সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১০:০৬ অপরাহ্ন

আশুলিয়ায় বসতবাড়িতে অবৈধ সিসা কারখানা : বন্ধের দাবী এলাকাবাসির

আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ঢাকার আশুলিয়ার কলতাসূতি নয়াবাড়ী এলাকায় একটি বসতবাড়িতে জমি ভাড়া নিয়ে অবৈধ সিসা কারখানা গড়ে তুলেছেন রুবেল নামের এক ব্যাক্তি। যার ফলে সিসা গলানোর নির্গত ধোয়া ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এরই মধ্যে আশপাশের অনেক ফলজ গাছ মরে শুকিয়ে গেছে। স্থানীয়দের বেশ কয়েকটি গরু মরে গেছে। এসব রাসায়নিকের কারণে ওই এলাকায় বসবাসকারী মানুষ রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। এলাকাবাসি, গবাদিপশু এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য অবৈধ এ সিসা কারখানা বন্ধের দাবী জানান স্থানীয়রা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউপির কলতাসুতি নয়াবাড়ী এলাকার স্বপনের বসত বাড়ির ভেতরে জমি ভাড়া নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের রুবেল নামের এক ব্যক্তি পুরাতন ব্যাটারির সিসা গলানোর কারখানা গড়ে তুলেছেন। তিন মাসেরও অধিক সময় ধরে আবাসিক এলাকার ভেতরে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র কিংবা অন্যান্য কাগজপত্র ছাড়াই নিয়মীতি না মেনে কারখানাটি চালাচ্ছেন। সরেজমিনে ওই কারখানায় গিয়ে কর্মরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে পুরানো ড্রাইসেল ব্যাটারি ও সিসাযুক্ত দ্রব্য সংগ্রহ করা হয়। পরে সেগুলো কারখানায় এনে পুড়িয়ে প্রথমে সিসা বের করা হয়। পরে চুলায় দিয়ে ঢালাই করা হয় এবং নতুন ব্যাটারিতে ব্যবহার উপযোগী করা হয়। পরে সাভার ও ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য সরবরাহ করা হয়। জানা গেছে, উচ্চ তাপমাত্রায় পাত গলানোর সময় কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর যৌগ উৎপন্ন হয়। ধোঁয়ার মাধ্যমে এসব পদার্থ চার দিকে প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। যা থেকে পরিবেশ, প্রতিবেশ, ফসল এবং মানবদেহের ক্ষতিসাধন করে থাকে। ফলে শ্বাষকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হন মানুষজন। স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে পুরাতন ব্যাটারি সংগ্রহ করে তা আগুনে গলিয়ে সিসা বের করা হয়। সিসা গলানোর গন্ধ ও ধোঁয়ায় আশপাশের লোকজন থাকতে পারছেন না। অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কারখানার আশপাশের বিভিন্ন ফলজ, বনজ গাছের পাতা শুকিয়ে গেছে এবং বেশ কয়েকটি কাঠাল গাছ মরে শুকিয়ে গেছে। এরই মধ্যে কারখানার পাশেই হুমায়ুনের চারটি, ইদ্রিসের একটি এবং আব্দুর রাজ্জাকের তিনটি গরু মারা যায়। এরই প্রতিবাদে এবং কারখানা বন্ধের দাবী জানিয়ে এলাকাবাসি গেল বৃহস্পতিবার কারখানাটির সামনে বিক্ষোভ করেছে। বাংলাদেশ কোরিয়া মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: সফিক জানান, সিসা উচ্চ তাপমাত্রায় গলানোর সময় সহযোগী হিসেবে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও সালফার ডাই-অক্সাইডসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর যৌগ উৎপন্ন হয়। এসব রাসায়নিকের সংস্পর্শে এলে অ্যাজমা, চোখের রোগ, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এব্যাপারে কারখানার মালিক রুবেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এব্যাপারে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। এছাড়া ক্যামেরা দেখেই তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। এব্যাপারে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ জানান, অবৈধভাবে গড়ে উঠা সিসা কারখানা সম্পর্কে স্থানীয়দের মাধ্যমে অবগত হয়েছি। এটি বন্ধ করতে যা যা করা দরকার খুব শীগ্রই তা করা হবে। এ ব্যাপারে ঢাকা কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আসলাম হোসেন জানান, খোলা জায়গায় ব্যাটারি গলানো হলে ব্যাটারির রাসায়নিক আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুতে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃস্বরণ করে এবং বায়ু দূষণ হয়। সেই সাথে বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এছাড়া গলিত ব্যাটারি থেকে যে ধাতু আসে যেমন, লেড, ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি বায়ু, মাটি ও পানির সাথে মিশে মানবদেহে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগবালাই সৃষ্টি করে। যেমন, স্মৃতি হ্রাস, ক্যান্সার ইত্যাদি। এর ফলে বিশেষ করে শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। ব্যাটারি ব্যবহৃত বিভিন্ন এসিড যেমন সালফিউরিক এসিড সরাসরি পানি ও মাটিতে যায় এবং এতে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণী মারা যায়, উদ্ভিদ ও গাছপালা মারা যায়। ফলে ওই অঞ্চলের ইকোসিস্টেম নষ্ট হয়ে যায় বলেও জানান তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com