সংশ্লিষ্টদের নজরদারি অভাব ইত্যাদি। সাধারণের ভোগান্তি লাঘবে এসব বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা খুবই জরুরি। তার সঙ্গে সঙ্গে একজন সুনাগরিক হিসেবে আমাদের এ বিষয়ে সচেতন ও সময়োপযোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, উৎসবকে ঘিরে অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা আয়ের যে খেলায় মেতে ওঠে তার প্রতিবাদ না করে, কেন আমরা কুকর্মকে প্রশয় দেব? আমাদের অধিকারসচেতন হতে হবে, প্রয়োজনে আইনের সহায়তা নিতে হবে। শুধু নিজের কথা না ভেবে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কথা ভাবতে হবে। গুটিকয়েক মানুষ অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে পারলেও সবাই তা পারছে না এবং এ অতিরিক্ত অর্থ প্রদান মানে এই অন্যায়ে শামিল হওয়া, সহযোগী হওয়াÍএ কথা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে হবে। লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়