শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৮ অপরাহ্ন

ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে গোপালগঞ্জের গিয়াস উদ্দিন এখন সফল উদ্যোক্তা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২২

মোঃ গিয়াস উদ্দিন (৩৩) একজন আত্মপ্রত্যয়ী প্রদীপ্ত যুবক। বাড়ি গোপালঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার হোগলাকান্দি গ্রামে। পিতার নাম আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা। মাতা আলেয়া বেগম। তিনি পরের অধীনে বড় কর্মকর্তা পদে চাকরি না করে উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির চিন্তা করেন। তাই ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন। এখন তিনি অগ্র ডেইরি ফার্মের সত্ত্বাধিকারী। ফার্মের দুধ প্রসেস করে গড়ে তুলেছেন অগ্র সুইটস ভিলেজ নামে ৩টি মিষ্টির দোকান। ডেইরি ফার্ম ও মিটির দোকানে তিনি ১৫ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। তার ফার্মে গরুর সংখ্যা এখন ৯০টি। তিনি ১০ লাখ টাকা নিয়ে ডেইরি ফার্ম শুরু করেন। এখানে তিনি এ পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বর্তমানে স্থায়ী, আবাসনসহ তার সম্পদের পরিমান প্রায় ৩ কোটি টাকা। গত কোরবানীর ঈদে তিনি অন্তত ১০টি গরু মোটাতাজা করেন। এরমধ্যে ৪টি ছিল বিশাল আকৃতির ষাঁড়। গরু মোটাতাজ করণেও পেয়েছেন সাফল্য। তার এ অভাবনীয় সাফল্য তাকে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সহায়তা করছে। তিনি এলাকায় পুষ্টি, আমিষ ও প্রোটিন সরবরাহে ভূমিকা রাখছেন।
মোঃ গিয়াস উদ্দিন গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার হোগলাকান্দি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি গ্রামের স্কুল হোগলাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। সেখান থেকে ৫ম শ্রেণী পাস করেন। এরপর বাড়ির পাশের জয়নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ বিদ্যালয় থেকে তিনি ২০০৩ সালে এসএসসি পাস করেন। ২০০৫ সালে খুলনার হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। আবুল হোসেন কলেজ থেকে বিবিএস ও নিউ মডেল ইউনিভার্সসিটি কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ২০১৪ সালে মোঃ গিয়াস উদ্দিন প্রাইম ব্যংকে জুনিয়র অফিসার হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন। ব্যাংকে চাকরি তার ভালো লাগেনি। তাই তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা করেন। ২০১৫ সালের শেষের দিকে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। ২০১৮ সালের ১০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ১৮ এপ্রিল তিনি ৪ টি উন্নত জাতের গাভী দিয়ে হোগলাকান্দি গ্রামেই ডেইরি ফার্ম শুরু করেন। তারপর আর তকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরম মমতায় তিনি তিলতিল করে গড়ে তোলেন ডেইরি ফার্ম। ৪টি থেকে এখন তার ডেইরি ফার্মে গরুর সংখ্যা ৯০টি। প্রতিটি গরুর তিনি আলাদা আলাদা নাম দিয়েছে। ফার্মে প্রবেশ করে তিনি গরুকে নাম ধরে ডাকেন। প্রতিটি গরুরই তার ডাকে সাড়া দেয়। তিনি গরু দেখেই তাদের সুখ,দুঃখ-কষ্ট অনুভব করেন। অবলা প্রাণির দুঃখ, কষ্ট লাঘবে তিনি নিজে গরুর পরিচর্যা করেন। এছাড়া ফার্মে কর্মরতদের গরুর পরিচর্যার নির্দেশ দেন। ফার্মে গরু রেখে তিনি অন্যত্র থাকতে পারে না। তিনি সবসময় ডেইরি ফার্মটি অনুভব করেন। ধারণ করেন। এ কারণেই তিনি অল্প সময়ের মধ্যে সাফল্য পেয়েছেন। গরুর ফার্মে ১০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনি ফার্মের কর্মীদের আপন করে নিয়েছেন। তাদের বেতন ভাতার পাশাপাশি সবধরণের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন। ফার্ম কর্মীরাও তার প্রতি খুবই সন্তুষ্টু। তাই তারা ফার্মে আন্তরিকতার সাথে কাজ করেন। ফার্মের এ অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে ফার্ম কর্মীদের ভূমিকাও অনেক। ফার্মের গরু পালনের জন্য তিনি নিজের ও গ্রাম থেকে লিজ নিয়ে ১০ একর জমিতে ঘাসের চাষ করছেন। এখানে উৎপাদিত ঘাস সারা বছর গরুকে খাওয়ানো হয়। অতিরিক্ত ঘাস বিক্রি করে তিনি আয় করে থাকেন। এছাড়া ফার্মের ৩০ শতাংশ জমিতে মোঃ গিয়াস উদ্দিন বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন। মানবদেহের জন্য নিরাপদ সবজি দিয়ে নিজের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পুরণ করছেন। বাড়তি সবজি বাজারে বিক্রি করে রোজগার করছেন। মোঃ গিয়াস উদ্দিন ২০১৯ সালে হেলেনা পারভীন হিরার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তার সহধর্মিণী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) কর্মরত। তিনি একটি কন্যা সন্তানের জনক। পতœী ও কন্যাকে নিয়ে তার সুখের সংসার। এলাকায় তার ডেইরি ফার্ম ও মিষ্টির বেশ সুনাম রয়েছে। তিনি অগ্র সুইটস ভিলেজকে তার ব্যান্ডিং পন্য হিসেবে ছড়িয়ে দিতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি ডেইরি ফার্মের দুধ দিয়ে ঘি, ছানা, সন্দেশ, কালোজাম, মালাইচপ, ল্যাংচা, চমচম, রমমালাই, রসগোল্লা, দই, রসকদম, কমলাভোগসহ বাহারী মিষ্টি তৈরী করছেন। এসব মিষ্টি ৩ টি শোরুমে বিক্রি করছেন। উৎকৃষ্ট মানের এসব মিষ্টি ডেইরি ফার্মের দুধ থেকে তৈরী করছেন। এরমধ্যে কোন ভেজাল নেই। তাই খেতে সুস্বাদু। তার তৈরী মিষ্টির সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।
মোঃ গিয়াস উদ্দিন তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, উদ্যোক্তা হয়ে ডেইরি ফার্ম করা যেতে পারে। এটি লাভজনক ব্যবসা। আত্মপ্রত্যয়ী হলেই এই ব্যবসা থেকে লাভ করা যায়। মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। এটি করে জাতিকে দুধ, মাংসের যোগান দেয়া সম্ভব। মেধাবী জাতি গঠনে ভূমিকা রাখা যায়। এটি খুবই পূণ্যের কাজ।
সফল উদ্যোক্তা মোঃ গিয়াস উদ্দিন বলেন,আমি ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হয়েছি। পরের অধীনে বড় কর্মকর্তা না হয়ে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রত্যয়ে আমি ডেইর ফার্ম শুরু করি। এখানে আমি সফল হয়েছি। এখন ডেইরি ফার্মের দুধ দিয়ে মিষ্টি তৈরী করছি। সেগুলো অগ্র সুইটস ভিলেজ নামে ৩টি আউটলেটের মাধ্যমে বিক্রি করছি। এর একটি আইটলেট রয়েছে কাশিয়ানী উপজেলার জয়নগর বাজারে। আর অপর ২টি আউটলেট স্থাপন করেছি মুকসুদপুর উপজেলায়। অগ্র সুইটস ভিলেজকে আমি ব্রান্ডিং করার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে সফল হলে আমি অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে সক্ষম হব। আমার এখানে সব মিলিয়ে ১৫ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এখন শুধু আমিষ, প্রোটিন ও পুষ্টির যোগান দিচ্ছি। আগামীতে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারব। কেউ নতুন উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হলে আমি তাকে সহযোগিতা করি। তাকে পথ দেখিয়ে দেই।
মোঃ গিয়াস উদ্দিন আরো বলেন, ফার্মের গরুগুলোর সাথে আমার নীবিড় সম্পর্ক। তাদের ছেড়ে আমি একদিনও বাইরে থাকতে পারি না। ৯০ টি গরুর ৯০ টি নাম রয়েছে। ফার্মে গিয়ে তাদের নাম ধরে ডাক দিলে সাড়া দেয়। তারা কথা বলতে পারে না। অবলা প্রাণি। তাদের দেখলেই আমি বুঝতে পারি কার কি সমস্য? সমস্যা সমাধানে ফার্মের কর্মীদের নির্দেশ দেই। তিনি বলেন, আমার সাফল্যের পেছনে ফার্ম ও অগ্র সুইটস ভিলেজের ১৫ কর্মীর অবদান ব্যাপক।
ডেইরি ফার্মের কর্মী কিতাব, আমজাদ, রহিম বলেন, আমাদের ফার্মের সত্ত্বাধিকারী মোঃ গিয়াস উদ্দিন একজন মানবিক হৃদয়ের মানুষ। তিনি যা খান,তাই আমাদের খাওয়ান। ঈদ-কোরবানীতে তিনি আমাদের ও পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা করেন। তিনি আমাদের ভাল বেতন ভাতা দেন। এখানে কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখেই আছি। এমন একজন মানুষ পেয়ে আমরা তার ফার্মের জন্য নিবেদিত প্রাণ। আমাদের সাথে তিনি বন্ধু সুলভ আচরণ করেন। আর এ জন্য এই ফার্মটি ভালো ব্যবসা করতে পারছে। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা মোঃ গিয়াস উদ্দিনের অবদানও অনেক।
অগ্র সুইটস ভিলেজের জয়নগর বাজার শাখার ম্যানেজার দ্বীনবন্ধু বলেন, মিষ্টির মান ভালে। দামও ক্রয় ক্ষতার মধ্যে । তারপরও গ্রামের মধ্যে মিষ্টি কম চলে। আউটলেট শহরে করতে পারলে মিষ্টির চাহিদা বাড়বে। আমাদের উদ্যোক্তা মোঃ গিয়াস উদ্দিনের স্বপ্ন একদিন পূরণ হবে।
জয়নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মাদ সালাহউদ্দীন বলেন, শহরের অভিজাত এলাকার মিষ্টির মত মানসম্পন্ন মিষ্টি পাওয়া যায় অগ্র সুইটস ভিলেজে। মিষ্টি খুবই মজাদার। দামও নাগালের মধ্যে। মোঃ গিয়াস উদ্দিন তার ফার্মের গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে এ মিষ্টি তৈরী করেন। এ মিষ্টিতে কোন ভেজাল নেই। খাঁটি মানের নিশ্চয়তার এ মিষ্টি আমরা গ্রামে বসে খেতে পারছি। গিয়াসের অগ্র ডেইরি ফার্ম ও অগ্র সুইটস ভিলেজর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। সে শ্রম ও মেধা দিয়ে কাজ করছেন । তাই তার মত সৎ ও আত্মপ্রত্যয়ী কর্মী সফল হবেই।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com