বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন

কবি মোশাররফ হোসেন খানের ৬৩তম জন্মদিন: স্বাপ্নিক কবির কবিতায় মন ও মানস 

।। এস.এম রুহুল আমীন ।।
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০

২৪ আগস্ট, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি, মানুষ, মানবতা ও স্বাপ্নিক কবি মোশাররফ হোসেন খানের ৬৩তম জন্মদিন । কবি মোশাররফ হোসেন খান ১৯৫৭ সালের ২৪ আগস্ট একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান-যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার অর্ন্তগত কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত বাঁকড়া গ্রামে। পিতা-ডা.এম.এ. ওয়াজেদ খান এবং মাতা-বেগম কুলসুম ওয়াজেদ।

তিনি ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য পত্রিকা-মাসিক ‘নতুন কলম’ ও মাসিক ‘নতুন কিশোরকণ্ঠ’-এর সম্পাদক। জাতীয় ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য সংগঠনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি সুস্থধারার সাহিত্য সংস্কৃতিকে উজ্জীবিত করার জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে অক্লান্তভাবে পরিভ্রমণ করেন। তিনি দেশের লক্ষ নবীন-তরুণ লেখকের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা কবিতাকে আমাদের বিশ্বাস, আদর্শ, ঐতিহ্য এবং মৌল চেতনার সাথে আধুনিকতাকে সম্পৃক্ত করে তিনি আধুনিক কবিতার বাঁক পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। এজন্য তাঁকে একজন প্রতিভাবান মৌলিক আধুনিক কবি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। শিশুসাহিত্যেও রয়েছে তাঁর ব্যাপক অবদান। সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় কবি খানের দৃপ্ত পদচারণায় আমাদের সাহিত্য ভান্ডারটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। তাঁর কবিতার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে-মানুষ, মানবতা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, আদর্শ, স্বপ্ন এবং মহাজাগতিক রহস্য। দেশ ও আন্তর্জাতিক বীক্ষণ তাঁর কবিতার একটি অনিবার্য অনুষঙ্গ। কবি খানের বহু কবিতা এবং ছোটগল্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং হচ্ছে।

কবিতা, গল্প, ছড়া, উপন্যাস, কিশোরতোষসহ এ পর্যন্ত তাঁর প্রায় শতকের কাছাকাছি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মুসলিম অবদান’সহ তিনি সম্পাদনা করেছেন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ও সংকলন। অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং পাঠকনন্দিত আধুনিক প্রধান কবি হিসাবে তিনি পরিচিত। তাঁর বিখ্যাত ও বহুল পঠিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-‘হৃদয় দিয়ে আগুন’, ‘নেচে ওঠা সমুদ্র’, ‘বিরল বাতাসের টানে’, ‘পাথরে পারদ জ্বলে’, ‘সবুজ পৃথিবীর কম্পন’, ‘দাহন বেলায়’, ‘স্বপ্নের সানুদেশ’, ‘পিতার পাঠশালা’, ‘কবিতাসমগ্র’-১ প্রভৃতি।   কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি এ পর্যন্ত বহু পুরস্কার, পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

নিরন্তর অধ্যাবসায়ী, পরিশ্রমী ও মানবতাবাদী নির্ভৃতচারী এই অসামান্য বরেণ্য কবি মোশাররফ হোসেন খানের ৬৩তম জন্মদিনে আমরা তাঁর সুস্থতা, দীর্ঘায়ু এবং সার্বিক কল্যাণ কামনা করছি।

কবি মোশাররফ হোসেন খানের কাব্যের মূল্যায়ন করে এস.এম রুহুল আমীন ‘ কবি মোশাররফ হোসেন খানের কাব্যে : তার কবিতা, মন ও মানস ’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধটি তুলে ধরা হলো: ‘কবি মোশাররফ হোসে খান। জন্ম হয়েছিলো অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা ভিন্নরূপ এক সবুজ শ্যামল পল্লী এলাকায়।যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ তীরবর্তী বাঁকরা নামের সুন্দও ও নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর  গ্রামে ২৪ আগস্ট ১৯৫৭ সালে।

কবি মোশাররফ হোসেন খান। বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখা-উপশাখায় বিচরণ করেন সমান্তরাল ও সমানভাবে। যদিও তার পরিচয় কবি হিসেবে, কিন্তু প্রশ্ন হলো সাহিত্যের কোন শাখায়  তিনি নাড়া দেন নি কিংবা পথ চলেন নি? স্বগৌরবে বিচরণ করেন সাহিত্যের সকল শাখা প্রশাখায়। অত্যন্ত সফলভাবে গল্প, উপন্যাস, শিশু সাহিত্য রচনা ও সম্পাদনায় রয়েছে তার সরব উপস্থিতি। সুনিপুণও সিদ্ধহস্ত রয়েছে তাঁর সমভাবে।

সম্পাদক,কবি ও কথাশিল্পী হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তাঁর সকল মহলে এবং সবার মুখে মুখে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে তাঁর সুনাম রয়েছে বিদেশেও। এসকল বিষয়ে তিনি স্বীকৃতিও পেয়েছেন অনেক। আজকের লেখায় ফুটে উঠবে অনবদ্য সৃষ্টি ও কালের সাক্ষী কাব্য জগতের উজ্জ্বল প্রদীপ কবিতা সমগ্র-২ এর আলোকে তার কবিতার সাহসিকতা,সহমর্মিতা দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর গভীর প্রেম প্রীতি ও ভালোবাসা। মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ। প্রকৃতির সাথে অন্তরঙ্গ মিতালী। সব মিলিয়ে কবির মন ও মানস।

কবি  মোশাররফ হোসেন খান লেখনীর মাধ্যমে সমানভাবে সবঅল মর্যাদা প্রদানে বেশ সচেতন এবং যা যা প্রাপ্য তা দিতে তিনি কুন্ঠাবোধও করেন নি ক্ষণকালের জন্যও। তাইতো তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রসঙ্গে কাজী নজরুল ইসলাম  নামক কবিতায় বলেন, “এশিয়া ছাড়িয়ে গেছে তোমার নামের ঢেউ। /অনেক গভীর-যেন এক প্রশান্ত মহাসাগর।

তোমার ছায়ার পাশে আজও দাাঁড়াতে পারেনি কেউ। —— /————- / এখানে রয়েছে শত হিংসা-দ্বেষ ঘৃণা উপকূল / উপেক্ষা- বিনাশী তুমি, কালজয়ী কবি নজরুল।। (কবিতা সমগ্র-২,পৃ.৪০) / কবির দেশপ্রেম যেনো দেহ ও মনের সাথে সম্পৃক্ত ও একই সুতোয় গাঁথা। তাইতো তিনি আমার বাড়ি কবিতায় সতত গেয়ে ওঠেন- / “আমার দেশ / রূপোর দেশ / আমার প্রিয় নদী /বাঁক পেরিয়ে /কলকলিয়ে / চলছে নিরবধি।”(কবিতা সমগ্র-২,পৃ.৫১)

কবির চোখে ও মনে আবহমান গ্রাম বাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাঠ, ঘাট, খাল বিল, নদ-নদী, সোনালী ধান ক্ষেত আর সবুজের সমারোহ ও মমতাময়ী মা যেনো একই সুতোয় গাঁথা। তাইতো তিনি ‘আমার সবুজ বাংলা’ ও ‘সাঁতার’ এবং ‘এই বাংলা আমার’ নামক কবিতায় সুনিপুণভাবে চিত্রায়ন করেছেন এক অসীম ব্যাঞ্জনায় । যেমন ‘আমার সবুজ বাংলা’ কবিতায়উচ্চারণ করেছেন: এসো, এইখানে বসি- / সরল মানুষের মায়া মমতা আর ফুলের সৌরভ  / মায়ের শীতল চাহনি, পিতার ¯হ আর বোনের আদর / নির্মল বাতাস, সবুজ সোনালী ধান ক্ষেত। / অজরপুকুর, দিঘি হাওড় বিলখাল নদী- / সব মিলে আমার দেশ-   /বহু মোহনার সংযোজন  / গর্বিত সম্ভার- / শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পীও যে ছবি আঁকতে অক্ষম-

সে আমার দেশ- / এসো, এখানে আরো ঘন হয়ে বসি- /  দেখো, কি এক মোহনীয় ভঙ্গিতে বয়ে চলেছে /  সহ¯র স্বপ্ন বুকে / সুমধুর কলগুঞ্জনে / বহমান কপোতাক্ষ আর বঙ্গোপসাগরের মতো!… / এসো,এইখানে-/ এসো আরও ঘন হয়ে বসি । (কবিতা সমগ্র-২,পৃ.৫৭)

কবি শুধু কাল্পনিক বা স্বাপ্নিক নন। তিনি বাস্তবভিত্তিক ও বাস্তবধর্মী। তিনি কতটা বাস্তবধর্মী তা ফুটে ওঠে তার সমাজচিত্র মূলক কবিতায়। নিপুণভাবে তিনি তুলে ধরেছেন জাগরণী ও আহব্বানমূলক‘জেগে ওঠো বাংলাদেশ’ শীর্ষক কবিতার মাধ্যমে। “ জেগে ওঠো বাংলাদেশ- / মুক্তির সংগ্রাম আজো হয়নি শেষ।। / লাঞ্চিত-মানবতা  / শঙ্কিত জনতা

ছেলে হারা  মা আমার পাগলের বেশ।। / প্রতিদিন বেড়ে যায় লাশের সারি / প্রতিদিন ঘরে ঘরে  করুন আহাজারি

বুলেটে বুলেটে ঝাঁঝরা গোটা বাংলাদেশ।। /  রক্ত-মিছিলে জনপদভাসে / লাশের ওপর নরপিচাশ হাসে

জালিমের রক্ত পিপাসা তবু অনিঃশেষ।। / রক্ত নেয়া ছাড়া হায়েনারা কিছুই জানে না / মানুষ ও মানবতা শোষক মানে না

তাদের মনে কেবল হিং¯্রতা বিদ্বেষ।।”(কবিতা সমগ্র-২,পৃ.১৯৬)

কবি শুধু কবি নন, নন ভিন্ন কোনো গ্রহের প্রাণী। অন্যান্য মানুষের মতো তিনিও একজন মানুষ। মানুষ হিসেবে তাঁরও আছে মন,মনন ও মানস, মান এবং অভিমান। রয়েছে চাওয়া পাওয়ারও আকাঙ্খা। তারই যেনো বাস্তব ছবি এঁকেছেন তিনি ‘মন ভালো নেই’ এবং ‘উন্মুল উদ্বাস্তু’ কবিতায়: /মন ভালো নেই

‘মন খারাপ থাকলেই আমি  আকাশ , নদী, সমুদ্র  /এবং সবুজাভ বৃক্ষরাজির দিকে চেয়ে থাকি।’(কবিতা সমগ্র-২,পৃ.১৮২)

কবি খুবই আশাবাদী মানুষ। তাই হতাশা তাকে কখনো স্পর্শ করে না। আর সে আশা আকাঙ্খা হচ্ছে কেবলমাত্র প্রকৃতি ও পাকৃতিক দৃশ্য। মন জুড়ানো ও মন ভুলানো একটি নিখুঁত ও নিখাঁদ প্রেমময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আশা করেন তিনি। যা সততই প্রতিভাত হচ্ছে,“সোনালী ভোরের প্রত্যাশা” নামক কবিতায়: ‘এমন একটি ভোরের প্রত্যাশা করছি বহুদিন থেকে

যে ভোরে শুনতে পাবো মোরগের ডাক /পাখির কলরব / নদীর শান্ত  ¯্রােতধ্বনি /এমন একটি ভোরের প্রত্যাশা করছি বহুদিন থেকে / যে ভোর মায়ের কোমলতার মতো /মায়ের ¯েœহের মতো /মায়ের ¯িœগ্ধ আঁচলের মতো

প্রশান্ত দিঘির মতো’’-(কবিতা সমগ্র-২,পৃ.১৮৭)  কবি যেমন ভালো কিছু দেখলে পুলকিত হন তেমন অনুভব করেন আনন্দ। হাসির রেখা ফোটে ওঠে তার পবিত্র মুখে ও ঠোঁটে। তেমন সমাজের অসঙ্গতিপূর্ণ আজরণ ও কুৎসিত অবয়বে তিনি হয়ে পড়েন বিচলিত।

অলসতা ও হতাশার সাগরে ডুবে যাওয়া কবির মোটেও পছন্দ নয়।  আশা জাগানিয়ার নিরন্তর চেষ্টা প্রতিনিয়ত প্রতধ্বনিত হয় তার কবিতা ও ছড়ায়। আর সে আশা এবং সম্ভাবনার যোগ্য মনে করেন আগামী প্রজন্মের কান্ডারী তরুণদেরকেই। তরুণদেরকে নিয়েই তাঁর যতোস্বপ্ন বুনা আর তাদেরকেই আশা আকাঙ্খার কেন্দ্র মনে করেন তিনি। সে কথা স্পষ্ট হয়েছে তার “তরঙ্গে দাও তুমুল নাড়া” নামক কবিতায়-  এখনো ঘুমিয়ে আছো? জেগে ওঠো সাহসী তরুণ / আঁধার চৌচির করে ছিড়ে আনো নবীন অরুণ। /  তোমাদের পদক্ষেপ হোক সুকঠিন দৃঢ় শিলা। / বক্ষ হোক টান টান একেকটি ধনুকের ছিলা। / চেয়ে দেখো কারা যায় স্বপ্নের মিছিল নিয়ে দূরে /আকাশ বাতাস মুখরিত আজ তাদেরই কন্ঠসুরে। / কেউ বলে লাভা স্তুুপ কেই বলে সাহসের গতি / কেউ বলে ছুটেছে তুরকি ঘোড়া, কেউ বলে জ্যোতি। / সাগর মথিত করে তুমিও তাদের সাথী হও /মুক্তির মিছিলে তুমিও যুবক জাগ্রত সদা রও। /ফুঁসেছে জোয়ার কে রুখবে তার / এবার জাগাও ঘুমের পাড়া, / দরিয়ার বুকে আঘাত হানো বারবার / তরঙ্গে দাও তুমুল নাড়া। / ছিঁড়ে যাক পাল ভেঙে যাক হাল আসুক তমসা ঘোর / সপ্তসিন্ধু পাড়ি দিয়ে তবু আনতেই হবে নতুন ভোর।। (কবিতা সমগ্র-২,পৃ.২১৫)

কবি তাঁর চালচলন আচার আচরণে সামগ্রিকভাবে মুন্সিয়ানার সাথে একজন ষোল আনা ঐতিহ্যবাদী। বাস্তবে অনুশীলন করেন তিনি যা বিশ্বাস করেন। বিশ্বাসের মিনার বিনির্মাণ তার কাজের সাক্ষ্য। আর তা ফুটেউঠেছে  তার কবিতার শব্দ চয়নে শৈল্পিকভাবে।

কবি শুধুমাত্র একজন কবিই নন। তিনি একজন ছড়াকারও বটে। সে কথাই অত্যন্ত সুন্দরভাবে “শীত-২০২০” ঐ যে আমার বাড়ি” এবং কবি হবার স্বপ্ন বড়” ছড়ায় একথা স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে।

শীত-২০২০

“শীতটা আসে বন বাদাড়ে

শীতটা আসে পাহাড়ে

দারুন শীতে থরথরিয়ে

গরিব কাঁপে আহারে!

শীতের দিনে মজাও আছে

পিঠা পায়েস রসও আছে

মাঠের পরে মাঠ যে সাজে

সরষে ফুলের বাহারে”(কবিতা সমগ্র-২,পৃ.২১৬)

সমাজের অসঙ্গতির অনুসঙ্গ হিং¯্রতা ও মানবতা বিবর্জিত কর্মকান্ড কবির কোমল মনকে নাড়া দেয় ভীষণভাবে, দেয় প্রচন্ড ধাক্কা। দ্রোহের আগুণ জ্বেলে করে তোলে বিদ্রোহী। তার প্রমাণ রাখেন তিনি  “আবরার” নামক কবিতায় এবং এখান থেকে উদ্ধারের পথও বাতলিয়ে দিয়েছেন তিনি সুন্দরভাবে আগামী প্রজন্ম তরুণদেকে। রুখে দিতে অসঙ্গতি আর ভেঙ্গে দিতে হায়েনাদেও ঁিষদাত চিরতরে। /“হিং¯্র হায়েনারা থাবা মেলে বারবার /অকালে ঝওে যায় ফুলের মতো

কত যে আবরার।  (কবিতা সমগ্র-২,পৃ.২৪৪)

গ্রাম ও গ্রামের মানুষ, প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক দৃশ্য কবির মানসপটে ফুটে ওঠে একেবারেই জীবন্ত ছবি হয়ে। তাই তিনি কোনোভাবেই ভুলে যেতে পারেন না সেই আঁকা বাকা মেঠো পথ। গাছপালা পাখপাখালী, স্মৃতির দক্ষিণ দুয়ার সুপরিত কপোতাক্ষ নদ। ছেলে বেলার স্মৃতি পটে শুধুমাত্র সাঁতার কাটে বাঁকড়ার হাট। দিঘি আকৃতির বড় পুকুরের ঘাট আর তার চিরচেনা মনোমুগ্ধকর ছবির মতো নিজ গ্রাম। সর্বক্ষণ যেনো ছায়া হয়ে থাকে কবির সঙ্গী হয়ে পাশে পাশে পরীর মতো।

কবি কেনো জড় বস্তুর নাম নয়। তারও আছে একটা মমত্ববোধের কোল হৃদয়বন্দর। প্রতিনিয়ত যে বন্দরে ঢেউ খেলে যায় ভালোলাগা ও ভালোবাসা। আর ভালোবাসা উৎসারিত হয় হর হামেশা  তার কোমল হৃদয় থেকে পৃথিবীর সকল সৃষ্টির প্রতি অবারিত ভালোবাসার ফলগুধারা। আর তারই প্রতিফলন ঘটিয়েচেন তিনি “ভালোবাসি” নামক কবিতাটিতে অত্যন্ত চমৎকারভাবে। “আমি সবুজ ভালোবাসি /তাই বার বার ফিরে আসি /সবুজের কাছাকাছি। /আমি নদীকে ভালোবাসি /তাই বার বার ফিরে আসি /নদীর কাছাকাছি। /আমি হাসি ভালোবাসি /তাই বারবার ফিরে আসি /শিশুর কাছাকাছি।——-  আমি মানুষ ভালোবাসি / তাই বারবার ফিরে আসি / মানুষের কাছাকাছি। (কবিতা সমগ্র-২,পৃ.২৯৬)

কবির মন কচি শিশুর মতোই সুকোমল ও অতিশয় নরম। তাই তার দরদীভাব ফুটে ওঠে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের সকল মানুষ, বিশেষত:শিশুর জন্য। সমানভাবে হাহাকার করে উঠেছে তার হৃদয়। যা দিবালোকের মতা স্পষ্ট তার “ফিলিস্তিন শিশুর জন্য” নামক শীর্ষক কবিতায়-

ফিলিস্তিন শিশুর জন্য

তোমরা যখন ঘুড়ি ওড়াও ছাদে

সন্তানহারা মা তখন ফিলিস্তিনে কাঁদে।

তোমরা যখন খাও বসে পিঠা, পাপরভাজা

রক্ত বন্যায় ভাসছে তখন ফিলিস্তিনের গাজা।

গাজা তো নয় গাজা তো নয় আগুনের নদী

দেখতে পাবে সবই তুমি চোখটা খোলো যদি।

ফিলিস্তিনি শিশুর জন্য বুকটা ফেটে যায়

তাদের জীবন রক্ষার জন্য কেউ কি কোথাও নাই?

থামাও যত শিশু হত্যা থামাও রক্ত খেলা

ফিলিস্তিনে উঠুক ফের শান্তি-সুখের বেলা।।

আর কত দেখতে হবে কচি শিশুর লাশ!

ওদের রক্তেই লেখা হবে তোদের সর্বনাশ।। (কবিতা সমগ্র-২,পৃ.২৯৭)

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই কবি ভাবেন বর্তমানের মতোই আগামীকে নিয়ে। স্বপ্ন বোনেন সব সময় শুধু আগামীর জন্য। আগামী প্রজন্মকে গড়ে তুলতে তার কসরতের যেনো কমতি ও শেষ নেই একদম। তাই কিভাবে সমাজটাকে সুন্দরভাবে গড়তে হবে তিনি তার নির্দেশনাও দিয়েছেন অত্যন্ত সাবলীল ও সুন্দরভাবে।  অধিকারের প্রশ্নে কবির কন্ঠ সদাসর্বদাই সরব ও সুউচ্চ।  সব মিলিয়ে আমরা যদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে একমত আমাদেরকে হতেই হবে। কবির মন আবহমান ঐতিহ্যময় গ্রাম বাংলার কাদা মাটির মতো  সহজ সরল নিখুঁত ও নির্ভেজাল এবং প্রকৃতিগতভাবে নরম। আর বাংলার সকল ফুলের মতো সুগন্ধিময়  পবিত্র মানস। তার মন প্রাণ ও হৃদয় খাঁটি বাংলার সার্বভৌম স্বাধীনতারই মানচিত্র। আগাামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী আর একজন সাচ্চা মুসলিম হিসেবে ধর্মীয় আবেগ আর অনুভূতি তার সার্বক্ষণিক সাধনা।

তাই প্রিয় কবির জন্ম দিনের এই শুভক্ষণে আমাদের হৃদয় উজার করে দেওয়া ভালোবাসা ডালা আর সার্বক্ষণিক শুভকামনা। কবি জীবিত থাকবেন অনাদি অনন্তকাল আমাদের গহীন হৃদয় মাঝে, তার শুধুমাত্র বয়সে নয় সকল শুভকর্মে। মহান আল্লাহর কাছে আমাদের এবিনীত প্রার্থনা। নিবন্ধ লেখক: এস.এম রুহুল আমীন একজন গবেষক।

 

 




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com