মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

কর্ণফুলী টানেল:অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২২

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রস্তুত হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। দেশের প্রথম এই টানেল নির্মিত হচ্ছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায়। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ মেগা প্রকল্পের কাজ ৯২ শতাংশ শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে কাজ করছেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এখন চলছে টানেলের ভেতরে ফায়ার ফাইটিং, লাইটিং ও কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনার কাজ। পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে প্রকল্পের গাড়িও। নদীর তলদেশে হওয়ায় যেকোনও সময় পানি জমতে পারে আশঙ্কায় টানেলের মধ্যে বসানো হচ্ছে ৫২টি সেচ পাম্প। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরইমধ্যে নদীর তলদেশে স্থাপন করা হয়েছে দুটি টিউব। একটি টিউবে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে বিকল্প পথে গাড়ি চালানো যায়, সেটিরও কাজ চলছে। বাতি ও পাম্প স্থাপন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরির কাজও সমানতালে চলছে। নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, ৭৭২ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার। এখন চলছে কর্ণফুলীর দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারা অংশে টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ।
ওয়ান সিটি টু টাউন: প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, টানেল চালু হলে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এক ধাপ এগিয়ে যাবে। টানেলকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ইতোমধ্যে আনোয়ারা উপজেলা প্রান্তে সংযোগ সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠছে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প-কারখানা। টানেলকে ঘিরে পর্যটন, শিল্পায়নসহ অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। টানেল চালু হলে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিট। সময় বেঁচে যাওয়ায় অর্থনীতি গতি পাবে।
টানেল নির্মাণের আগে ২০১৩ সালে করা সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সে হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী যানবাহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ ১ লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল অর্থনীতি, যোগাযোগ এবং পর্যটন খাতে ব্যাপক অবদান রাখবে। বিশেষ করে এটি হবে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এগিয়ে নেওয়ার রোডম্যাপ। টানেলের আশপাশের এলাকায় নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন, বাণিজ্যিক ব্যাংকের নতুন শাখা খোলাসহ ব্যাপক বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে। চট্টগ্রাম-ঢাকা এবং কক্সবাজারের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে টানেল।’
ব্যয় বাড়বে: টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়বে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে টানেলের নিরাপত্তায় নতুন করে স্ক্যানার মেশিন বসানো হচ্ছে। আরও কিছু নতুন সংযোজন আনতে হয়েছে বলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন। এসব কারণে ব্যয় বাড়ছে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ১০ হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা।
মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। তবে সংযোগ সড়কসহ টানেলের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। নদীর নিচে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮০ মিটার ব্যাসের দুটি টিউব। এর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলে টিউব দুটি থাকলেও সংযোগ পথ আছে তিনটি। এরমধ্যে একটি বিকল্প পথ হিসেবে প্রথম দুটির সঙ্গে যুক্ত থাকবে। দুই সুড়ঙ্গের মধ্যে প্রথম সংযোগ পথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ১৪ মিটার। দ্বিতীয় বা মধ্যবর্তী সংযোগ পথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৩৪ মিটার। শেষটির দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৭৪ মিটার। প্রতিটির ব্যাস গড়ে সাড়ে চার মিটার। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩৬ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। নদীর মাঝ পয়েন্টে এই গভীরতা প্রায় ১৫০ ফুট। প্রতিটি ৩৫ ফুট প্রশস্থ ও ১৬ ফুট উচ্চতার। চট্টগ্রামে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্থ থেকে শুরু হয়ে টানেলটি নদীর তলদেশ হয়ে চলে গেছে আনোয়ারার চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থানে।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
টানেল প্রকল্পে রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় করবে চীনা কোম্পানি। গত ১৮ মে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ কাজের জন্য চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে নিয়োগের প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।

নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার আশা: কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ৯২ শতাংশ শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই বাকি ৮ শতাংশের কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে কাজ করছি আমরা। সব কিছু ঠিক থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে আমরা কাজ শেষ করতে পারব। প্রকল্পের মেয়াদও আছে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত।’
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ বলেন, ‘টানেল চট্টগ্রাম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনীতিতে দারুণ অবদান রাখবে। টানেলের সড়ক একসময় এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হয়ে দাঁড়াবে। এমন মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। কিছুদিন পর সমুদ্রের পাড়ে বে-টার্মিনাল চালু হবে। সেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মযজ্ঞ হবে। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল পুরোদমে চালু হলে লাখ লাখ মানুষ সেখানে থাকবে, যার প্রভাব নগরীতে পড়বে। টানেলের অপর প্রান্তে আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড, চীনা শিল্পাঞ্চল, মহেশখালীর মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরসহ চট্টগ্রামে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো চালু হলে বাড়বে জনসমাগম। সেইসঙ্গে বাড়বে যানবাহনের চাপ। এসব কারণে নগরীকে নতুনভাবে সাজানোর কাজ চলছে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com