রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ অপরাহ্ন

শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে’ সহিংসতায় রূপান্তরের ‘সরকারি ষড়যন্ত্র’ দেখছে বিএনপি

শাহজাহান সাজু:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিএনপির কর্মসূচিকে সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে বলে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি গতকাল রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) গুলশানে দলের চেয়ারপারসন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
গত ২২ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনপির চলমান কর্মসূচিতে নিহত, আহত, গ্রেপ্তার ও ভাঙচুর সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন মির্জা ফখরুল। এতেই সরকার কি বিএনপির কর্মসূচিকে সহিংসতা দিকে নিয়ে যাচ্ছেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ওই অভিযোগ করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের একটি বড় চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র যে, বিএনপিকে এভাবে ঠেলে দিয়ে একটা সহিংসতার মধ্যে নিয়ে যাওয়া। দেখবেন, প্রত্যেকদিন বলছে বিএনপির আগুন সন্ত্রাস। কিন্তু আগুন কোথাও নাই। তারপরও বিএনপি হাজার হাজার মানুষ নিয়ে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে, যে প্রতিবাদ করছে এখানেই সমস্যাটা সৃষ্টি হয়েছে। এতদিন তো বলে এসেছে বিএনপি সন্ত্রাসী দল, আগুন সন্ত্রাস করে, বিএনপি শান্তিতে বিশ্বাস করে না- এসব। সুতরাং এদিকে তারা প্রভুক (প্ররোচিত) করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদেরকে সেখানে না নিতে পারায় তারা অনেক কষ্টে আছে।’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আন্দোলন করলে বাধা দেওয়া হবে নাÑ এটা কি এক ধরনের ফাঁদ ছিল কি-না যে, মাঠে নামলে হামলা করা হবেÑ এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “একটা কথা আছে না যে, ‘দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না’। ওরা প্রতিমুহূর্তেই ছল তৈরি করে। আন্দোলনকে বিপথে পরিচালিত করে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে। এগুলো তো তাদের একটা কমন ব্যাপার। তাদের একটা বডিক্যামিস্ট্রি আছে। তাদের বৈশিষ্ঠ হচ্ছে সন্ত্রাস। সন্ত্রাসেই তাদের জন্ম, সন্ত্রাস দিয়ে তারা রাজনীতি করে, সন্ত্রাস দিয়েই তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।’
মির্জা ফখরুল ২২ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনপির চলমান কর্মসূচিতে নিহত, আহতদের বর্ণনা দিয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী সারাদেশে নিহত হয়েছেন ৩ জন। আহত হয়েছে ২০০০ জনের অধিক নেতাকর্মী। গ্রেপ্তার- ২০০ জনের অধিক নেতাকর্মী। নাম উল্লেখ করে প্রায়- ৪০৮১ জন ও অজ্ঞাত প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। ১৪৪ ধারা জারি- ২০/২৫ টি স্থানে। বাড়িঘরে ও ব্যাসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা প্রায় হয়েছে ৫০ টি স্থানে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একমাত্র উপায় হচ্ছে সন্ত্রাস। ভয়ভীতি হত্যা, খুন-গুম করেই তারা ক্ষমতায় টিকে আছে। এভাবে তারা আগামীতে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। এবার যোগ হয়েছে সামনের নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিরোধী দল যেন অংশ নিতে না পারে সেজন্য তারা এখন থেকেই বিরোধী দল মুক্ত করতে ভয়াবহ তা-বে লিপ্ত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘দাবি করা হয় এটা নাকি একটা গণতান্ত্রিক দেশ। এ নির্বাচন নির্বাচন খেলার প্রয়োজনটা কি। এ খেলা বাদ দিয়ে যদি সরাসরি ঘোষণা করে দেয় যে, এটা একটা উত্তর কোরিয়ার মতো রেজিমেন্টেড দেশ, তা হলেই তো হয়ে যায়। একটা দল থাকবে, একটা পার্লামেন্ট থাকবে- তাদের মতো করে চলবে। তাহলে তো এত কিছু করার প্রয়োজন নাই অকাতরে প্রাণ নেওয়ার।’
বিএনপি মহাসচিব ভোলায় তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুলি করা হয়েছে দাবি করে বলেন, পরবর্তীকালে আমরা যখন এর প্রতিবাদে কর্মসূচি দিয়েছি সেখানেও অত্যাচার হয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং সরকারের পুলিশ তারা নির্বিচারে আক্রমণ করেছে, মেরেছে এবং গুলি করেছে। অসংখ্যা নেতাকর্মী ছররা গুলিতে আহত হয়েছে।’
তিনি তার দলের প্রতিষ্ঠবার্ষিকীর দিনে নেওয়া কর্মসূচিতে হামলার কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠবার্ষিকী ১ সেপ্টেম্বর। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল সারাদেশে। কোথাও কোনো রকম গ-গোল হওয়ার কোনো কারণই নাই। সেই জায়গায় তারা নারায়ণগঞ্জে সম্পূর্ণ বিনাউস্কানিতে আকষ্মিকভাবে চর্তুদিক থেকে গুলি করেছে। আপনারা ছবি দেখেছেন। আপনারা নিজেরাই বলেছেন, কনক নামের একজন পুলিশ কর্মকর্তা সরাসরি গুলি করেছেন।’
তিনি নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘কী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে গুলি করতে হয়েছে। এরা কারা কথায় কথায় গুলি করে। পুলিশের গুলি করারও আন্তর্জাতিক আইন আছে। এটা মেনে চলতে হয়। বড় কোনো মবকে (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) সামলাতে হলে প্রথমে পতাকা দেখাতে হবে, সতর্ক করতে হবে। তাতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে লাঠিচার্জ করতে হবে। তারপর পানি ছিটাতে হবে। সর্বশেষ যদি গুলি করতেও হয়, তাহলে পায়ের নিচে করতে হবে ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুমতি সাপেক্ষে। এ ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশ থেকে উঠে গেছে। এখানে কোনো আইন মানা হচ্ছে না। আইন বলতে আর কিছু নেই বাংলাদেশে।’ তিনি বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের এবং সাধারণ মানুষদের হত্যা, আহত, গ্রেপ্তার করা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি হত্যাকারী এবং হামলাকরীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তিরও দাবি জানান। এছাড়া অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তি এবং তাদের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান রাখেন। মির্জা ফখরুল এও বলেন, ‘সরকার যদি এই অশুভ তৎপরতা বন্ধ না করে তাহলে জনগণের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা ক্রমান্বয়ে গণবিষ্ফরণে পরিণত হবে এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে এই সকল অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা হবে।’
তিনি জানান, ‘আন্দোলনের কর্মসুচি চলতেই থাকবে। আগামী ১০ তারিখ পর্যন্ত কর্মসুচি রয়েছে। এর পর আরও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
আন্দোলনের জন্য অনেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যে সংলাপ চলছে এ ব্যাপারে কী অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আলোচনাগুলো চলছে। আপনারা জানেন সবকিছুরই কিছু ট্রিটবিট থাকে। দাবি, ন্যুনতম কর্মসুচি নিয়ে আমরা কথা বলছি। আমরা আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com