আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় লোকসান বেড়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে শিডিউল করে লোডশেডিং করছে সরকার। এরই মধ্যে দেশে তেল সংকট নিয়ে নানা গুঞ্জনও চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে তেল মজুত আছে এমন কথা বারবার বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। কয়েকদিন আগে পাম্পে নির্দিষ্ট পরিমাণে তেল দেওয়া হবে এমন নোটিশে সারাদেশে তেল সংকটের গুঞ্জন তৈরি হয়। অন্যদিকে দাম বাড়ার নতুন ঘোষণায় তেল মজুতের প্রশ্ন আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ বিষয়ে পাম্প মালিকরা বলছেন, তারা তেল পাচ্ছেন। এ মুহূর্তে তেলের চাহিদা ও সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তবে চাহিদা অনুযায়ী তেল না পেলেও ‘পাচ্ছি’ বলতে হচ্ছে— এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে একাধিক বক্তব্যে।
গতকাল শনিবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার আল-মক্কা পাম্পের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার সজিব জাগো নিউজকে বলেন, এ মুহূর্তে তেলের কোনো সংকট নেই। তারা স্বাভাবিকভাবেই তেল পাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের কাছে যতটুকু চাচ্ছেন ততটুকুই পাচ্ছেন। কোনো ঘাটতি থাকছে না বলেও জানান তিনি। তবে চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছেন না বলে জানান মালিবাগ অটো সার্ভিস পাম্পের ম্যানেজার মো. নুরুল ইসলাম। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, তেল আসছে ঠিকই, তবে একটু কম। আগে আমাদের প্রতিদিন এক লরির বেশি লাগতো। কিন্তু এখন এক লরির বেশি পাই না। সরকার বলছে, যে তেল আছে, কিন্তু আমাদের কাছে এক লরির বেশি চাহিদা থাকলেও পাচ্ছি না। তিনি বলেন, এখন একটু চাহিদা বেশি। অনেকেই বেশি করে নিচ্ছেন। অনেকে মনে করছেন তেল পাওয়া যাবে না। চাহিদা বেশি, কিন্তু পরিমাণ আগের মতোই পাচ্ছি। আগে দুই লরি আসতো। এখন এক লরি আসে। মালিবাগ অটো সার্ভিসের মালিক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘তেল যা চাচ্ছি, তাই পাচ্ছি। কিন্তু বিক্রি বেড়েছে। তাই পাম্পগুলোতে কিছুটা সংকট মনে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তেলের সংকট নেই।’
তাহলে যা চাচ্ছেন তাই পাচ্ছেন কীভাবে— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন তেলের চাহিদা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার আমাকে তিনদিনের তেল নিতে হয়। ধরুন, তিনদিনের তেল আমি নিলাম। স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় প্রতিদিন যদি আমার এক হাজার লিটার তেল বেশি বিক্রি হয়, তাহলে তো পাম্পে কিছুটা সংকট দেখা যাবে। একেক দিন একেক রকম চাহিদা। মালিবাগ ফ্লাইওভার থেকে বাড্ডা পর্যন্ত ডিজেলের আর কোনো পাম্প নেই। এতটুকু রাস্তায় একটি মাত্র পাম্প থাকায় আমার এখানে চাহিদাও বেশি। আমি তো তেল ধরে রাখতে পারছি না। আমার তেল আসছে আর দিয়ে দিচ্ছি। আগে যে পরিমাণ তেল চেয়েছি তাই পেয়েছি। কিন্তু এখন নির্ধারিত পরিমাণের বাইরে তেল পাই না। তিনি বলেন, ট্রাস্টের এক পাম্পে ‘তেল নেই’ কাগজ টাঙিয়েছিল। এজন্য সেখানে সবাই হুমড়ি খেয়ে তেল নিতে আসে। এজন্য ওই পাম্পের লোকজন ডেকে শোকজ করা হয়েছে।
আপনি কাগজ টাঙিয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তেল না থাকায় আমি একদিন টাঙিয়েছিলাম। তখন ডিবি এসে আমাকে না লিখতে বলেছেন। ভাইরাল হয়ে যায়। এজন্য আর লিখি না।’ নীলক্ষেত এলাকায় কাজী গোলাম সামদানী পাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের এসএসও ওয়েল কোম্পানি থেকে স্বর্ণপদক পেয়েছেন এ পাম্প মালিক। শুক্রবার (৫ আগস্ট) পাম্পে গেলে তেল সংকট নেই বলে জানান ম্যানেজার মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এখন তেলের কোনো সংকট নেই। আমরা যা চাচ্ছি, তাই পাচ্ছি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গতকাল শনিবার (৬ আগস্ট) রমনা পাম্পের মালিক ও পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাজেদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে তেলের কোনো সংকট নেই। সরকার দাম বাড়িয়েছে, সেটা সরকার জানে। সরকারের ভর্তুকি যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে এসব মিলিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু আমরা ঠিকই পাচ্ছি। যখন লোডশেডিং শুরু হয়েছিল, তখন হঠাৎ করে তেলের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। মানুষ জেনরেটরের জন্য তেল নিতো, অনেকেই অতিরিক্ত তেল নিতো। এজন্য একটা ধাক্কা লাগে। এখন সে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে বলে মন্তব্য তার। শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত থেকেই কার্যকর হয়েছে সরকার ঘোষিত ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন ও অকটেনের নতুন দাম। দাম বেড়েছে প্রতি লিটার ডিজেলে ৩৪, কেরোসিনে ৩৪, অকটেনে ৪৬ ও পেট্রলে ৪৪ টাকা। দাম বাড়ার পর প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও প্রতি লিটার পেট্রল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও পেট্রল ৮৬ টাকা।