কাঁঠাল, মাল্টা, পেয়ারা, লিচুর পর এবার বাণিজ্যিকভাবে চায়না-থ্রি জাতের কমলা আবাদ করে সফল হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবাসফেরত যুবক মো. আলমগীর মিয়া। প্রথমবারই অপ্রত্যাশিত ফলন হওয়ায় কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এলাকার কৃষকরা। ফলন দেখে অবাক হয়েছেন খোদ কৃষি কর্মকর্তারাও। এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বাগানের ছবি ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভিড় জমছে বাগানে। অনেকে চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আলমগীর মিয়া বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দুলালপুর গ্রামের বাসিন্দা।
দীর্ঘ দুই দশক প্রবাসে থাকার পর কয়েক বছর আগে দেশে ফেরেন। এরপর পরীক্ষামূলক ফল চাষ শুরু করেন। বিভিন্ন ফল চাষে সফল হওয়ার পর এবার প্রথম বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ করে সফল হন। এতে নতুন আশার আলো দেখছেন গ্রামের বেকার যুবকরা। তারা কমলা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে অনাবাদি জমিগুলোতে কমলার আবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ বলছে, আলমগীরের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে কমলা চাষে এলাকার অন্য চাষিদের উৎসাহিত করা হবে। এ নিয়ে কাজ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। সরেজমিনে বাগানে দেখা গেছে, গাছে-গাছে ঝুলছে পাকা রসালো কমলা। খেতে বেশ সুস্বাদু। এরই মধ্যে পাকা কমলা বিক্রি শুরু করেছেন তিনি।
কীভাবে কমলার চাষ শুরু করেছেন জানতে চাইলে আলমগীর মিয়া বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার কমলা আবাদের একটি ভিডিও ইউটিউবে দেখে ওই চাষির সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে ওই চাষির বাগান পরিদর্শন করে চাষাবাদের পরামর্শ নিই। এরপর সেখান থেকে চায়না থ্রি-জাতের কমলার চারা নিয়ে আসি।’
তিনি বলেন, ‘চারা নিয়ে আসার পর চাচার কাছ থেকে ৬৫ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে কমলার আবাদ শুরু করি। বাগানে ১৮৫টি চারা রোপণ করেছি। দুই বছরের মাথায় চোখ ধাঁধানো ফলন দেখে অবাক হয়ে যাই। এখন পর্যন্ত ১৭০ টাকা কেজি দরে এক হাজার ২০০ কেজি কমলা বিক্রি করেছি। কমলা বিক্রি করতে আমাকে বাজারে নিয়ে যেতে হয়নি। দর্শনার্থীরা বাগান দেখতে এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’
আলমগীর মিয়া আরও বলেন, ‘বাগান করার সময় গ্রামের অনেকে বলেছিল, এলাকায় কমলার ফলন হবে না। আমি মানুষের কথায় কান না দিয়ে নিজের মতো করে চেষ্টা করেছি। চেষ্টার ফলে সফল হয়েছি। সফল হওয়ায় আমি অনেক খুশি। আশা করছি, খরচ বাদ দিয়ে এই বাগান থেকে অন্তত পাঁচ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবো। চাইলে যে কেউ পরামর্শ নিয়ে কমলা চাষ করতে পারেন।’
আলমগীরের সফলতা দেখে আশপাশের চাষিরা বলছেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে তারাও অনাবাদি জমিতে কমলা চাষ করবেন। একই এলাকার রাজু মোল্লা বলেন, ‘এখন বুঝতে পেরেছি এলাকায় কমলা চাষ লাভজনক এবং ফলন খুব ভালো হয়। যদি সরকার সহযোগিতা করে তাহলে আমরা আশপাশের খালি জমিগুলোতে কমলা চাষ করবো।’
স্থানীয় কৃষক মুসা মিয়া বলেন, ‘আলমগীরের কমলার চাষ দেখে মনে হলো এই এলাকা কমলা চাষের জন্য উপযোগী। সরকার যদি সহযোগিতা করে তাহলে বৃহৎ পরিসরে আমরা কমলার চাষ করবো। আমি ওই কমলার বাগান ঘুরে দেখেছি। দেখে খুব ভালো লাগলো। কমলার চাষ করতে চাই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে বাগানে ঘুরতে আসা কাজী নূরজাহান বলেন, ‘শহরে কোথাও খোলামেলা জায়গা নেই। তাই ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই বাগানে ঘুরতে এসেছি। এখানকার পরিবেশ যেমন সুন্দর সেইসঙ্গে গাছে গাছে ঝুলে থাকা পাকা কমলার চোখ জুড়ানো দৃশ্য মন ভালো করে দেয়।’
আলমগীরের কমলা বাগানের ফলন দেখে অবাক হয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। বিজয়নগর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এর আগে আমরা একাধিকবার পরীক্ষামূলকভাবে এখানে কমলার চাষ করেও সুফল পাইনি। তবে সফল চাষি আলমগীরের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এবার এই অঞ্চলে কমলার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবো। তার বাগানে ফলন অপ্রত্যাশিত। সরকারিভাবে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এই অঞ্চলে কমলার আবাদ বৃদ্ধির জন্য প্রদর্শনী করবো আমরা।’-বাংলাট্রিবিউন