শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন

পাবনায় পদ্মা নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

মোবারক বিশ্বাস পাবনা :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২

পাবনার সুজানগর উপজেলার পদ্মা নদীতে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে নদীপাড়ে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। মানববন্ধনে কয়েক এলাকার শতাধিক নারী ও পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগী পরিবারের ব্যানারে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের বড়খাঁপুর পদ্মা নদীর পাড়ে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে এলাকাবাসী বলেন- পাবনার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) রফিকুল ইসলামের আমলে রাজবাড়ী জেলার দিপক কুন্ডু নাজিরগঞ্জের দপেরবাড়ি ও সাগরকান্দির খলিলপুরের পদ্মা নদীর পয়েন্ট মোটা বালুর অবৈধ উত্তোলন শুরু করেন। যা এখনও অব্যাহত আছে। তারা আরও অভিযোগ করেন, দিপক কুন্ডু সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহিনের ছত্রছায়ায় অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। যার ফলে এলাকার শত শত বিঘা আবাদি জমি ও বসতবাড়ি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অবিলম্বে এই অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে শত শত কৃষকের জমি ও বসতবাড়ি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন। এজন্য প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশীতে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ও দেশের সর্ববৃহৎ রেলসেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে বিভিন্ন জায়গায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ৩০ বছরের মধ্যে সেখানে এমন ভাঙন আর দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। তারা জানান, তীব্র এই ভাঙনের ফলে ঝুঁকির মুখে রয়েছে লালন শাহ সড়ক সেতু, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও নদী রক্ষা বাঁধসহ আশপাশের কয়েকশ একর ফসলি জমি। এরই মধ্যে প্রায় ৪০ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীনও হয়ে গেছে। এদিকে শুধু পানি বাড়ার জন্য নয়, দুই সেতুর আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে মনে করছে এলাকাবাসী। তারা জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, লালন শাহ সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে বড় বড় ড্রেজার ভিড়িয়ে বালু উত্তোলনের পর নৌযানে সেই বালু লোড-আনলোড করা হয়। পানির ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করে বালু উত্তোলন আর লোড-আনলোড করার কারণেও ভাঙন বাড়ছে। তবে বিষয়টি জেনেও বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ (পাউবো) সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। গতকাল শনিবার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির নিচে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে ব্রিজের তিন নম্বর পিলার (গার্ডার) থেকে দুই নম্বর পিলার পর্যন্ত নদীর চর ভেঙে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদী রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়তে পারে। সেই সঙ্গে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি কলাবাগানসহ প্রায় ৪০ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীপাড়ের বাসিন্দারা ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন। ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা। তবে নদীপাড়ের বাসিন্দারা যখন ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন, তখন দুই সেতুর আশপাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ড্রেজারসহ বিভিন্ন ভারী যন্ত্রপাতি ও নৌযান ব্যবহার করে আগের মতোই বালু উত্তোলন চলছে। এ ছাড়াও দুই সেতু রক্ষা বাঁধ কেটে বালু ব্যবসার জন্য সুপ্রশস্ত রাস্তা তৈরি করেছে বালু ‘দস্যু’রা। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ বাঁধটি। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচের ক্ষুদ্র দোকানিরা জানান, চলতি বছরের শুরুতে সেতুটির চার নম্বর পিলারের কাছে চর ছিল। ভাঙতে ভাঙতে চরটি দুই নম্বর পিলারের কাছে চলে এসেছে। দূরদূরান্ত থেকে পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুরা ব্রিজের নিচের চরে ঘোরাফেরা করতে আসেন। অস্থায়ী দোকানপাটে তারা কেনাকাটা ও খাওয়াদাওয়া করেন। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে সেখানে আর মানুষজন ঘুরতে যাবে না। ফলে তাদের ব্যবসাও টিকবে না। অতিরিক্ত ভাঙনের জন্য অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন ও সেতুর কাছে বালু ব্যবসাকে দায়ী করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার একাধিক দোকানি। পদ্মায় প্রতিদিনই গড়ে ২৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন পাউবোর উত্তরাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ১৫ দিনের ব্যবধানে পদ্মায় পানি বেড়েছে দুই মিটারের বেশি। গত ২৫ জুলাই পানির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। আর ১০ আগস্ট দুপুর ১২টায় পানির পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটার। প্রতিদিনই পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পদ্মার চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে প্রতিবছর ইজারা দেয়া হয় । এ ঘাটের মাধ্যমে মালামাল লোডিং আনলোডিং সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। আমাদের ঈশ্বরদীতে কোন বৈধ বালুমোহল নেই, এটি পাশ্ববর্তী উপজেলা থেকে নদী পথ দিয়ে এনে লোর্ডি আনলোডিং করে বিক্রি করে থাকে। নদীভাঙনের বিষয়ে জানতে চাইলে পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী (সেতু) নাজিব কাওছার বলেন, পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার আমার কথা হয়েছে। নদীভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com