রাজধানীর শ্যামলীতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে করা মিছিল থেকে পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার (৬ আগস্ট) দুপুরে ব্যানারবিহীন একটি মিছিল থেকে এ ভাঙচুর চালানো হয়। তবে গাড়িটি কোন থানার তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। দুপুরে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে একটি মিছিল হয়েছে। ওই মিছিল থেকে পুলিশের একটি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে গাড়িটি কোন থানার তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। এ বিষয়ে কাজ চলছে। বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজক কারা করেছিল জানতে চাইলে ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, মিছিলের সামনে কোনো ব্যানার ছিল না। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ করেছেন। যে গাড়িটি ভাঙচুরের কথা শোনা যাচ্ছে সেটি আমাদের থানার গাড়ি না। গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্যামলী থেকে শতাধিক মানুষের একটি বিক্ষোভ মিছিল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিল। পথে শ্যামলী শিশু মেলার সামনে রাখা পুলিশের একটি টহল ভ্যানে ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। গাড়ির সামনের গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়। এর আগে শুক্রবার (৫ আগস্ট) দিনগত রাত থেকেই কার্যকর হয়েছে সরকার ঘোষিত ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন, ও অকটেনের নতুন দাম। দাম বেড়েছে প্রতি লিটার ডিজেলে ৩৪, কেরোসিনে ৩৪, অকটেনে ৪৬, পেট্রলে ৪৪ টাকা। দাম বাড়ার পর প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও প্রতি লিটার পেট্রল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও পেট্রল ৮৬ টাকা।
জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তায় উবার-পাঠাও চালকরা: তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল চালকরা। শনিবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর বেশ কয়েক জন পাঠাও-উবার চালকদের সঙ্গে কথা বললে তেলের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড থেকে আগারগাঁও যাবেন সুজন মিয়া। দাঁড়িয়ে থাকা এক মোটরসাইকেল চালককে কত নিবেন জানতে চাইলে ১৮০ টাকা চান তিনি। পরে দেড়শো টাকা বললেও রাজি হোন না রাইড শেয়ারিং করা ওই মোটরসাইকেল চালক।
মো. সোহাগ নামে ওই চালক জাগো নিউজকে বলেন, আগের ভাড়াই ছিলো দেড়শো টাকা। আজকে ৪০ টাকা বেশি দিয়ে তেল কিনছি। ত্রিশ টাকা বেশি চাইছি। অথচ উনি আগের ভাড়াই বলছেন। এজন্য যাইনি। সকালে ২০০ টাকার তেল নিছি। একজনও যাত্রী পাইনাই। একটু বেশি চাই বলে অনেকেই রাগারাগি করে চলে যাচ্ছেন। আমার কি করার আছে। মহাখালীর আমতলী মোড়ে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু মোটরসাইকেল। এমন সময় এক নারী হঠাৎ রেগে উঠেন। ওই নারী বলেন, আগে ৮০ টাকা দিয়ে যাইতাম। পরে রাগারাগির কারণ জানতে চাইলে মো. হাসান নামে এক পাঠাও চালক বলেন, মহাখালী থেকে উনি কারওয়ান বাজার ৮০ টাকা বলছে। আমি ১২০ টাকাও বলছি, তাও যাবে না। তেলের দাম বাড়াতে ক্ষোভ জানিয়ে হাসান বলেন, কিছু করার নাই। আমরা ভাড়া বেশি চাই বলে মানুষ রাগ করে। আবার কম নিলেও ইনকাম হয় না। কি আর করার, ইনকামও অর্ধেক হবে। আরও এক রাইড শেয়ারিং চালক বলেন, অনেকেই এসে বলে অ্যাপসে যাবে। কিন্তু তেলের দাম বাড়ছে, অ্যাপ তো আপডেট করেনাই। এজন্য বিপদও হইছে। দরদাম করলেও যেতে রাজি হন না অনেকেই।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত থেকেই কার্যকর হয়েছে সরকার ঘোষিত ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন, ও অকটেনের নতুন দাম। দাম বেড়েছে প্রতি লিটার ডিজেলে ৩৪, কেরোসিনে ৩৪, অকটেনে ৪৬, পেট্রলে ৪৪ টাকা। দাম বাড়ার পর প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও প্রতি লিটার পেট্রল ১৩০ টাকায় কিনতে হবে। আগে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য ছিল প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও পেট্রল ৮৬ টাকা।
দূরপাল্লার নন-এসি বাসে ১৫০, এসিতে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা বেশি: দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দূরপাল্লার গণপরিবহনের ভাড়াও। শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকেই প্রায় সব গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। রাজধানীর গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস কাউন্টার ঘুরে যাত্রীদের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। বাস কাউন্টারগুলোতে দেখা যায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অনুমতি ছাড়াই প্রতিটি বাসে আসনপ্রতি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা। গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, তেলের দাম বাড়ানোয় দূরপাল্লার মামুন পরিবহন, আল-মোবারকা পরিবহন, শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসসহ কয়েকটি পরিবহনের বাস চলছে না। তারা জানান, তেলের দাম বাড়ায় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ বিকেলে বিআরটিএর সঙ্গে পরিবহন মালিকদের বৈঠকের পর বাস চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কল্যাণপুর এসবি সুপার ডিলাক্সের ম্যানেজার মো. তোয়েব বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আমাদের বাসে ৩০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এতে করে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৫০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। ৮০০ টাকার এসি বাসের ভাড়া বাড়িয়ে এক হাজার ৪০ টাকা করা হয়েছে।
ঢাকা থেকে ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, দর্শনা ও মেহেরপুরের দূরপাল্লার পরিবহন রয়েল এক্সপ্রেসের গাবতলী কাউন্টারের ম্যানেজার মো. রমজান আলী বলেন, ঢাকা থেকে আমাদের গাড়িতে প্রতি সিটে নন-এসি বাসে ভাড়া বেড়েছে ১৫০ টাকা ও এসিতে ২০০ টাকা। সায়েদাবাদে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার প্রতিনিধি মো. রনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটে ভাড়া ছিল ৫৭০ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ৯০০ টাকার ভাড়া বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা করা নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা-বরিশাল রুটের ভাড়া ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হয়েছে। এভাবে দেশের প্রতিটি রুটের বাস ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। হানিফ পরিবহনের কাউন্টার প্রতিনিধি ফয়সাল জানান, প্রতিটি বাসে ১০০ টাকা থেকে দেড়শ টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
তবে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসগুলোতে আগের ভাড়াই রাখছে মালিকপক্ষ। গ্রিনলাইন বাসের কল সেন্টারের কলটেকার শামীমা আক্তার বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো ঘোষণা আসেনি। তাই আগের ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে বাস ভাড়া সমন্বয় করার দাবি জানিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। এ নিয়ে শনিবার বিকেল ৫টায় বিআরটিএর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তারা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, গতকাল (শুক্রবার) রাত ১২টা থেকে দেশে জ্বালানি তেলের দাম গড়ে ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। এতে বাস পরিচালনার ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই বাস ভাড়া সমন্বয় করা জরুরি। এর আগে শুক্রবার (৫ আগস্ট) দিবাগত রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনে দাম বেড়েছে ৩৪ টাকা, অকটেনে ৪৬ এবং পেট্রলে বেড়েছে ৪৪ টাকা। দাম বাড়ার পর প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ ও পেট্রল ১৩০ টাকায় কিনতে হবে। দাম বাড়ার আগে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০, অকটেন ৮৯ ও পেট্রল ৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।