শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ পূর্বাহ্ন

উন্মুক্ত সুন্দরবনে পর্যটকদের সচেতনতা কাম্য

রিয়াদ হোসেন
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

এ বছর ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে দেশের পিছিয়ে পড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর নিরবচ্ছিন্ন যাতায়ত। এই ভোগান্তিবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে লাগতে শুরু করেছে ঝিরঝিরে সুবাতাস। বিশেষ করে এর মধ্যে দিয়ে এ অঞ্চলের বেশ কিছু পর্যটনশিল্পের প্রসার ঘটতে শুরু করেছে। এতে নতুন এক দিগন্তের স্বপ্ন দেখছে দেশের পর্যটনশিল্প। তিন মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সুন্দরবন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশ-বিদেশি দর্শনার্থী, বনজীবী, জেলেসহ সব মানুষ সুন্দরবন যেতে পারবেন। এর মধ্যে দিয়ে আবারও লোকে-লোকারণ্য হবে সুন্দরবন। এতে নদীসহ সুন্দরবনে বাড়বে দূষণের মাত্রা। এজন্য সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষা করতে আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেষ্ট হতে হবে।
আমরা দেখেছি বিগত বছরগুলোয় এদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আয়লা, সিডর, আম্ফান, ইয়াশের ক্ষতবিক্ষত জায়গাগুলোয় দাঁড়িয়ে কিছুটা অনুধাবন করা যায় সুন্দরবন ছাড়া আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ কতটা ভয়ানক হবে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এতবড় উদার মন নিয়ে সুন্দরবন যে আমাদের পাশে থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করছে; কিন্তু তার প্রতি আমাদের সামান্যতম হলেও দায়িত্ববোধ নেই, নেই কোনো কৃতজ্ঞতাবোধ। জলবায়ু পরিবর্তন, ক্ষতিকর কর্মকা-, বন উজাড়, আমাদের অসচেতনতা, লোভী মানসিকতা ও বনবিভাগের দুর্নীতির কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপকূলীয় বনাঞ্চল আমাদের সুন্দরবন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্দরবন থেকে বছরে ১৩৫ কোটি টাকার কাঠ পাচার হয়। কিছু ব্যবসায়ী, অসাধু বন কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে নির্দ্বিধায় সুন্দরবনে অবৈধভাবে গাছ কাটা হয়ে থাকে। যার ফলে প্রতি বছরই একটু একটু করে কমে যাচ্ছে সুন্দরবনের গাছের পরিমাণ। এতে হুমকির মুখে পড়ছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। আগামী মাস থেকে সুন্দরবন ভ্রমণ ও মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা ওঠে যাওয়ার পর সুন্দরবনের করমজল, কটকা, কচিখালী, হরবাড়িয়া, হিরণ পয়েন্ট, দুবলা ও নীলকমলসহ সমুদ্র তীরবর্তী এবং বনাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে লঞ্চ, ট্যুরবোট, ট্রলার ও বিভিন্ন নৌযানে চড়ে যেতে পারবেন দর্শনার্থীরা। নতুন করে পর্যটকদের জন্য তৈরি হচ্ছে আরো বেশ কিছু সুবিধা। ভ্রমণপিপাসুদের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখেও নেওয়া হচ্ছে নতুন পরিকল্পনা। একই সঙ্গে সুন্দরবনের বনজ সম্পদ আহরণের জন্য পাস পারমিট নিয়ে ঐ দিন থেকে বনে প্রবেশ করতে পারবেন বনজীবীরাও। অনেক সময় এসব বনজীবীদের নিরাপত্তার বিষয়ে নানা সংকটের কথা ওঠে আসে! সেদিকেও সরকারকে আরো আন্তরিক হতে হবে। কারণ এ সমস্ত মৎস্যজীবী, মৌয়ালরাও আমাদের রাজস্বে অবদান রাখছে। বিভিন্ন প্রয়োজন মিটাচ্ছে। এজন্য সবমিলে আমাদেরকে আরো বেশি সচেতন ও আন্তরিক হতে হবে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে। মনে রাখতে হবে, সুন্দরবন শুধু আমাদের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয় না বরং এটি সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করে আসছে। শুধু সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এই অপূর্ব উপহারের জন্যই এখন পর্যন্ত উপকূলীয় শত ভাগ মানুষ উদ্বাস্তু হয়নি। তা নাহলে এতদিন উপকূলীয় সব জমিজমা সহায়-সম্পদ ছেড়ে এসব মানুষের পাড়ি দিতে হতো অন্যত্র। এজন্য সুন্দরবনকে বাঁচাতে, বন্যপ্রাণী পাচার রোধে সর্বোপরি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে পর্যটক, মৎস্যজীবী, মৌয়ালসহ সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। সুন্দরবনের ভেতরে বয়ে যাওয়া খাল, নদনদীতে প্লাস্টিক, পলিথিন ফেলে পানি দূষণের বিষয়ে আরো খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি ভ্রমণকারীদের ব্যবহৃত অপচনশীল সব আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলাসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আরো আন্তরিক হতে হবে। লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com