সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন

জান্নাতে যাওয়ার ৮ আমল

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

প্রত্যেক মুমিনেরই কাম্য জান্নাত। আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে যাওয়ার পথও আমাদের বাতলে দিয়েছেন। আর তা হলো সিরাতুল মুস্তাকিম। এ পথে গমন করতে হলে কিছু কর্ম করা আবশ্যক। মহানবী সা: নির্বিঘ্নে জান্নাতে যাওয়ার কিছু সহজ আমল বলে দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালামা রা: বলেন, যখন মহানবী সা: মদিনায় আগমন করেন, আমিও মদিনায় এলাম। অতঃপর আমি যখন তাঁর পবিত্র চেহারা মোবারকের দিকে দৃষ্টিপাত করলাম, তাঁর চেহারা মোবারক দেখে আমি বুঝলাম যে, তিনি মিথ্যাবাদী নন। তিনি সর্বপ্রথম যে কথা বলেন, তা হলো- হে মানুষেরা! ১. তোমরা বেশি বেশি করে সালাম দাও; ২. অনাহারিকে (গরিব, মিসকিন, এতিম) খানা খাওয়াও; ৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো (কোনো কিছুর মাধ্যমে না পারলে সালাম দিয়ে হলেও আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখো)। ৪. রাতের ওই অংশে নামাজ পড়ো, যখন মানুষেরা নিদ্রায় মগ্ন থাকে। অতঃপর নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করো (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, দারেমি, মিশকাত, হাদিস নং-১৯০৭)।
অপর হাদিসে রয়েছে মহানবী সা: একদা প্রশ্ন করেন, ১. আজ কে রোজা রেখেছে? হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা: বলেন, আমি। রাসূল সা: আবার প্রশ্ন করেন- ২. আজ কে জানাজায় অংশগ্রহণ করেছে? হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা: বলেন, আমি। রাসূলুল্লাহ সা: আবার প্রশ্নে করেন- ৩. আজ মিসকিনকে কে খাদ্য দান করেছে? হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা: বলেন- আমি। মহানবী সা: পুনরায় প্রশ্ন করেন- ৪. আজ কে রোগীর সেবা করেছে? হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা: বলেন, আমি। অতঃপর মহানবী সা: বলেন, যার মধ্যে এগুলো একত্র হয়েছে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে (সহিহ মুসলিম)। অপর হাদিসে মহানবী সা: বলেছেন- ১. আল্লাহর ইবাদত করো; ২. অনাহারিকে খাদ্য দাও; ৩. সালাম প্রচার করো; ৪. অতঃপর নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করো (তিরমিজি, মিশকাত, হাদিস নং-১৯০৮)।
হাদিসত্রয়ের মাধ্যমে জানা গিয়েছে যে, জান্নাতে যাওয়ার আমল হলো- ১. সালাম দেয়া; ২. অন্যকে খানা খাওয়ানো; ৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা; ৪. শেষ রাতে উঠে নামাজ পড়া; ৫. নফল রোজা রাখা; ৬. জানাজায় অংশগ্রহণ করা; ৭. রোগীর সেবা করা ও ৮. আল্লাহর ইবাদত করা।
১. সালাম : সালাম ইসলামের একটি উত্তম আমল। সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সুদৃঢ় হয়। জনৈক সাহাবি মহানবী সা:-কে জিজ্ঞেস করেন, ইসলামের কোন আমলটি সবচেয়ে উত্তম। তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, অন্যকে খানা খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়া (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত, হাদিস নং-৪৪২২)। সালামের মাধ্যমে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। রাসূল সা: বলেন, মুমিন হওয়া ছাড়া কেউ জান্নাতে যাবে না, আর পারস্পরিক ভালোবাসা ছাড়া মুমিন হওয়া যাবে না। আমি কি তোমাদের বলব কিসের ফলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়? তা হলো সালাম দেয়া (মিশকাত, পৃষ্ঠা-৩৯৭)।

২. অন্যকে খানা খাওয়ানো : অন্যকে খাওয়ানোর মতো পুণ্য কোনো কিছুতে নেই। গরিব-মিসকিনকে খাদ্য দানে আল্লাহ তায়ালা বেশি খুশি হন। মহানবী সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি পেটভরে আহার করল অথচ তার প্রতিবেশী অনাহারে রাত যাপন করল সে মুমিন নয় (মিশকাত)।
৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা : মহানবী সা: বলেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না (মিশকাত, পৃষ্ঠা-৪১৯)। তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি নিজ রিজিকের মধ্যে প্রশস্ততা পেতে চায় এবং নিজ আয়ু দীর্ঘায়িত করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রেখে চলে (সহিহ বুখারি, মিশকাত, পৃষ্ঠা-৪১৯)।
৪. শেষ রাতে উঠে নামাজ পড়া : নফল নামাজের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ফজিলতপূর্ণ নামাজ হলো শেষ রাতের নামাজ তথা তাহাজ্জুদের নামাজ। রাসূলুল্লাহ সা:এর ওপর এ নামাজ ফরজ ছিল। তাকে শেষ রাতে স্বীয় স্ত্রীগণ নামাজের জন্য ডেকে দিতেন। সাহাবিদের মধ্যেও রাতের নামাজের প্রচলন ছিল। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগপূর্বক তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায় (সূরা সাজদা-১৬)। রাসূল সা: বলেন, তোমাদের উচিত শেষ রাতে নামাজ পড়া। কারণ এটি তোমাদের পূর্ববর্তী সব পুণ্যবান মানুষের নিয়মিত আমল। এ নামাজ তোমাদেরকে তোমাদের প্রভুর সান্নিধ্যে পৌঁছিয়ে দেয়, গুনাহগুলো দূরীভূত করে দেয় এবং পাপাচার থেকে বিরত রাখে (জামে তিরমিজি, মিশকাত, পৃষ্ঠা-১০৯)।
৫. নফল রোজা রাখা : মহানবী সা: অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখতেন। নফল রোজা রাখার অভ্যাস সাহাবায়ে কেরামের মধ্যেও বেশি ছিল। তিনি সোমবার ও বৃহস্পতিবার এবং প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ তথা আইয়ামে বিজের রোজা, আশুরার ও জিলহজের রোজা রাখতেন। সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতেন শাবান মাসে।
৬. জানাজায় অংশগ্রহণ করা : মহানবী সা: বলেছেন, এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে। তা হলো- তার সাথে সাক্ষাৎ হলে সালাম দেয়া। দাওয়াত দিলে দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা। কল্যাণ কামনা করলে কল্যাণকামী হওয়া। হাঁচি দিলে হাঁচির জবাব দেয়া। অসুস্থ হলে সেবা-শুশ্রুষা করা। মৃত্যুবরণ করলে তার জানাজায় অংশগ্রহণ করা (সহিহ মুসলিম)।
৭. রোগীর সেবা করা : অসুস্থের সেবা-শুশ্রুষা করা সুস্থদের কর্তব্য। আল্লাহ তায়ালা মানবসেবায় বেশি খুশি হন। মহানবী সা: বলেন, বিচার দিবসে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমার সেবা করোনি। মানুষ বলবে- হে প্রভু! আমরা কিরূপে আপনার সেবা করব। আপনিই জগতের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দাহ অসুস্থ ছিল, অথচ তুমি তার সেবা-শুশ্রুষা করোনি। তার সেবা-শুশ্রুষা করলে আমাকে করা হতো, আমার কাছে এর পুণ্য পেতে (মুসলিম, রিয়াদুস সালেহিন, পৃষ্ঠা-৩৫৪)।
৮. আল্লাহর ইবাদত করা : মহানবী সা: হজরত মুয়াজ রা:-কে বললেন, হে মুয়াজ! তুমি কি জানো, বান্দার ওপর আল্লাহর হক কী? আর আল্লাহর ওপর বান্দার হক কী? হজরত মুয়াজ রা: বলেন, আল্লাহ ও রাসূল সা:-ই অধিক জ্ঞাত। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, বান্দার ওপর আল্লাহর হক হলো আল্লাহর ইবাদত করা ও তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরিক না করা, আর আল্লাহর ওপর বান্দার হক হলো তাকে শাস্তি না দেয়া অর্থাৎ জান্নাত দান করা (সহিহ-বুখারি ও মুসলিম)। লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামিয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com