রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৮:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
কেশবপুরে উন্নয়ন কর্মকান্ডে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক মতবিনিময় সভা গ্রামবাংলার খেলাধুলার একটি ঐতিহ্য ছিল এসব কাঠের খেলনা গজারিয়াবাসীর সেবা করাই রুহুল আমিনের লক্ষ্য আনারস প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব আঃ হককে চায় সর্বস্তরের জনগণ গলাচিপা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির মানববন্ধন জামালপুরে পল্লীবিদ্যুতের অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের অঙ্গীকার আছে পদ্মা-মেঘনায় মিলছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা রাজউকের প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়ে নতুন বিধিমালা

জ্বালানি তেলের মজুদ সক্ষমতা বাড়াতে হবে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থাগুলোর প্রমিত মান অনুযায়ী, স্বাভাবিক অবস্থায়ও আমদানিনির্ভর দেশগুলোর আপৎকালীন ব্যবহারের জন্য অন্তত ৯০ দিনের জ্বালানি তেলের সংস্থান রাখা উচিত। যদিও দেশের মোট মজুদ সক্ষমতা এর অর্ধেক। সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে প্রতিবেশী ভারত পর্যন্ত বিশ্বের অনেক দেশই বিনিয়োগের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের কৌশলগত মজুদ সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলছে। যুদ্ধ বা দুর্যোগকালীন বিপদের সময়ে সরবরাহ ঠিক রাখা এবং বাজার অস্থিতিশীলতার সময়ে জ্বালানি পণ্যের ক্রমাগত দর বৃদ্ধির চাপ থেকে জনগণকে সুরক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মূলত এ সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা হয়। এছাড়া পণ্যটির বাজার বা আন্তর্জাতিক পরিম-লের নানামুখী ঘটনাবলি যাতে দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনাকে নাজুক করে তুলতে না পারে, সেজন্যও এ মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। যদিও দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনা-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে এ ধরনের উদ্যোগ তেমন একটা নেই বলে অভিযোগ জ্বালানি খাতের পর্যবেক্ষকদের। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো সাম্প্রতিক বছরগুলো প্রতিবেশী ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে জ্বালানি তেলের মজুদ সক্ষমতা যে হারে বাড়ানো হয়েছে, তা বাংলাদেশে এখনো করা যায়নি। স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে নির্মিত দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি ছাড়া মজুদের জন্য আর কোনো বড় অবকাঠামোও গড়ে ওঠেনি। অন্য যেগুলো রয়েছে সেগুলোর সক্ষমতাও যৎসামান্য।
বিপিসির মজুদকৃত জ্বালানি তেল সংরক্ষণ করা হয় সংশ্লিষ্ট বিপণনকারী সংস্থার প্রধান, মাঝারি ও ছোট ডিপোগুলোয়। এ সক্ষমতার বড় একটি অংশ রয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। বাকি সক্ষমতা রয়েছে বাগেরহাটের মোংলা, নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ডিপোয়। ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিচালনাধীন দেশের বৃহত্তম জ্বালানি তেল মজুদাগারের সক্ষমতা ৫ লাখ ২ হাজার ২৯০ টন। এর বাইরে জ্বালানি তেল বিপণনকারী সংস্থা পদ্মা ও যমুনা অয়েল এবং মেঘনা পেট্রোলিয়ামের আওতাধীন ডিপোগুলোর মোট মজুদ সক্ষমতা প্রায় ৮ লাখ টন। এর মধ্যে পদ্মা অয়েলের চট্টগ্রামের প্রধান ডিপোয় মজুদ সক্ষমতা রয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৭৩ টন। এছাড়া বাগেরহাটের মোংলায় ৩৫ হাজার টন ও নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে ৩০ হাজার ৯৩৪ টন সক্ষমতার মজুদাগার রয়েছে কোম্পানিটির। যমুনা অয়েলের চট্টগ্রামের প্রধান ডিপোয় ৮২ হাজার ২৪০ টন এবং মোংলায় ২৯ হাজার ৬৩০ টন সক্ষমতার মজুদাগার রয়েছে। মেঘনা পেট্রোলিয়ামের চট্টগ্রামের প্রধান ডিপোয় ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৪ টন এবং মোংলায় ২৭ হাজার ৯৭২ টন সক্ষমতার মজুদাগার রয়েছে। এর বাইরে ৩৩ হাজার ৬২৫ টন সক্ষমতার মজুদাগার রয়েছে বিপিসির অধীন স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল লিমিটেডের (এসএওসিএল)। এছাড়া ছোট ছোট আরো কিছু ডিপোয় নানা সক্ষমতার মজুদাগার গড়ে তোলা হয়েছে। সব মিলিয়ে এসব মজুদাগারে সংরক্ষিত জ্বালানি তেল দিয়ে প্রায় দেড় মাসের মতো চাহিদা পূরণ সম্ভব।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমদানিনির্ভর দেশ হিসেবে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের কৌশলগত মজুদ অবকাঠামো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। বিশেষ করে বাজার অস্থিরতা বা সরবরাহ সংকটের মতো পরিস্থিতিতে এ মজুদ সক্ষমতার অভাবটি বেশ ভালোভাবেই প্রকট হয়ে ওঠে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম বলেন, বৈশ্বিক মজুদ সক্ষমতার স্ট্যান্ডার্ড লেভেল ধরতে গেলে অন্তত দুই মাসের জ্বালানি মজুদ রাখা উচিত। আমাদের সেখানে রয়েছে দেড় মাসের। আরো অন্তত ১৫ দিনের মজুদ সক্ষমতার মতো অবকাঠামো দরকার ছিল। যদিও আমরা তা গড়ে তুলতে পারিনি। আমাদের মতো দেশে জ্বালানি পণ্য মজুদে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন। সেটিও একটি সংকট।
ক্রমাগত লোকসানে থাকা বিপিসির জন্য এখন উন্নয়নমুখী প্রকল্প হাতে নেয়াটাই মুশকিল হয়ে উঠেছে। এ মুহূর্তে মূলত জ্বালানি তেলের আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা চালু রাখাকেই কেন্দ্র করে প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সংস্থাটি। তবে এগুলোর গতিও এখন ধীর হয়ে এসেছে বলে জানালেন বিপিসির কর্মকর্তারা। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে তারা জানিয়েছেন, জ্বালানি তেল আমদানিতে অব্যাহত লোকসান, এলসি জটিলতা ও আর্থিক সংকট ব্যাপক জটিলতার কারণ হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে উদ্বৃত্ত মোটা অংকের টাকা সরকারকে দিয়ে দেয়ায় বিপিসির আর্থিক সক্ষমতাও চাপে পড়েছে। ফলে উন্নয়নমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নের চেয়ে দেশের জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখাতেই এখন বেশি মনোযোগ দিচ্ছে বিপিসি। জ্বালানি চাহিদা ও নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে জ্বালানি তেলের মজুদ সক্ষমতা বাড়িয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। দেশটির জ্বালানি তেলের মজুদ সক্ষমতা প্রায় তিন মাসের। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ ভিয়েতনামও জ্বালানি তেলের মজুদাগার গড়ে তুলেছে ৯০ দিনের। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশটিও জ্বালানি নিরাপত্তায় বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে।
বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, জ্বালানি তেল মজুদ ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নে অনেকগুলো প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের অনেকগুলো বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে করা হচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজারদর বাড়তির দিকে থাকায় বিপিসির অব্যাহত লোকসান প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রভাব ফেলবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি সব জটিলতা কাটিয়ে এসব প্রকল্প যাতে দ্রুত চালু করা যায়। প্রকল্পগুলো বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহে ব্যাপক হারে ব্যয় সাশ্রয় করবে। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেলে ভারি হয়ে ওঠে বিপিসির লোকসানের বোঝা। যদিও দাম পড়তির দিকে থাকা অবস্থায় পরিস্থিতির সুযোগ নেয়া সম্ভব হয় না মজুদ সক্ষমতার অভাবে। প্রয়োজনের মুহূর্তে জ্বালানি তেলের এ কৌশলগত মজুদের অভাব বড় ধরনের বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তাদের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের যেটুকু মজুদ সক্ষমতা আছে, সেটি মূলত বিতরণগত বা বিপণনের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা। কৌশলগত মজুদ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তেমন কোনো বিনিয়োগ হয়নি এখানে। এতদিন সেভাবে অনুভূত না হলেও বিষয়টিকে এখন বড় আশঙ্কার কারণ করে তুলেছে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক বর্তমান পরিস্থিতি। যুদ্ধ পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেলে বা আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন আরো বড় আকারে বাধাগ্রস্ত হলে দেশের জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে জ্বালানি সংকট।
আবার বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, জ্বালানি তেলের এখনকার যে মজুদ আছে, তা দিয়ে আরো ৩২ দিন চালানো সম্ভব। এ অবস্থায় বিশ্ববাজারের মূল্য পরিস্থিতির পাশাপাশি আমদানি এলসি জটিলতাও বড় আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। কৌশলগত মজুদ সক্ষমতা গড়ে তোলা গেলে বাংলাদেশ এ পরিস্থিতিও খুব সহজেই মোকাবেলা করতে পারত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে জ্বালানি তেলের মজুদ সক্ষমতা প্রায় ১৩ লাখ টন। এ পরিমাণ জ্বালানি তেল দিয়ে ৪০-৪৫ দিনের মতো চাহিদা মেটানো সম্ভব। এর মধ্যে অর্ধেকই বিপিসির অধীন বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিপণনের উদ্দেশ্যে জমাকৃত। সেখানে কৌশলগতভাবে সংরক্ষণের সুযোগ কম। মজুদ সক্ষমতা কম হওয়ায় প্রতিনিয়ত জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি)। জ্বালানি তেলের কৌশলগত মজুদ সক্ষমতার এ অভাব এখন বেশ ভালোমতোই অনুধাবন করতে পারছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। পণ্যটির দাম ক্রমাগত বেড়ে চলায় নিয়মিত লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠান বিপিসির আর্থিক চাপ বাড়ছে। পরিস্থিতিকে আরো প্রকট করে তুলছে জ্বালানি তেল আমদানিতে ডলারের সংকটসৃষ্ট এলসি জটিলতা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com