জঙ্গি তৎপরতা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ, নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধে প্রচলিত আইন সম্পর্কে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকার মনে করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এই আইনগুলো সম্পর্কে সচেতন হলে তারা সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সহায়তা করবে। এ লক্ষ্যে জঙ্গি তৎপরতা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ, নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধে প্রচলিত আইন সম্পর্কে প্রচার কার্যক্রম শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মোট ১০৭ কোটি ৩৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রচার কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ (১ম সংশোধিত) শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক। এই প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে জঙ্গি তৎপরতা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ, নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধে প্রচলিত আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে গণযোগাযোগ অধিদফতর।
এর বাইরেও প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রচার কার্যক্রম শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করবে। প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ যেমন আমার বাড়ি আমার খামার, আশ্রয়ণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বিনিয়োগ বিকাশ এবং পরিবেশ সুরক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান ও আয় বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ সরকারকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের যে প্রক্রিয়া তাতে দেশের সকল মানুষের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। দেশব্যাপী গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধকরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি), ভিশন-২০২১ ও ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে সরকারকে সহযোগিতা করবে। মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশেষ প্রচার, ট্রাফিক আইন, বাল্যবিবাহ ও সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধে বিশেষ প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত উদ্ভূত সমস্যা মোকাবিলা ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে জনগণকে তথ্য প্রদান ও সচেতন করা হবে। এছাড়া মৌলিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিশু অধিকার, লিঙ্গ সমতা, নারী অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়ন, নারী নির্যাতন ও যৌতুকবিরোধী আইন, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, পরিবার পরিকল্পনা, স্যানিটেশন, এইচআইভি/এইডস, এসটিডিসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সচেতন করবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলার ৪ হাজার ৫৫৪টি ইউনিয়ন, ৩১৬টি পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রকল্পটি ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটি চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রকল্পর আওতায় সারা দেশে চলচ্চিত্র প্রদর্শন, মহিলা সমাবেশ, সংগীতানুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে আউটরিচ প্রোগ্রাম করা হবে এবং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হবে।
কমিশন জানিয়েছে, সরকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, সে বিবেচনায় প্রকল্পটি ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মিশন সূত্র জানায়, মূল প্রকল্পের ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ অংশটি বাস্তবায়নকালে দেখা গেছে প্রকল্পটি সারাদেশের ৪ হাজার ৫৫৪টি ইউনিয়ন ছাড়াও দেশের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর ওয়ার্ডে বসবাসরত অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এ কার্যক্রমের বাইরে রয়ে গেছে। এছাড়া বিপুল সংখ্যক ইউনিয়নকে এই প্রচারের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে দেশের ৩১৬টি পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মোট ৩ হাজার ১৮৬টি ওয়ার্ডে এবং ১ হাজার ৮৪৪টি ইউনিয়নে পুনরায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। কার্যক্রমটি মূল ডিপিপি থেকে ব্যয়ের হার অপরিবর্তিত রেখে কিছুটা পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ এবং ২০২০ সালের ১৭ মার্চ হতে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন সংযোগসহ জনকল্যাণে গৃহীত উদ্যোগসমূহ এ প্রচারের আওতায় আসবে। এছাড়া, কয়েকটি অঙ্গে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে বিধায় প্রকল্পটিতে সংশোধনী প্রয়োজন ছিল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বর্তমান সরকারের বিশাল কর্মযজ্ঞ দেশব্যাপী প্রচারের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এ প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সংশোধিত প্রস্তাবে এ কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত, কার্যকর ও বেগবান হবে। এর মাধ্যমে সরকারের কর্মকাণ্ড দেশের জনসাধারণের সামনে উপস্থাপিত হবে।