প্রিয় নবী (সা.) একবার সাহাবাদের লক্ষ করে বলেছেন, যার মাঝে চারটি গুণ থাকবে, তার আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই। দুনিয়াতে সে যদি কোনো কিছু না-ও পায়, তবু তার টেনশনের কিছু নেই। কারণ পরকালে তার জন্য রয়েছে অনাবিল সুখ ও শান্তি। ক্ষণিকের দুনিয়ায় ক্ষণস্থায়ী কিছু অসুবিধা হলেও আল্লাহ তাআলা তার জন্য রেখেছেন চির সুখ। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমার মধ্যে চারটি বস্তু বিদ্যমান থাকে, তখন দুনিয়ার যা কিছুই তোমার থেকে চলে যায় তাতে তোমার কোনো ক্ষতি নেই। আমানত রক্ষা করা, সত্য কথা বলা, উত্তম চরিত্র হওয়া এবং খানা-পিনাতে সতর্কতা অবলম্বন করা। (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, হাদিস : ৩/১৬)
সত্য কথা বলা: বিভিন্ন হাদিসে এসেছে, সত্য বলার ব্যাপারে নানাভাবে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কারণ সত্য মানুষকে সৎপথে পরিচালিত করে জান্নাতে নিয়ে যায়। অন্য এক হাদিসে এসেছে, মুমিন কখনো মিথ্যা কথা বলতে পারে না। সাফওয়ান ইবনে সুলাইম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কেউ জিজ্ঞেস করল, মুমিন সাহসহীন বা ভীরু হতে পারে কি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হ্যাঁ। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, মুমিন কৃপণ হতে পারে কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, মুমিন মিথ্যাবাদী হতে পারে কি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, না। (মুআত্তা ইমাম মালিক, হাদিস : ১৮০৩)
আমানত রক্ষা করা: মানুষের আমানত রক্ষা করা। আমানতের অধ্যায় অনেক বিস্তৃত। আমরা অনেকেই আমানত বলতে বুঝি, একজন আরেকজনের কাছে পয়সা বা অন্য কোনো বস্তু আমানত রাখা। অথচ আমানত অনেক ব্যাপক। আমাদের কাছে দুই ধরনের আমানত আছে। আল্লাহর আমানত। তথা যথাসময়ে নামাজ আদায় করা। আল্লাহপ্রদত্ত সম্পদের যথাযথ জাকাত আদায় করা। হজ-ওমরাহসহ আরো যত ইবাদত রয়েছে এগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আমানত। মানুষের আমানত হচ্ছে, কারো সঙ্গে কোনো ধরনের প্রতারণা না করা। কেউ আমার কাছেই সম্পদ আমানত রাখলে তাতে কোনো ধরনের হেরফের না করা। আমার কাছে কেউ কোনো পরামর্শ চাইলে সঠিকভাবে পরামর্শ প্রদান করা। আমি কোনো বিচারিক দায়িত্বে থাকলে সঠিকভাবে বিচারকার্য সম্পাদন করা ইত্যাদি। সে জন্য আমার ওপর আরোপিত তো যত ধরনের আমানত আছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ আদায় করা।
উত্তম চরিত্র: উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে মানুষের প্রিয় পাত্র বানিয়ে দেবেন এবং পরকালেও রয়েছে তার জন্য অনাবিল সুখ ও শান্তি। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, সচ্চরিত্র ও সদাচারই দাঁড়িপাল্লার মধ্যে সবচেয়ে ভারী হবে। সচ্চরিত্রবান ও সদাচারী ব্যক্তি তার সদাচার ও চারিত্রিক মাধুর্য দ্বারা অবশ্যই রোজাদার ও নামাজির পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২০০৩)
পানাহারে সতর্কতা: মানুষ তার খাদ্যের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। তাই সেই হালাল ছাড়া কোনো কিছুই উপার্জন করবে না। যদিও তা পরিমাণে কম হয় এবং নিজের দেহে কোনো হারাম জিনিস প্রবেশ করাবে না। কারণ যখন কেউ হারাম ভক্ষণ করে, তখন তার গোশত, রক্ত ইত্যাদি হারাম দ্বারাই বেড়ে ওঠে। হারাম খাদ্য গ্রহণকারী যদি কাবা শরিফেও আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে কেঁদে কেঁদে দোয়া করে তবু আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন না।