লক্ষ্মীপুর সদর ও কমলনগর উপজেলায় পৃথক হত্যা মামলায় ছয়জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসাথে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
কমলনগরের হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন মোবারক হোসেন, মানিক হোসেন, মাহমুদুল হাসান, আরাফাত আরেফিন ও বাবুল হোসেন। এর মধ্যে আসামি মাহমুদুল হাসান পলাতক। তিনি হাজিরহাট ইউনিয়নের চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের মৃত মহসিন মাস্টারের ছেলে। অন্য মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি দেলোয়ার হোসেন। তিনি সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের পুকুরদিয়া গুচ্ছগ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কমলনগরে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের টি বয় মাকছুদুর রহমানকে হত্যার ঘটনায় পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। এ মামলার আসামি মাহমুদুল হাসান পলাতক। বাকি চারজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্য মামলায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে দেলোয়ার নামের একজনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আদালত।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী থেকে জানা গেছে, কমলনগরের মাহমুদুল হাসানের মায়ের সাথে ভুক্তভোগী মাকছুদের প্রায় ৯ মাস পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে মাহমুদুল অন্য আসামিদের নিয়ে মাকছুদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। মাকছুদ চরলরেঞ্জ বাজারের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের টি বয় এবং ওই গ্রামের এনায়েত উল্যার ছেলে। ২০১৬ সালের ২৮ মে রাতে স্থানীয় সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে একত্র হয়ে মাকছুদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আসামিরা। ৩০ মে রাতে মাকছুদ বাজারের সরকারি দিঘির দক্ষিণপাড়ে আসেন। সেখানে আগে থেকেই ওৎ পেতে ছিলেন মাহমুদুলসহ আসামিরা।
মাকছুদ আসামাত্রই লাঠি দিয়ে পেছন থেকে তার মাথায় আঘাত করা হয়। এতে তিনি মাটিতে লুটে পড়েন। পরে রশি দিয়ে তাকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কমলনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সায়েদুর রহমান ভূঁইয়া আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অন্য মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, দেলোয়ারের মাকে ভরণপোষণ দেয়া পছন্দ করতেন না তার স্ত্রী শামছুন নাহার। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের ঝগড়া হতো। ২০১৫ সালের ১২ জুন নিজের মাকে দুই কেজি আম কিনে দেন দেলোয়ার।
বিষয়টি জানতে পেরে শামছুন নাহার জনসমক্ষে দেলোয়ারের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। বাড়ির মধ্যেও তাকে গালমন্দ করেন শামছুন নাহার। এতে দেলোয়ার ক্ষিপ্ত হয়ে ঘুমের মধ্যে নাহারকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন। পরে ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজান।
এ ঘটনায় চন্দ্রগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক কাউছার উদ্দিন চৌধুরী মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা পুষ্প বরণ চাকমা দেলোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আজ আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেন।