দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করার পর চা শ্রমিকদের চলমান অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। ধর্মঘটের অষ্টম দিনে গতকাল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে শ্রম অধিদপ্তর। বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী, মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য, উপাধ্যক্ষ আলহাজ্ব ড. মো. আবদুস শহীদ এমপিসহ মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি এবং চা-শ্রমিকদের পক্ষে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। নিপেন পাল বলেন, চা-শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসে সরকারের এই প্রস্তাব চা শ্রমিকেরা মেনে নিয়েছেন। এর আগে দাবি দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে অষ্টম দিনের মতো অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট করছিলেন দেশের ২৩১টি চা-বাগানের শ্রমিকেরা। তাঁরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করছিলেন। গত ১৩ আগস্ট থেকে শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে সিলেট ও চট্টগ্রমের ১৬৭টি চা বাগান থেকে দৈনিক প্রায়য় ২০ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের চা পাতা নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি বাগান মালিকদের। গত ১৬ আগস্ট শ্রীঙ্গল থানায় চারটি চা বাগানের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। জিডিতে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে কাঁচা পাতা নষ্ট হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। এতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট চা বাগানে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৩৫ কেজি, ডিনস্টন চা বাগানে ৯৯ হাজার ২৫০ কেজি, বালিশিরা চা কারখানায় ৫০ হাজার ২০৭ কেজি, আমরাইল চা কারখানায় ৫ হাজার ৬৮৩ কেজি কাঁচা চা-পাতা নষ্ট হয়েছে এবং এতে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়। মৌলভীবাজার জেলার ৯৪টি চা বাগান থেকে প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ২৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়ে থাকে। বাংলাদেশ চা-বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, ২০২২ সালে দেশের ১৬৭টি চা-বাগানে ৯ কোটি ৭০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা শিবলী জনান, শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে তাদের সব বাগানে চা পাতা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান।