কৃষি জমিতে অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন ও বাড়ি নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশনের একমাত্র রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৩ বছর যাবত কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রাম। চরম বিপাকে পড়েছে শতাধিক কৃষক ও পুরো গ্রামবাসী। তাদের ৩ ফসলী ও ৪ ফসলী প্রায় ২শ বিঘা জমিতে কোন আবাদ না হওয়ায় অর্ধাহারে-অনাহারে কাটছে গ্রামের কৃষি নির্ভর কৃষকদের। এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে গত ৩ বছর যাবত সমাধানের আবেদন করেও কোন প্রকার ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের এমএমজেবি পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ প‚র্ব দিকে অবস্থিত প্রায় ২শ বিঘার ফসলী জমির মাঠের তিন দিকে রয়েছে উঁচু জমি। শুধুমাত্র পশ্চিম দিকে ছিলো প্রায় ৫০ বছরের পুরনো পানি নিষ্কাশনের জন্য একমাত্র রাস্তা। হঠাৎ করে গত ২০১৮ সালে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র রাস্তা ও ধানী ফসলি জমি ক্রয় করে সরকারের বিনা অনুমতিতে জনৈক মৃত গোলক সরদারের ছেলে প্রভাবশালী সিরাজুল ইসলাম স্থানীয়দের বাধা উপেক্ষা করে জোর পূর্বক পুকুর খনন ও বাড়ি নির্মাণ করেন। পানি নিষ্কাশনের বিকল্প পথ তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তিতে সিরাজুল তা বাস্তবায়ন না করার কারণে মাঠে পানি জমে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম জলাবদ্ধতার। এতে করে পুরো গ্রাম জলাবদ্ধতায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে। পানি ঢুকে পড়ে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে। যার কারণে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে থাকে শিশুসহ বয়স্ক মানুষেরা। বহুবার স্থানীয় ভাবে বিষয়টি সমাধান না হওয়ার কারণে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্থানীয় প্রায় ১শ জন কৃষক একাধিকবার লিখিত আবেদন করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউই বিষয়টি স্থায়ী ভাবে সমাধান করতে পারেনি। উপার্জনের একমাত্র জমিতে কোন চাষাবাদ করতে না পারায় চরম বিপাকের মধ্যে বসবাস করছে কৃষকসহ পুরো গ্রামবাসীরা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রেজাউল করিম, আক্তার হামিদ, মোস্তাক আহমেদ, আবুবকর, সাকলাইন, মোকাদ্দেম, শাহীন, জাফরসহ কমপক্ষে ৫০জন ভুক্তভোগী কৃষক জানান, বর্তমানে তাদের প্রায় ২শত বিঘা জমির ফসল পানির নিচে। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে এই এলাকা। মাটির ঊর্বরতার কারণে ধান-পাট, রসুনসহ মসলাজাতীয় ফসল ফলে। অপেক্ষাকৃত কম সেচ সার ব্যবহার করে ভালো ফসল ফলে। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের একমাত্র রাস্তায় পুকুর খনন অভিশাপ হয়ে উঠেছে কৃষি ও কৃষকদের জন্য। বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় মাঠের পর মাঠ কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকায় মরে যাচ্ছে এসব ফসল। এই বিষয়ে অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম বাড়িতে না থাকায় ও মুঠোফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয় বর্ষাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুজ্জোহা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জলাবদ্ধতার কারণে একপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সাময়িক ভাবে একটি সমাধানের চেষ্টা করেছি। তবে এ বিষয়টির দ্রুত এবং স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রসাশনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন বিষয়টি সমাধানের জন্য উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ৩/৪ফসলী জমি বর্তমানে ১ফসলী জমিতে পরিণত হয়েছে। যার কারণে অনেক গরীব কৃষক জমিতে ফসল ফলাতে না পারায় পথে বসেছে। তাই দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থায়ী পথ সৃষ্টি করে কৃষকসহ গ্রামবাসীকে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার দাবী স্থানীয়দের।