দেশে চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এ রোগকে বলে কনজাংটিভাইটিস। তবে এতে আক্রান্ত হলেও ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই প্রসঙ্গে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. বুলবুল চৌধুরী বলেন, চোখ ওঠার সমস্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনও ওষুধ ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যেহেতু রোগটি ছোঁয়াচে, তাই হেলাফেলা না করে আক্রান্তকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, সবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এক রকম নয়। ফলে চোখ ওঠায় কারো ক্ষেত্রে ভোগান্তি কিছুটা বেশি হতে পারে। আমাদের সমাজে চোখ ওঠা বিষয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্যে-কারো চোখ উঠলে তার দিকে তাকানো যাবে না, তাকালে তারও চোখ উঠবে। এটা কিন্তু একেবারেই ভুল ধারণা।
চোখ কেনো ওঠে? এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. মাহবুব আলম বলেন, চোখ ওঠার জন্য সাধারণত চারটি কারণকে চিহ্নিত করা যায়। অ্যালার্জি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াল কারণের পাশাপাশি ফাঙ্গাল কারণেও চোখ উঠতে পারে। তাই, এর চিকিৎসার আগে চোখ ওঠার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। মনে রাখবেন, ভাইরাল কারণে চোখ উঠলে সাধারণত এক চোখ আক্রান্ত হয়। এতে আক্রান্ত চোখ দিয়ে পানি পড়ে, জ্বালাপোড়া করে। তবে ময়লা কম আসে। এটি খুবই ছোঁয়াচে। পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়াল কারণে চোখ উঠলে চোখে ময়লা বেশি হয়। তাই চোখ উঠলে হুট করে ফার্মেসিতে গিয়ে ড্রপ কিনে আনবেন না। চোখ ওঠার কারণ না জেনে নিজের ইচ্ছে মতো চোখের ড্রপ ব্যবহার করলে চোখের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
চোখ উঠলে কী করবেন, কী করবেন না- এই বিষয়ে অধ্যাপক ডা. আবদুল কাদির বলেন, চোখ ওঠা সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে যদি এ সময় মাথা ব্যথা কিংবা দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়ার মতো কিছু উপসর্গ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুদের চোখ উঠলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
চোখ উঠলে কী করবেন আর কী করবেন না-সেই বিষয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবদুল কাদির কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। পরামর্শগুলো হচ্ছে-
ক) আক্রান্ত ব্যক্তির চশমা, রুমাল, তোয়ালে ও বালিশের কাভার গরম পানি ও ডিটারজেন্ট দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। এসব বাসার অন্য কারোর সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না।
খ) আক্রান্ত চোখে হাত দেবেন না। ভুলে চোখে হাত চলে গেলে সাথে সাথে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
গ) চোখে যাতে পানি না লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ঘ) চোখে কন্টাক্ট লেন্স পরবেন না এবং আক্রান্ত চোখে কাজল, আই লাইনার জাতীয় কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না।
ঙ) কালো সানগ্লাস ব্যবহার করতে পারেন।
চ) চোখ উঠলে, চোখে চাপ পড়ে এমন কোনো কাজ করা যাবে না। এর মধ্যে ছোট ছোট লেখা পড়া, দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহার করা যাবে না।
ছ) হালকা গরম পানিতে পাতলা, পরিষ্কার সুতি কাপড় ভিজিয়ে কয়েকবার করে চোখ পরিষ্কার করবেন। প্রতিবার পরিষ্কার শেষে সেই কপড় আবার ধুয়ে নেবেন।