মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
দৃষ্টিনন্দন নতুন সড়কে বদলে যাবে ফরিদগঞ্জ চান্দ্রা-সেকদি-টুবগি এলাকার সূর্যগিরি আশ্রম শাখার উদ্যোগে দক্ষ জনশক্তি গঠনের আলোকে সেলাই প্রশিক্ষণ উদ্বোধন নগরকান্দা ও সালথায় দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আজ রাউজানে সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবহিতকরণ সভা রাঙ্গামাটিতে ইউপিডিএফ’র ডাকা আধাবেলা অবরোধ পালিত শেরপুরে কলেজ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক সমাবেশ ও আলোচনা সভা সোনাগাজীতে স্কুল ভবন নির্মাণে বাধার অভিযোগে মানববন্ধন চট্টগ্রামে চুয়েটের সাথে তিনটি সংস্থার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কমিশন ভাবছে না: ইসি আলমগীর বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে কঠোরভাবে বাজার তদারকির নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

আজ পবিত্র আশুরা

মুফতী শামসুল আবরার তামীমি:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২

আজ ৯ আগস্ট মঙ্গলবার সারা পবিত্র আশুরা। আশুরা আরবী শব্দ। আশারাতুন থেকে নির্গত হয়েছে যার অর্থ দশ। আশুরা অর্থ দশ বা দশম। আক্ষরিক অর্থে যেকোন মাসের দশ তারিখকেই আশুরা বলা যায়। কিন্তু ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় কেবলমাত্র মুহাররম মাসের দশ তারিখকেই আশুরা বলা হয়। এ দিনটি ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতময় দিন। কারণ ১. এ দিনে হযরত আদম আ. এর তাওবা আল্লাহ তা’আলা কবুল করেছেন। ২. এ দিনে হযরত নূহ আ. ও তাঁর উম্মতকে আল্লাহ তাআলা মহাপ্লাবন হতে মুক্তি দান করেছেন। ৩. এ দিনে হযরত ইব্রাহীম আ. কে নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে মুক্তি দান করা হয়। ৪. হযরত আইয়ুব আ. কে আরোগ্য দান করা হয়। ৫. হযরত ইউনূস আ. কে মাছের পেট থেকে মুক্তি দান করা হয়। ৬. হযরত ইউসূফ আ. এর সাথে ইয়াকুব আ. এর সাক্ষাত হয়। ৭. হযরত সুলাইমান আ. তাঁর হারানো রাজত্ব ফিরে পেয়েছেন। ৮. হযরত মূসা আ. ও তাঁর উম্মত ফেরাউন নির্যাতন থেকে মুক্তি লাভ করেন। ৯. হযরত ঈসা আ. কে জীবিত অবস্থায় আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়। ১০. আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পূর্বের ও পরের সকল গুণাহ মাফির সুসংবাদ দেয়া হয়। ১১. এ দিনে আল্লাহ তাআলা আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। ১২. এ দিনে আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম আসমান হতে যমীনে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। ১৩. কেয়ামত বা মহাপ্রলয় হবে এ দিনে। ১৪. হযরত হোসাইন রা. কারবালার ময়দানে মর্মান্তিক শাহাদাত বরণ করেছেন ১০ই মুহররম আশুরার দিনে। [সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর]
আশুরার দিনের ফযীলত সম্পর্কে সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে: হযরত আবু কাতাদা রা. নবী কারীম সা. হতে বর্ণনা করেছেন আশুরার রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহ তাআলার নিকট আশা রাখি যে, তিনি পূর্বের বছরের গুণাহ ক্ষমা করবেন। ইমাম তাবারানী আল মু’জামুল কাবীর নামক গ্রন্থে হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি আশুরার দিনে রোযা রাখবে তার এক বছরের গুণাহ ক্ষমা করা হবে। এ দুটি হাদীস থেকে আশুরার দিনের ফযীলত স্পষ্ট হয়ে উঠে।
হাদীসের ভাষ্যানুসারে বুঝা যায় যে, আশুরার রোযা ইসলামের প্রথম যুগে ফরজ ছিল। সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রুবাঈ বিনতে মুআওয়্যিজ রা. বর্ণনা করেন নবী কারীম সা. আশুরার দিন সকালে মদীনার আশপাশে আনসারদের জনপদে লোকমারফত সংবাদ পাঠালেন যে, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আজ রোযা রেখেছে সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে আর যে ব্যক্তি রোযা রাখেনি সে যেন দিনের অবশিষ্টাংশ রোযাদারের ন্যায় থাকে। এ হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, নবী করীম সা. এর এ ফরমান দ্বারা আশুরার রোযা ফরজ করা হয়েছিল। কিন্তু ২য় হিজরীতে যখন রমযানের রোযা ফরজ করা হয় তখন আশুরার রোযার ফরযিয়্যাত রহিত হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন ‘যখন রমযানের রোযা ফরজ করা হল তখন নবী করীম সা. ঘোষণা দিলেন যে, তোমাদের যার ইচ্ছা হয় সে আশুরার রোযা রাখবে আর যার মনে চায় সে এ রোযা ছাড়তে পারে।’
মুসলিম শরীফের অন্য হাদীসে ইবনে আব্বাস রা. এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন নবী কারীম সা. আশুরার দিনে রোযা রাখা শুরু করলেন এবং উম্মতকে রাখতে আদেশ কররেন তখন সাহাবায়ে কেরাম রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটি এমন দিন যাকে ইহুদী ও নাসারাগণ সম্মান প্রদর্শন করে। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, ইনশাআল্লাহ আমি যদি আগামী বছর এ রোযা পাই তাহলে নবম তারিখের রোযাও রাখব। অতএব, আশুরার রোযা রাখতে হবে দুটি। নয় ও দশ তারিখ কিংবা দশ ও এগার তারিখ।
আশুরার দিন দেখা যায় যে, শিয়া সম্প্রদায় কর্তৃক তাজিয়া মিছিল বের করা হয় এবং ‘হায় হাসান’ ‘হায় হোসাইন’ বলে মাতম করা হয়। এ ধরনের তাজিয় মিছিল বা শোক মিছিল করা বা দেখা এবং মাতম করা সম্পূর্ণ না জায়েয। ইসলামী শরীয়তের এসবের কোন ভিত্তি নেই। এসব থেকে বেঁচে থাকা মুসলমানদের জন্য আবশ্যক। ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, শিয়া সম্প্রদায় কর্তৃক তাজিয়া মিছিল ও শোক মাতম তাদের মূর্খতা ও ভ্রষ্টতা বৈ কিছুই নয়। ‘হযরত আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত নবী করীম সা. ইরশাদ করেছেন, সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয় যে (মৃতের জন্য) চপাটাঘাত করে, জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলে ও জাহেলী যুগের ন্যায় বিলাপ করে।’ অপর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে নবী করীম সা. ইরশাদ করেছেন, মানুষের মধ্যে দুটি স্বভাব আছে যা কুফুর রূপে গণ্য। এক. বংশের প্রতি কুইঙ্গিত। দুই. মৃতের জন্য বিলাপ করা। উল্লেখিত হাদীসসমূহ মূলকথা এই দাঁড়ায় যে, মাতম করা বা তাজিয়া মিছিল করা জাহেলী যুগের কু-প্রথা যা থেকে বেঁচে থাকা মুসলমানদের জন্য একান্ত প্রয়োজন।
আশুরা আমাদের কী বার্তা দিয়ে যায়? আশুরার দিনে মহানবীর সা. এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র আত্মত্যাগের উজ্জ্বল নিদর্শন হযরত হোসাইন রা. এর মর্মান্তিক শাহাদাত এবং ইসলামের জন্য তাঁর পরিবারবর্গের বিসর্জন আমাদেরকে এ বার্তাই দিয়ে যায় যে, এই দিনে আমাদেরকে শুধু শোকে কাতর হলে চলবে না বরং ন্যায়ের পথে অবিচলতার দীপ্ত শপথ নিতে হবে। অসত্য-অন্যায়ের কাছে মাথা নত নয় বরং আমাদের হতে হবে আত্মত্যাগের বলে বলিয়ান, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং হকের পথে পাহাড়ের ন্যায় অটল-অবিচল। হযরত হোসাইন রা. যেমনিভাবে অযোগ্য, অত্যাচারী ও জালিম শাসক এজিদের কুশাসন, অনাচার ও দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কুফা অভিমুখে রওয়ানা হন এবং কারবালার প্রান্তরে এজিদ বাহিনীর মুখোমুখি হয়ে সত্যের জয়গান গেয়ে হাসিমুখে অকাতরে জীবন দিয়েছেন তবুও এজিদের কুশাসন মেনে নেননি তদ্রুপ আমাদের উচিত দুঃশাসন, দুর্বৃত্তায়ন, স্বৈরাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, সন্ত্রাস, জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। প্রয়োজনে আত্মবিসর্জন দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। মর্সিয়া ক্রন্দন কিংবা শোক মাতম-মিছিল করে মুহাররমের তাৎপর্য বাস্তবায়িত হবে না। বরং মুহাররমের শিক্ষা হল অন্যায়ের বিরুদ্ধে আদর্শের সংগ্রামের শিক্ষা এবং জালিমের বিপক্ষে মাজলুমের লড়াইয়ের শিক্ষা। আশুরার দিন কারবালার সেই চেতনায় অনুপ্রাণিত না হয়ে শুধু শোক মাতম আর আহাজারিতে কোন ফল হবে না। লেখক: মুহাদ্দেস জামিয়া আরাবিয়া, খিলক্ষেত, ঢাকা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com