শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৫ অপরাহ্ন

প্রয়োজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সৎ তরুণ নেতৃত্ব

অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২২

ফিজার যুদ্ধের পর মক্কায় জনজীবন বিধ্বস্ত, অর্থনীতিও পর্যুদস্ত। সামাজিক ও বিচারিক প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত অস্তিত্বহীন। খুন, রাহাজানি, লুটপাট, ব্যভিচার ও মাদক জীবনের অনুষঙ্গ। অসৎ নৈতিকতাহীন অত্যাচারীদের হাতে সমাজ ও রাষ্ট্রের শাসন কর্তৃত্ব। সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ও পরিবারগুলো সব কিছুকে ভবিতব্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে দেশান্তরী হওয়ার প্রক্রিয়ায়। তরুণরা মদ, মাদক, জুয়া এবং অন্যান্য অসামাজিক আচারে গা-ভাসিয়ে দিয়েছে। এ থেকে বের হওয়ার পথ অবরুদ্ধ। এরকম এক পরিস্থিতির ভেতর থেকে উত্তরনের চেষ্টায় কয়েকজন তরুণের সুদুর প্রসারী চিন্তা সেদিন কেবল মক্কা বা আরবকেই বদলায়নি; বদলে দিয়েছিল সমগ্র মানব সভ্যতাকে। সূচনা করেছিল নতুন চেতনার অভিযাত্রা। মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা, সামাজিক সুবিচার, দলমতবর্ণ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার,অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো এবং অত্যাচারের প্রতিবাদে প্রতিবাদী হওয়ার লক্ষ্যে মাত্র তিনজন তরুণ সৃষ্টি করেছিলেন ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি ঐতিহাসিক সংগঠন। আব্দুল্লাহ বিন জুদানের বাড়িতে মুহাম্মদ সা: বিন আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে হিলফুল ফুজুল একদিন মানব সভ্যতাকে নতুন উচ্চতা দেবে এ কথা সে দিন কেউ ভাবেনি।
সবার জন্য সুবিচার, অন্যায়ের প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ সাথে সাথে দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকারের প্রত্যয়ে এই সংগঠনটি কেবল মক্কা তথা আরবের জীবনকেই বদলে দেয়নি; সুচনা করেছিল সমগ্র মানব সভ্যতার জন্য আলোকোজ্জ্বল অভিযাত্রার। যে অভিযাত্রার আলোকোজ্জ্বল বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ হচ্ছে আজকের টঘঙ এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো আজ যে চিন্তাধারার আলোকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে- ভাবতে আশ্চর্য লাগে এর মৌলিক নীতিমালা আরবের অন্ধকার যুগে-দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কয়েকজন তরুণের চিন্তার ফসল। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, সৎ, তরুণ এবং নিবেদিত নেতৃত্ব কিভাবে সমাজ, জাতি ও আন্তর্জাতিক বলয়কে বদলে দিতে পারে-‘হিলফুল ফুজুল’-এর তরুণ নেতৃত্বই তার প্রমাণ। বর্তমানে বৈশ্বিক বলয়ে তরুণ সম্প্রদায় মোটামুটিভাবে অধঃপাতের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশের তরুণ সম্প্রদায়ও এর ব্যতিক্রম নয়! খুন, জখম, রাহাজানি, ছিনতাই, মাদকাসক্তি, দলাদলি এমন কোনো কাজ নেই, যা তারা করছে না। এসব ঠেকানোর পরিবর্তে তাদেরকে উসকে দেয়া হচ্ছে। বহুমুখী সৃষ্টিধর্মী চিন্তা ও কাজের পরিবর্তে তারা আজ বলয়বন্দী। বেকারত্বের নির্মম অভিশাপে জর্জরিত। পরিবেশটা এমন যে, তারা চাইলেও সততার কথা, সুবিচারের কথা বলতে পারছে না, ভাবতেও পারছে না। এর জন্য কাজ করা তো দূরের কথা! বইয়ের পরিবর্তে, সৃষ্টিশীল উদ্যমের পরিবর্তে তাদের হাতে শোভা পাচ্ছে লাঠি এবং অন্যান্য অস্ত্র। মুর্হূতেই তুচ্ছ কারণে খুনোখুনি। এসবে তারা বিচলিত হয় না। তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে পারিবারিক, সামাজিক দায় এবং দায়িত্ববোধের কথা। আইনি এবং বিচারিক ব্যবস্থার কথা তারা ভাবতেও পারছে না। তারা ব্যস্ত বিভিন্ন ধরনের গ্যাং তৈরি এবং ক্ষমতার আধিপত্য সৃষ্টিতে। এসব কাজে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তির নেতৃত্ব ও সহায়তা তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। এভাবে তরুণ প্রজন্ম ধীরে ধীরে অবক্ষয়ের জগতে হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ এদের পথ দেখানোর কথা জাতিকে,আলোক অভিযাত্রায় নেতৃত্ব দেয়ার কথা, সোনার বাংলা গড়ার কারিগর হওয়ার কথা। এদেরকে ফেরানোর দায়িত্ব যাদের, যাদের ঠেকানোর কথা, তারা কোন অজানা কারণে উদ্যোগহীন, নিশ্চুপ। অনেকে নিজের আখের গোছানোর লক্ষ্যে পারিবারিক স্বার্থে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে, বাড়ি বানাচ্ছে-সম্পদের পাহাড় গড়ছে। তাও বিদেশে! নিকট ভবিষ্যতে যে বৈশি^ক মহামন্দার কথা সতত উচ্চারিত হচ্ছে, যখন-দলমত নির্বিশেষে সবাইকে বিশেষ করে তরুণ সম্প্রদায়কে উজ্জীবিত করা দরকার; তখন প্রয়োজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সৎ ও মেধাসম্পন্ন তরুণ নেতৃত্ব। বৃত্তবন্দী দলীয় চিন্তায় আচ্ছন্ন নেতৃত্ব কখনোই সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না, ইতিহাসে এর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। সার্বিক জাতীয় এবং বৈশ্বিক সমাজ পরিবর্তনে ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ জীবনের প্রয়োজনে, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সৎ ও তরুণ নেতৃত্ব দরকার। যারা সূচনা করতে পারে নতুন সমাজ গঠনের আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ জীবনের। এ ক্ষেত্রে হিলফুল ফুজুলের ত্রয়ী নীতিমালার আলোকে আলোকিত তরুণ নেতৃত্বের বিকল্প নেই। লেখক : অধ্যাপক ও চক্ষুরোগ রিশেষজ্ঞ
Email- shah.b.islam@gmail.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com