জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে পরিবহণ ও শ্রমিকদের বাড়তি খরচ যোগ হচ্ছে সবজির দামে * চাষি থেকে ভোক্তা পর্যন্ত হাতবদল হয়ে দাম বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ ঝিনাইদহ বাজারে উঠতে শুরু করেছে আগাম শীতকালীন সবজি। গত বছরের তুলনায় এবার পাইকারি বাজারে সবজির দাম বেশি। কিন্তু সেই দামেও উৎপাদন খরচ পোষাচ্ছে না। এতে অধিকাংশ চাষি লাভের মুখ দেখতে পারবেন কিনা, সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে। চাষি থেকে ভোক্তার খাবার টেবিল পর্যন্ত সবজি পৌঁছাতে কয়েক দফায় হাত বদল হচ্ছে। এতেই দাম বেড়ে যাচ্ছে কয়েক গুণ। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হলেও ঠকছেন চাষি ও ভোক্তা। তবে ব্যাপারি ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পালটে গেছে হিসাব-নিকাশ। পরিবহণ ও শ্রমিকদের বাড়তি খরচ যোগ হচ্ছে সবজির দামে। ফলে ভোক্তাকে বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে সবজি। দেশের বৃহত্তম সবজির মোকাম ঝিনাইদহে সাধারণ কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগাম শীতকালীন সবজিতে ভরপুর বাজার। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠেছে। ভোর থেকে কৃষকরা তাদের সবজি নিয়ে হাজির হয়েছেন মোকামে। চলছে বেচাকেনা। এদিন বেগুন ৪৫-৫০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৫৫-৬০ টাকা, শিম ৬০-৬৫ টাকা কেজি, পাতা কপি ২০ টাকা, মুলা ১৫-২০ টাকা কেজি, মরিচ ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই সবজি কয়েক হাত ঘুরে ঝিনাইদহ শহরে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজিতে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভোক্তা চড়া দামে কিনছেন এসব সবজি। মোকামে সবজি বিক্রি করতে আসা চাষি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কৃষকের বাঁচার উপায় নেই। আবাদের খরচ বেড়েই চলেছে। তেল, সার, কীটনাশক কেনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছি। অনেক কষ্টে আবাদ করেছি। বাজারে এসে যে দাম পাচ্ছি, তাতে কোনোরকমে খরচ উঠবে। লাভের মুখ দেখতে পারব না। সদর উপজেলার বাজার গোপালপুর এলাকার চাষি বাবুল ইসলাম বলেন, সবাই চাষি মারার কল পেতে রেখেছে। যত লোকসান সব চাষির ঘাড়ে। তৈল, সার, কীটনাশকের দাম লাগাম ছাড়া। এভাবে কতদিন টিকব আমরা জানি না। অনেক কষ্টে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে এসে দাম পাচ্ছি না। কিন্তু শহরের মানুষ ঠিকই চড়া দামে কিনে খাচ্ছে। মাঝখানে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। তবে সদর উপজেলার গান্না এলাকার কৃষক মহি উদ্দিন বলছেন, তিনি ১৬ কাঠা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। তাতে খরচ হয়েছে ত্রিশ হাজার টাকার মতো। কয়েক চালানে বেগুন বিক্রি করে তার খরচ উঠে গেছে। পরবর্তীতে চালানে তার লাভের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। উপজেলার ডাকবাংলা সাধারণ কাঁচা বাজারের রাসেল আহম্মদ বলেন প্রতিদিনই এই মোকামে সবজি বেচাকেনা হয়। সপ্তাহ দুদিন সবচেয়ে বেশি সবজি উঠে হাটে। প্রতি সপ্তাহে এই হাট থেকে প্রায় দেড় হাজার টন সবজি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। এ বছর তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় যেমন কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তেমনি পাইকারি ব্যবসায়ীদেরও পরিবহণ ব্যয় দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে গিয়ে দামের হেরফের হচ্ছে।