চুয়াডাঙ্গা জেলার একমাত্র লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন দর্শনা আকন্দবাড়ীয়া বাউল পরিষদের শিল্পী কলাকুশলী ও শুভানুধায়ীদের সাথে গত রোববার জার্মানির হেনওভার ইউনিভার্সিটির প্রামাণ্য চিত্র গ্রাহকের একটি দল মত বিনিময় ও বাউল শিল্পীদের নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র ডকুমেন্টারি রেকর্ড করেছেন। জার্মানি হেনওভার ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট অপ ডকুমেন্টারি ডাইরেক্টর বেটিনা কারচেইন মত বিনিময় করতে গিয়ে বলেন বাংলাদেশের বাউল তত্ত¡, বাউল ভাব, বাউল দর্শন ও বাউলদের সমস্যা এবং তাদের জীবনধারা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ও নানাবিধ জানতে আমার বহু দিনের আগ্রহ, এ জন্যই আমি সুদূর জার্মানী থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছি। বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙা অঞ্চলের বাউল গান বাউল মত বাউল তত্ত¡ বাউল দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতা আমাকে সর্বত্র তাড়িত করেছে। অবশেষে সে অঞ্চলেই কিছু বাউল ভাবাপন্ন মানুষের দর্শন তারপর তাদের সাথে কথোপকথন আলাপ চারিতা মতবিনিময় ও সাক্ষাত। ঐদিন চুয়াডাঙা জেলা ও দর্শনা থানার অধীন লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন আকন্দবাড়ীয়া বাউল পরিষদের শিল্পীদের নিয়ে কাজ শুরু করি। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে বাউল পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের লোকসংগীত শিল্পী ধীরু বাউলকে নিয়ে প্রায় পৌনে দুই ঘন্টার একটি ডকুমেন্টারি প্রামাণ্য চিত্র রেকর্ড করা হয়।যেখানে সব না হলেও বাউলগান বাউল ভাব বিচ্ছেদ, অন্য গানের পাশাপাশি কেন বাউল গানে আসা , কেন ভাল লাগা, বাউল দর্শন ও আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে কিছু উত্তর পাওয়া যায় । এরপর লালন ও বাউল ভাব গানের আসর। ধীরুবাউলের পাশাপাশি তার ছোট ছেলে পর পর লালন ও শাহ আব্দুল করিমের দুটি গান পরিবেশন করেন। ঐদিন সন্ধ্যার ঘন্টা খানেক আগে শুরু হয় বাউল ও লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন বাউল পরিষদের শিল্পীদের পরিবেশনায় বাউল ও লালন গান, ভাব গান জারীগান ,লাঠি খেলা পরিবেশন করা হয়। ৮২ বছর বয়সি ওস্তাদ আমির হোসেন, ৬৫বছর বয়সি জারি গায়ক রাহাতালি মিয়ার নাছ দেখে বিদেশি মেহমান খুবই প্রশংসা করেন। এ ছাড়া পিন্টু ফকির, সাইদুর রহমান, দুখি শাহ ,সমীর ,মতিয়ার পায়ে নেপুর পরে নেচে নেচে ঘুরে ঘুরে জারি গান পরিবেশন করেন ।বাংলার ঐতিহ্যবাহি বাংলা কাঠি ঢোল বাজিয়ে অনুষ্ঠান স্হল মাত করেন মমীন ঢুলি। বাশিতে ছিলেন মমিনুর রহমান ।মন্দিরায় সাইদুর ও কাশি বাজায় চান্দু শাহ। বাংলা ঢোল ,বাশির সুর , মন্দিরা আর কাশির তালেতালে উৎসুক জনতার করতালী আর উৎসাহের আওয়াজে বিমোহিত হন জার্মান মেহমান। এ সময় ঢাকা নারায়ণগঞ্জের কৃতি সন্তান ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকার ও প্রজোযক খালেদ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যার পর বিদেশী মানুষটির বিদায়ের সময় গ্রামীন জনপদের সহজ মানুষদের সাথে কর মর্দন, মেয়েদের সাথে কুলাকুলি করে ভাল বাসার অনুভূতি রেখে যান। বাংলা বলতে না পারলেও কিছু সময়ের জন্য যেন হয়ে যান বাঙালিয়ানার মত গ্রাম্য এক চির চেনা নারী। সকল কাজ শেষে মঙ্গলবার ঢাকার উদ্দেশ্যে দর্শনা ত্যাগ করেন ও ৮ সেপ্টেম্বর সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে জার্মানীর উদ্দেশ্য ঢাকা ছাড়বেন বলে তিনি জানিয়েছেন। উলেখ গত ২০০৭ সালে ঢাকা পলি বাউল সমাজ উন্নয়ন সংস্থা ও জার্মান দূতাবাসের আয়োজনে লালন ও বাউল শিল্পী বাছাই প্রতি যোগীতাই ধীরু বাউল সারা দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।তার পর থেকেই বাউল পরিষদ গঠন করে “গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যে সন্ধ্যানে “শোগান নিয়ে বাউল ও লোকজ সংস্কৃতির সম্মৃদ্ধ ভান্ডারকে প্রচার প্রসার করতে দেশ – বিদেশে অবিরাম কাজ করে চলেছেন ।দেশ ব্যাপী সংগঠনের বেশ সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।