শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ০১:৪১ অপরাহ্ন

৭ নভেম্বর ইসলামী মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দিন : নুরুল ইসলাম বুলবুল

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০২২

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে আধিপত্যবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সিপাহী জনতার সফল বিপ্লব সংঘটিত হয়। ওই দিন নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার-এর ধ্বনিতে ইসলামী মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একদলীয় শাসনের পরিবর্তে এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।
গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ আজ গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত। দেশে আজ আইনের শাসন ভুলুণ্ঠিত, গণতন্ত্র নির্বাসিত, মানবাধিকার বিপন্ন, ভোট ও ভাতের ন্যায্য অধিকার থেকে জনগণ বি ত। এখানে গুম, খুন ও ধর্ষণ মহামারি আকারে বিস্তার লাভ করেছে। চারদিকে অসহায় ও বিপন্ন মানুষের হাহাকার। দেশের মানুষ আজ মুক্তির প্রত্যাশায় প্রহর গুণছে। নূরুল ইসলাম বুলবুল আরো বলেন, গণতন্ত্র ও দেশের মানুষকে মুক্ত করতে ইসলামি আদর্শের ভিত্তিতে প্রয়োজন আরেকটি বিপ্লবের, যা এই জাতির ভবিষ্যত রচনা করবে। ৭ নভেম্বর একনায়কতন্ত্র, শোষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে যেভাবে এ দেশের মানুষ সম্মিলিতভাবে গর্জে উঠেছিল, একইভাবে বর্তমান সময়েও সকল আধিপত্যবাদী শক্তির মোকাবেলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য আব্দুস সাত্তার সুমন, আশরাফুল আলম ইমন প্রমুখ। নূরুল ইসলাম বুলবুল আরো বলেন, ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরে সিপাহী-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে। অথচ আজ বাংলাদেশ ওই দিনের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতে আছে। বর্তমান ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার আধিপত্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বারবার নিজ দেশের স্বাধীনতাকে ভুলুণ্ঠিত করছে। ক্ষমতার অপব্যহার করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সঙ্কুচিত করে ফেলছে, বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ জনগণের সকল মৌলিক অধিকার হরণ করছে। এই সঙ্কটময় অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প নেই। এ দেশের জনগণ ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে চায়।
বুলবুল আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশকে নেতৃত্ব শূন্য করার উদ্দেশে প্রথম টার্গেট করে জামায়াতে ইসলামীর সৎ, দক্ষ ও যোগ্য জাতীয় নেতাদেরকে। তাদেরকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারান্তরীন ও হত্যা করে। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী অসাংবিধানিক পন্থায় আজও সারাদেশে জোরপূর্বক জামায়াতের সকল অফিস বন্ধ করে রেখেছে।
তিনি আরো বলেন, আজ পুলিশ বাহিনীকে দলীয় ক্যাডার বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ সঙ্কট, গ্যাস, পানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেলের দাম বৃদ্ধিতে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের সকল অধিকার আদায়ে অনবদ্য ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের চেতনা মূলত আধিপত্যবাদী ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে এক ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের চেতনা। তাই বিপ্লব ও সংহতি দিবসের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও জুলুমতন্ত্রের মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালানোর উদাত্ত আহ্বান করছি। আব্দুস সবুর ফকির বলেন, দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ পেয়েছিলাম। স্বাধীনতার মূল চেতনা ছিল মুক্তচিন্তার পরিবেশ নিশ্চিত করা, জনগণের ন্যায্য পাওনা বুঝে পাওয়া। তবে আমরা সন্দেহ করেছিলাম, বাংলাদেশ একটি দেশের গোলামি থেকে নতুন আরো একটি দেশের গোলামে পরিণত হতে যাচ্ছে। এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয় স্বাধীনতা উত্তর সময়ে, যখন স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়, দেশের জাতীয় সব সম্পদ চুরি ও লুটপাট করা হয়। স্বাধীন দেশে সর্বপ্রথম রাজবন্দি হিসেবে মেজর এম এ জলিলকে কারাবন্দি করা হয়।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, সকল দিক বিবেচনায় ১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বর বিপ্লব-সংহতির যে পটভূমি তৈরি হয়েছিল, আজ তার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি বিদ্যমান। মানুষ যখন বাধ্য হয়, তখন কারো খোঁজ করে না। বরং নিজের প্রয়োজনে নিজেই সামনে দাঁড়িয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে বলতে চাই, চোখের পর্দা সরিয়ে দেখুন, জনগণ নিজেদের মুক্তির জন্য জেগে উঠেছে। দ্রুত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। অন্যথায় করুণ পরিণতি বরণ করতে হবে। ফ্যাসিস্ট অগণতান্ত্রিক পন্থায় বেশিদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল। আধিপত্যবাদী অপশক্তি ও তাদের দোসররা আমাদের স্বাধীকার হরণের যে নীলনকশা প্রণয়ন করেছিল, তা সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিহত করা হয়েছিল। আজও সেই একইরকম পরিস্থিতি দৃশ্যমান। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ সর্বত্রই ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ ইসলামের প্রকৃত আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে সবাইকে জুলুমতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান সেলিম উদ্দিনের: জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা এবং জুলুমতন্ত্র, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মোহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য আব্দুল মান্নান ও আব্দুল হামিদ প্রমুখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, মূলত ৭ নভেম্বর স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার অঙ্গীকার ও প্রত্যয় গ্রহণের ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশপ্রেমী ও ইসলামপ্রিয় সিপাহী-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার‘ ধ্বনিতে রাজপথ প্রকম্পিত ও মুখরিত করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছিল। তাই জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্ষুধা-দারিদ্র এবং অপশাসন-দুঃশাসন মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। অন্যথায় আমাদের জাতিসত্তাই অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র, মানবিক মূল্যবোধ, সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা হলেও বাকশালী শাসকচক্র দুবৃত্তায়ন ও মানুষের অধিকার হরণকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বানিয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকার দেশে একদলীয় শাসন, বাকস্বাধীনতা হরণ এবং দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছিল। যার অনিবার্য পরিণতি ছিল ‘৭৪-এর দুর্ভিক্ষ। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী গোটা দেশকেই কার্যত লঙ্গরখানায় পরিণত করেছিল। এমতাবস্থায় অধিকার বঞ্চিত ও বিক্ষুব্ধ জনতা সরকারের অপশাসন-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। দেশ ও জাতির এক সঙ্কটময় সন্ধিক্ষণে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাসী-জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে একটি সফল ও সার্থক বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। তাই দেশকে অগণতান্ত্রিক ও অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে হলে মহান জাতীয় বিপ্লবের চেতনায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতিস্বত্ত্বাবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না বলেই জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা ২০১৮ সালের নৈশভোটের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে দেশকে রীতিমত মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তারা আগামী নির্বাচনে একই কায়দায় আবারো ক্ষমতা কুক্ষিগত করার দিবাস্বপ্নে বিভোর। তারা চলমান গণআন্দোলনকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করার জন্য জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা শুরু করেছে। কিন্তু তাদের স্বপ্নবিলাস সচেতন জনতা কখনোই সফল ও স্বার্থক হতে দেবে না। তিনি সরকারকে ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে কেয়ারকেটার সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরাপদ প্রস্থানের আহ্বান জানান। অন্যথায় জনগণ অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতা থেকে লজ্জাজনকভাবে বিদায় করবে। -প্রেসবিজ্ঞপ্তি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com