আওয়ামী লীগকে রাস্তায় পরীক্ষা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথার অর্থ বিগত নির্বাচনগুলো সঠিক ছিল না। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এর অর্থ বিগত নির্বাচনগুলো সঠিক ছিল না। তিনি বলেন, দেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে রাস্তায় আসুন সেখানে পরীক্ষা হবে। গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাড্ডা হাইস্কুল মাঠে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা ও হামলার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির বাড্ডা জোনের উদ্যোগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট আর বিদেশে টাকা পাচারের কারণে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ করে মোশাররফ বলেন, আজকে আমরা যে কারণে সমাবেশ করছি এটা বিএনপির কোনো ইস্যু নয়, এটা এই দেশের ১৮ কোটি মানুষের ইস্যু। আজকে এই সরকার মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাচারের কারণে বাংলাদেশকে দেউলিয়া করে ফেলেছে। সরকার হঠাৎ করে শতকরা ৫০ ভাগের বেশি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। এর সাথে সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। আওয়ামী সিন্ডিকেট নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন লোড শেডিং যাদুঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ আজকে লোড শেডিংয়ের কারণে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। অর্থনীতি ধ্বংসের কিনারায় চলে গেছে। এর একমাত্র কারণ সরকারের দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচার। তিনি বলেন, এই সরকার দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় রয়েছে সেজন্য সাধারণ মানুষের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। আজকে গরীব-খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে চুলায় আগুন জলছে না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলতে চাই আপনারা আপনাদের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খবর নিয়ে দেখুন তাদের হাড়িতে কি জুটছে। এমনি একটি দুরবস্থার মধ্যে দেশ নিপতিত।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস বয় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাবে ড. মোশারফ বলেন, আমি মনে করিয়ে দিতে চাই ৭২ থেকে ৭৫ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। তারা গণতন্ত্র হত্যাকারী। আবার আজকের যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনি বিনাভোটে একবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন আর একবার ভোট ডাকাতি করে হয়েছেন। সারা পৃথিবীর কেউ গত নির্বাচনকে নির্বাচন বলে না। সে কিনা বলে আওয়ামী লীগের সময় নাকি গণতন্ত্রের সুবাতাস বয়। আমি বলতে চাই যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রকে তারা বার বার হত্যা করেছে। যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে অর্থনীতিকে লুটপাট করেছে। ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। আর বিএনপির ইতিহাস গণতন্ত্রকে বার বার পুনরুদ্ধার করা।
জনগণের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে এই সরকারকে হঠাতে হবে। তাই আমাদের সামনে একটাই টার্গেট, এই সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে লেভেল প্লেইং ফিল্ডে নির্বাচন করতে হবে। কোনো ইভিএম মার্কা ডাকাতি চলবে না। জনগণ নিজের হাতে নিজের ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বলেছেন এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তাহলে কি বলব আগের নির্বাচনগুলোতে ডাকাতি হয়েছে, তাই তো। আমরা তার কথায় বিশ্বাস করি না। আমরা ভোটারবিহীন সরকার দেখেছি। ১৫৪ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছিল। আর তিনি বলেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। একথা এদেশের জনগণ কেউ বিশ্বাস করে না। তাই আমাদের একটাই দাবি অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, সংসদ বাতিল করুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক, লেভেল প্লেইং ফিল্ড হোক, আপনারা রাস্তায় আসুন, সেইখানে আমাদের পরীক্ষা হবে।
এই সমাবেশে গুলশান-বাড্ডা-রামপুরা থানার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে অসংখ্য নেতাকর্মী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে অংশ নেয়। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও এবিএম রাজ্জাকের পরিচালনায় সমাবেশে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, মহানগর উত্তর বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, আব্দুল আলীম নকী, মুনসী বজলুল বাসিত আনজু, শামসুল হক, তহিরুল ইসলাম তুহিন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।