শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৫ পূর্বাহ্ন

অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা: রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ে ভাটা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২

ডলার ও জ্বালানি সঙ্কটের মধ্যে রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ে ভাটায় দেশের অর্থনীতি বড় ধাক্কায় পড়লো। সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসে ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। প্রতি ডলার ১০৩ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। গত ৭ মাসের মধ্যে এটিই প্রবাসীদের পাঠানো সর্বনি¤œ রেমিট্যান্স। রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৪৫৫ কোটি ডলার বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে। তবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের গড়ে যেভাবে রেমিট্যান্স এসেছিল সে তুলনায় দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ সপ্তাহে কিছুটা কমে গেছে। এ কারণে পুরো মাসেই কমেছে রেমিট্যান্স। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এর আগে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) টানা ২ বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স আসে দেশে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও রেমিট্যান্সের সে ধারা অব্যাহত ছিল। ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা সেপ্টেম্বরেও ২ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আশা করেছিলেন। তবে পরের সপ্তাহগুলোয় ধারাবাহিকতা কমে যাওয়ায় কমে যায় রেমিট্যান্স। অর্থাৎ প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমে যাওয়া আগের দুই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কমে যায় সেপ্টেম্বরে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আসে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। দ্বিতীয় মাস আগস্টে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ (২ দশমিক ০৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যমতে, সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে মোট ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার বা প্রায় ১.৫৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের (২০২১ সালের সেপ্টেম্বর) একই সময়ের চেয়ে ১৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার বা ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার বা প্রায় ১.৭৪ বিলিয়ন ডলার।
আলোচিত সময়ে (সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে ২৪ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১২৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। একই সময়ে বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬১ লাখ ডলার এবং বিশেষায়িত এক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৪১ ডলার।
সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে (৩৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার)। এরপর সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ২৮ লাখ ডলার, আল-আরাফাহ ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৭২ লাখ, অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৫৬ লাখ এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৯২ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে দেশে।
তবে সরকারি বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক আল-ফালাহ, হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা।
দুই মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৪৫৫ কোটি ডলার: রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৪৫৫ কোটি ডলার বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে চলতি হিসাব ও সামগ্রিক লেনদেনেও ঘাটতি রয়েছে। গত রোববার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি ভারসাম্যের হালনাগাদ তথ্যে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হয়েছে। তাছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। আবার আশানুরূপ রেমিট্যান্স প্রবাহ না থাকায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস (জুলাই ও আগস্ট) রপ্তানি হয়েছে ৮১৩ কোটি ডলার। যা তার আগের অর্থবছর ২০২১-২০২২ এর একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ২৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। অন্যদিকে এ সময় আমদানি হয়েছে এক হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময় (জুলাই ও আগস্ট) থেকে আমদানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৫৫ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪২৮ কোটি ডলার। এর আগে গেল ২০২১-২০২২ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) দেশে বাণিজ্য ঘাটতি তিন হাজার ৩২৫ কোটি ডলার, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। একই সময় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতিও সাড়ে ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। আর ২০২০-২০২১ অর্থবছরের এ বাণিজ্য ঘাটতির অঙ্ক ছিল ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার।
আলোচিত জুলাই-আগস্ট সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। এ সময় সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ১৫১ কোটি ডলার আর ব্যয় হয়েছে ২১৯ কোটি ডলার। সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৪৫ লাখ ডলার। চলতি হিসাবে ভারসাম্য বা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্সেও ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। চলতি অর্থবছরে প্রথম দুই মাস (জুলাই-আগস্ট) এই ঘাটতির (ঋণাত্মক) অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১৫০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৪১ কোটি ডলার।
তাছাড়া জুলাই-আগস্ট সামগ্রিক লেনদেনে (ওভার অল ব্যালান্সেস) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩৬ কোটি ডলার, যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচকে ২২১ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল। আলোচ্য সময়ে ৭৮ কোটি ডলার বিনিযোগ করেছে বৈদেশিক উদ্যোক্তারা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৬০ কোটি ডলার। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন অর্থবছরের প্রথম দুই মাস (জুলাই-আগস্ট) দেশে ৪১৩ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com