ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন এই পথের যাত্রীরা। অপরূপ সে সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতেই এখন মাত্র ৪ ঘণ্টায় এই পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব হচ্ছে।
এক সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক পথে যাতায়াতে ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে আটকে থাকতে হতো। সকালে রওনা দিয়ে রাতে কিংবা রাতে রওনা দিয়ে সকালে গন্তব্যে পৌঁছা যেতো। সেই দূরত্ব এখন মাত্র ৪ ঘণ্টায়ই পাড়ি দেয়া যাচ্ছে। ব্যক্তিগত গাড়িতে চট্টগ্রাম থেকে সকালে রওনা দিয়ে ঢাকায় কাজ সেরে আবার বিকেলে ফিরে আসা যাচ্ছে। একই সাথে সড়ক বিভাজক জুড়ে সজ্জিত সবুজ আর নানা রঙের ফুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে সবাইকে।সে অভিজ্ঞতার কথাই বর্ণনা করলেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কে সামি আহাম্মেদ।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় আমরা চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়েছিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। মাত্র ৪ ঘণ্টায় ঢাকার যাত্রাবাড়ি পৌঁছে যাই। সাড়ে ১১টায় গুলশান। ঢাকায় প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আবার রাত ৮টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে রাত ১২টায় নিরাপদে বাসায় ফিরতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, ঢাকার কর্মঘন্টা বাদ দিলে ঢাকা-চট্টগ্রামের ২৪৫ কিলোমিটার পথ আসা-যাওয়ায় সময় লেগেছে মাত্র সাড়ে ৮ ঘণ্টা। এর মধ্যে একাধিকবার যাত্রা-বিরতি খাওয়া দাওয়া হয়েছে। তারপরও সকালে চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়ে ঢাকায় কাজ সেরে আবার রাত ১২টার মধ্যেই ফেরা সম্ভব হয়েছে। এর কারণ ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে। কে সামি আহাম্মেদ বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রাপথে আমাদের কোথাও এক মিনিটও জ্যামে আটকে থাকতে হয়নি। খাওয়া দাওয়া বা জ্বালানি নেয়ার প্রয়োজন ছাড়া গাড়ি কোথাও থামাতে হয়নি। আর সীতাকুন্ডের পর থেকেই ৪ লেন মহাসড়কের আইল্যান্ডে অপরূপ ফুলের বাগান মুগ্ধ করার মতো একটা জার্নি উপহার দিয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারলেনের প্রকল্পে দায়িত্বপালনকারী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম সারোয়ার জানান, চট্টগ্রাম সিটি গেইট থেকে মহাসড়কের ১৪৩ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির ৫৪ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে হৈমন্তী, কুর্চি, টগর, রাধাচূড়া, কাঞ্চন, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, বকুল, পলাশ, করবী, ক্যাসিয়া ও জারুল। এইগুলোর উচ্চতা ২ মিটার থেকে ৫ মিটার। গাছগুলোতে এখন নানা রঙের ফুলের সমারোহ।
এ ছাড়া সড়ক স্লোপে জলপাই, অর্জুন, কাঁঠাল, মেহগনি, শিশু, আকাশমনি, চালতা, নিম, একাশিয়া, হরিতকিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৪২ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। মহাসড়কের মিরসরাই থেকে শুরু করে কুমিল্লার ১০৫ কিলোমিটার মহাসড়কের দাউদকান্দি, চান্দিনা ও বুড়িচং এবং চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন অংশে বেশি ফুল দেখা যায়। যারা দিনের বেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে আসা যাওয়া করেন, তারা সড়কের এই সৌন্দর্য উপভোগ করেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন যাত্রীবাহী চলাচলকারী হানিফ পরিবহনের এসি বাস চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা সাড়ে ৪ ঘণ্টা থেকে ৫ ঘণ্টায় যাতায়াত করতে পারি। এক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হতো এখন তেমন কোন দুর্ভোগ নেই। চট্টগ্রাম সিটি গেইট থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত ২৪০ কিলোমিটার সড়ক এক নাগাড়ে গাড়ি চালানো যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম প্রতি সপ্তাহে যাতায়াতকারী শাহাদাত চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম থেকে বিমানে ঢাকা গেলেও শহর থেকে বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া মিলিয়ে ৩ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। সেই ক্ষেত্রে সড়ক পথেই ৪ ঘণ্টায় যাতায়াত করা সম্ভব এখন। আর ফুলে ফুলে শোভিত মহাসড়কটি এখন মুগ্ধ করছে আমাদের।- রাইজিংবিডি.কম