বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারীতে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। সার্কভুক্ত আটটি দেশ এই ভাইরাসের কবলে পড়েছে অনেক আগেই। দেশগুলোতে মার্চ থেকে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। দীর্ঘ ছয় বছর পর কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে সার্ক দেশগুলোতে একটি সমন্বিত কর্মকৌশল ঠিক করতে ১৫ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বাকি সাত দেশের প্রধানমন্ত্রীদের সাথে ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়াও দেশগুলোতে দফায় দফায় লকডাউন দেয়া সত্ত্বেও হু হু করে বেড়ে চলেছে করোনা রোগী।
শুক্রবার পর্যন্ত সার্কভুক্ত আটটি দেশের মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭২২ জন ও মারা গেছে এক লাখ ৬১ হাজার ৯৮৮ জন।
আর আটটি দেশের মধ্যে ভারত হলো আক্রান্তের সংখ্যা শীর্ষ দেশ। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৭ ও মারা গেছে ৬৮ হাজার ৫৬৯ জন। তবে দেশটিতে মোট সুস্থতার সংখ্যা তিন লাখ ৩৭ হাজার ১৫১ জন। সারাবিশ্বে আক্রান্তের তালিকায় ভারত এখন তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
মহামারীর শুরুর দিকে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যায় ভারত পাকিস্তান পাশাপাশি অবস্থান করলেও এখন পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে আক্রান্তের তালিকায় উপরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট আক্রান্ত তিন লাখ ১৯ হাজার ৬৮৬ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে চার হাজার ৩৮৩ জন আর সুস্থ হয়েছে দুই লাখের বেশি মানুষ।
আর পাকিস্তানে মোট আক্রান্ত দুই লাখ ৯৭ হাজার ৫১২ জন। শুক্রবার নতুন সাতজনের মৃত্যুসহ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছয় হাজার ৩৩৫ জন। তবে সুস্থতার সংখ্যায় পাকিস্তান এগিয়ে রয়েছে। আক্রান্তে লাখের কোঠা এখনো ছোঁয়নি সার্কভুক্ত বাকি দেশগুলোতে। নেপালে মোট আক্রান্ত ৪২ হাজার ৮৭৭ আর মৃত্যু ২৫৭ জন। আফগানিস্তানে আক্রান্ত ৩৮ হাজার ২৮৮ ও মৃত্যু এক হাজার ৪০৯, শ্রীলঙ্কায় আক্রান্ত তিন হাজার ১১১ ও মৃত্যু ১২ জন, মালদ্বীপে আক্রান্ত আট হাজার ২৮১ ও মৃত্যু মাত্র ২৯ জন। এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থায় থাকা একমাত্র দেশ হলো ভূটান। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ২২৭ এখনো কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি বলেই তাদের দাবি। সূত্রঃ ওয়ার্ল্ডোমিটার
করোনায় বিশ্বে ৭ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু
বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র মেক্সিকোতেই মারা গেছে ১ হাজার ৩শ’র বেশি স্বাস্থ্যকর্মী। অন্য দেশের তুলনায় এই সংখ্যা অনেক বেশি। সম্প্রতি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে জানানো হয়েছে, অন্যান্য দেশের তুলনায় মেক্সিকোতে বেশি স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
অ্যামনেস্টির অর্থনীতি এবং সামাজিক বিচার বিভাগের প্রধান স্টিভ ককবার্ন বলেন, নিজেদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ থাকার অধিকার রয়েছে প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মীর। তিনি আরও বলেন, এতো স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো ঘটনা নয়। তারা করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে এর চরম মূল্য দিচ্ছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। তবে এতগুলো মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও বিভিন্ন দেশে চরম শঙ্কটে দিন কাটাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বিশ্বের করে মেক্সিকো, ব্রাজিল এবং যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতে দিন দিন সংক্রমণ বাড়ছে। ফলে বিভিন্ন রাজ্যে এখনই জরুরি পদক্ষপ নেওয়া উচিত। নাহলে সংক্রমণের গতি কোনোভাবেই ঠেকানো সম্ভব হবে না। এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই আক্রান্ত ও মৃত্যু সবচেয়ে বেশি। সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের ধারে-কাছে নেই কোনো দেশ। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতেই করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে যুক্তরাজ্যে ৬৪৯ জন, ব্রাজিলে ৬৩৪ জন, রাশিয়ায় ৬৩১ জন এবং ভারতে মারা গেছে ৫৭৩ জন।