দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সারা বছর মিলবে আম। আম থেকে বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা পুরণ হবে। বাণিজ্যিক বাগান করে চাষিরা লাভবান হবেন। এ অঞ্চলে দেশি-বিদেশী ৫০ প্রজাতির আমের বাণিজ্যিক চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী হর্টিকালচার সেন্টার। এখানে ৫০ প্রজাতির দেশি-বিদেশী আমের মাতৃ গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করছে হর্টিকালচার সেন্টার।
প্রতিষ্ঠানটি গোপালগঞ্জ ও আশপাশের জেলায় ফলের প্রদর্শনী বাগান করে দিচ্ছে। এখানে তারা চারা, সার, কীটনাশকসহ সব ধরণের পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তারা ১ শ’ টি ফলের বাগান স্থাপন করেছে। এসব ফল বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির আম ধরেছে। ফল বাগানের মালিকরা পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত আম বজারে বিক্রি করছেন। এছাড়া হর্টিকালচার সেন্টার বাড়ির আঙ্গিনায় আমসহ বিভিন্ন ফল গাছ রোপণে উদ্বুদ্ধ করছে। অনেক পরিবার হর্টিকালচার সেন্টার থেকে আমসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের চারা নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করেছেন। এসব গাছ থেকেও তারা আমসহ বিভিন্ন ফল সংগ্রহ করে পরিবারের ফলের চাহিদা মেটাচ্ছেন।
গোপালগঞ্জে হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, এ হর্টিকালচার সেন্টারে বারি-৪, কার্টিমন,কিউজাই, ব্যানানা, ব্রুনাইকিং, ৪ কেজি, আশি^না, সুরমাই ফজলি, পাহাড়ি ফজলি, চিনি ফজলি, নাগ ফজলি, হাড়িভাঙা, মেহেদী-১, মেহেদী-২, বারি-১১, ল্যাংড়া, হিমসাগর,খিরসাপাত,মালদাহ, কাঁচামিঠা,গৌরমতি,বান্দিগৌড়, থাইজাম্বুরা, আ¤্রপলি,তোতাপুরি, সূর্যডিম,বারি-৮,বাউ-১৪,কিং অব চাকাপাত,আপেলস্টার, মল্লিকা,গোপালভোগ,ক্ষীরভোগ, লক্ষণভোগ, মোহনভোগ, জাদুভোগ, গোলাপখাস, তিলেবোম্বাই, বোম্বাই, সুলতানা, ঝিঙ্গেলতা, বৈশাখী, সূর্যপুরী, রতœা, চোষা, আলতাপেটি, রানিপছন্দ, দুধসর, মিছরি দানা ও কাকাতুয়া প্রজাতির আমের মাতৃ গাছ রয়েছে। এসব মাতৃগাছ থেকে ১ লাখ কলমের চারা তৈরি করা হয়েছে। এখান থেকে সরকার নির্ধারিত সুলভ মূল্যে দেশি-বিদেশী আমের চারা বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলোর চাষাবাদ গোপালগঞ্জ ও আশপাশের জেলায় ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আমাদের আমের জাত গুলো উচ্চ ফলনশীল। সিজন ছাড়াও সারা বছরই ফলন দিতে সক্ষম আমের জাতও এরমধ্যে রয়েছে। লেট ভ্যারাইটির আম গুলো বজারে অধিক দামে বিক্রি হয়। এছাড়া বারমাসি আমে চাষি লাভবান হবেন। আমরা ইতিমধ্যে ফলের ১ শ’টি প্রদর্শনী বাগান করেছি। এখানে সব জাতের আম রাখা হয়েছে। এসব বাগানে আম ধরেছে। এছাড়া বাড়ির আঙ্গিনায় আমসহ বিভিন্ন ফল চাষে আমরা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছি। তারা ফলের চারা লাগিয়ে সারা বছর ফল থেকে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৫০ প্রজাতির আম চাষ ছড়িয়ে দিতে আমরা কাজ করছি। এটি ছড়িয়ে দিতে পারলে এ অঞ্চলে সারা বছর আম পাওয়া যাবে। আমের বাগান করে চাষি অধিক দামে সারা বছর আম বিক্রি করে লাভবান হবেন। বিশাল জগগোষ্ঠী সারা বছরই রসালো আমের অম্লমধুর স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন।
হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান তত্ত্ববিদ এ.এইচ.এম রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমরা আমের বাণিজ্যিক চাষের প্রসার ঘটিয়ে কৃষকের আয় দ্বিগুন করে দিতে চাই। তাই আমরা বিশে^র নামি-দামি আমের জাতের পাশাপাশি দেশীয় আমের জাতের চাষ সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছি। এসব জাতের আম বাগান করলে চাষি সারা বছর ২৫ টাকা থেকে শুরু করে ৫ শ’ টাকা কেজি দরে আম বিক্রি করতে পারবে ন। আমের আমদানী নির্বরতা শূণ্যের কোঠায় নেমে আসবে। অফ সিজনে বাড়তি দামে আম বিক্রি করে চাষি অধিক লাভবান হবেন। এতে কৃষকের আয় বাড়বে। আমের আয়ে দেশ সমৃদ্ধ হবে।
কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল গ্রামের পরশ উজির বলেন, হর্টিকালচার সেন্টার ৪ বছর আগে ১ একর জমিতে আমাদের একটি মিশ্র ফল বাগান করে দিয়েছে। এ ফল বাগানে আম ধরেছে। আমগুলো খেতে সুস্বাদু। এ আমে কোন ফলমালিন নেই। আমরা বিষমুক্ত আম পাচ্ছি। এ আম আমরা খাচ্ছি । আতœীয় স্বজনদের দিচ্ছি। আমরা আম বিক্রি করি না। মে সাম থেকে শুরু করে সার বছরই আমাদের বাগানে আম থাকেছে। অনেকে আমাদের মিশ্র ফল বাগান দেখতে আসছেন। তারা বাগান দেখছেন ও আমের স্বাদ গ্রহণ করছেন। বাণিজ্যিক আম বাগান করতে তারা আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
সংবাদ কর্মী প্রসিত কুমার দাস বলেন, বাড়ির আঙ্গিনায় বছর ব্যাপী ফল চাষের মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা পুরণের জন্য সরকারের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। হর্টিকালচার সেন্টার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এ অঞ্চলে আমসহ বিভিন্ন ফলের চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলের মাধ্যমে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে অনেকে বাজারে ফল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। হর্টিকালচার সেন্টার ৫০ প্রজাতির আম চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি সফল হলে এ অঞ্চলে আমের বিপ্লব ঘটবে। আম চাষ করে অনেকেই সাবলম্বী হবেন। অমৃত ফল আম এ অঞ্চলের মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।