শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৪ অপরাহ্ন

চিকিৎসক স্ত্রীকে হত্যার জন্য ব্যাগে অস্ত্র বহন করছিলেন রেজাউল: র‌্যাব

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০২২

রাজধানীর পান্থপথের আবাসিক হোটেল থেকে নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈমের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার রেজাউল করিম ওরফে রেজা ওই চিকিৎসকের স্বামী। তাদের বিয়ের ব্যাপারটি পরিবারের লোকজন জানতেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের ২০১৯ সালে পরিচয় এবং প্রেম। পরিবারের অমতে ২০২০ সালের অক্টোবরে বিয়ে করেন তারা। তবে রেজাউলের একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরে তৈরি হয় সন্দেহ, শুরু হয় মনোমালিন্য ও বাগ্বিত-া। এরই জেরে নারী চিকিৎসক স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তার ঘাতক স্বামী।
গতকাল শুক্রবার (১২ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, কলাবাগানের হোটেলে ওঠা নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক ও রেজাউল উভয়ই স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। তাদের গোপনে বিয়ে করার বিষয়টি কেউ জানতেন না। এর আগে, বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় অভিযুক্ত রেজাউল করিম ওরফে রেজাকে চট্টগ্রামের মুরাদপুরের একটি ছাত্রাবাস থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামক আবাসিক হোটেল থেকে নারী চিকিৎসকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও জখমের চিহ্ন ছিল। হত্যাকা-ের ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর ১০। র‌্যাব হত্যাকা-ে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব- ২ এবং র‌্যাব-৭ এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকা থেকে আসামি রেজাউল করিম রেজাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকালে উদ্ধার করা হয় হত্যাকা-ের সময় রেজার পরা রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল ও ব্যবহৃত ব্যাগ এবং ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার রেজা হত্যায় নিজের সংশ্লিষ্টতার দায় স্বীকার করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক ও রেজাউলের পরিচয়, এরপর প্রেম। পরে পরিবারকে না জানিয়ে ২০২০ সালের অক্টোবরে বিয়ে করেন তারা। তবে রেজাউলের একাধিক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এর জেরে মনোমালিন্য ও বাগবিত-া হয়। বৈবাহিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে স্বামী রেজাকে কাউন্সেলিং ও আলাপচারিতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন জান্নাতুল নাঈম। বিভিন্ন সময় বাগবিত-ার মধ্যে স্ত্রীকে প্রতিবন্ধক ভাবতে শুরু করেন রেজাউল। এ কারণে স্ত্রীকে পথের কাঁটা ভেবে সরিয়ে দিতে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। চিকিৎসক স্ত্রী জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকাকে (২৭) হত্যার জন্য বেশ কয়েকদিন ধরেই ব্যাগে ধারালো অস্ত্র বহন করছিলেন রেজাউল। ১২ আগস্ট ঘটা করে জান্নাতুল নাঈমের জন্মদিন পালনের কথা বলে ১০ আগস্ট তাকে পান্থপথের ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্ট নামের একটি আবাসিক হোটেল নিয়ে যান। সেখানে কথা কাটাকাটি, বাগবিত-া ও ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ছুরি দিয়ে ছুরিকাঘাত ও গলাকেটে হত্যা করেন রেজাউল। এরপর গোসল করে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে চট্টগ্রাম চলে যান তিনি।
উল্লেখ্য, রেজাউল ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন। এমবিএ চলাকালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালের জুন মাসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগদান করেন।
নিহত নারীর সঙ্গে পরিচয় প্রেম ও হত্যা সম্পর্কে আসামি রেজা র‌্যাবকে জানান, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকার সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর প্রেমের সম্পর্ক। ২০২০ সালের অক্টোবরে বিয়ে করেন তারা। পরিবারের অগোচরে বিয়ে হওয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানান, হত্যাক-ের পর হোটেল থেকে বের হয়ে প্রথমে তিনি মালিবাগে তার বাসায় যান। বাসা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে একটি হাসপাতালে গিয়ে তার নিজের হাতের ক্ষত স্থান সেলাই করান এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। পরে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে চট্টগ্রামে গিয়ে মুরাদপুরে আত্মগোপন করেন। তিনি কীভাবে এ থেকে বাঁচতে পারেন তা নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগও করেন। এর মধ্যেই র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হন তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com