বায়তুশ শরফ মজলিসুল ওলামা বাংলাদেশে এর উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। রাহবারে বায়তুশ শরফ আল্লামা শায়খ আবদুল হাই নদভীর সভাপতিত্বে ইসলামী গবেষণা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত সভায় মূখ্য আলোচক হিসাবে ‘আলেম সমাজের ঐক্য ও তাসাউফের হাকীকত’ শীর্ষক বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের প্রফেসর ড. আ.ক.ম আবদুল কাদের। মুখ্য আলোচক তাঁর বক্তব্যে কুরআন-হাদীসের আলোকে আলেম সমাজের মর্যাদা, ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব, আলিমগণের পারস্পরিক অনৈক্যের কারণ, ঐক্যের অনুষঙ্গ, ভিন্নমতের আলিমগণের সাথে আচরণধিধি, তাসাউউফের হাকীকতের বিশ্লেষণ করে বলেন, আলেমগণ সত্যের বাহক এবং মানবগোষ্ঠীর পথপ্রদর্শক। ইসলাম প্রতিষ্ঠার অগ্রবর্তী বাহিনীর অপরিহার্য অংশ হচ্ছে আলেমগণ। তাদেরকে উপেক্ষা করে সমাজের অন্য কোন গোষ্ঠীর পক্ষে বাংলাদেশের বিবদমান পরিস্থিতিতে ইসলামের পক্ষে গণজাগরণ সৃষ্টি করা অসম্ভব। তিনি বলেন, আলেমগণ বিভিন্ন প্রকার দ্বীনী খিদমতে নিয়োজিত থাকলেও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-বিসম্বাদ এবং দুর্বল মানসিকতার কারণে তাদের মধ্যে দেশ ও জাতির জন্য বড় কিছু করার সংকল্প সৃষ্টি হয়না। আলেমরা অমুসলিমদের সাথে বসতে পারে, কিন্তু পরস্পর বসতে পারেন না। যতদিন পর্যন্ত এই মানসিকতার পরিবর্তন হবেনা ততদিন পর্যন্ত আলেম সমাজের পক্ষে দেশ-জাতি ও মুসলিম মিল্লাতের জন্য কাঙ্খিত কিছু করা সম্ভব হবেনা। তিনি বলেন, মতপার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু ইসলামের মৌলিক বিষয়ে আনুগত্য ও আস্থাশীল থাকলে ক্ষুদ্র মতপার্থক্য ঐক্যের পথে বাধার প্রাচীর হতে পারে না। আলেম ওলামাদের মধ্যে মতবিরোধের ফলশ্রুতিতে ইসলামী ইজতিহাদি জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমৃদ্ধি হয়েছিল, অসংখ্য ফিকহের মাসআলা রচিত হয়েছে। আলেম-ওলামাদের কোরআন-সুন্নাহর ইলমের পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ব ও সমকালীন বিষয়ে প্রচুর জ্ঞান লাভ করে যুগ – জিজ্ঞাসার জবাব প্রদানে পারদর্শীতা অর্জন করতে হবে, তবেই সম্ভব ইসলাম বিদ্বেষী শক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। ড. আ.ক.ম আবদুল কাদের বলেন, মুসলিম দর্শনে তাসাওউফ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মুসলিম জাতির জীবনধারার অন্যান্য দিকের মত তাসাওউফ কুরআন-হাদীসের শিক্ষার উপর প্রতিষ্ঠিত। সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট ইসলামী গবেষক, লেখক, মজলিসুল ওলামা বাংলাদেশ এর সভাপতি, রাহবারে বায়তুশ শরফ আল্লামা শায়খ মোহাম্মদ আবদুল হাই নদভী (ম.জি.আ) বলেন, মতানৈক্যের মাঝে মতৈক্য প্রতিষ্ঠাই ছিল মজলিসুল ওলামা গঠনের মূল লক্ষ্য। আধ্যাত্বিকতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, আর্ত-মানবতার সেবার পাশাপাশি আলেম সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরমই ছিল বায়তুশ শরফের প্রধান রূপকার আল্লামা শাহ মুহাম্মদ আবদুল জব্বার (রাহ.)’র আমৃত্যু লালিত স্বপ্ন। এই লক্ষ্যে তিনি আশির দশকে মজলিসুল ওলামা বাংলাদেশ গঠন করেছিলেন। তিনি বলেন, আলেম সমাজের ঐক্যের ক্ষেত্রে অবশ্যই অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা এবং অন্যের কথা শোনার মতো মানসিকতা তৈরি করতে হবে। রাহবারে বায়তুশ শরফ বলেন, ইলমে তাসাউফ হল ‘আধ্যাত্মিক জ্ঞান‘ যে জ্ঞানের সাহায্যে মানুষের সৎগুণ সমূহের প্রকারভেদ এবং তা অর্জনের পন্থা ও অসৎ গুণসমূহের প্রকারভেদ এবং তা থেকে আত্মরক্ষার উপায় সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। তিনি বলেন, মুসলমানদের আধ্যাত্মিক সাধনার নিয়মনীতি ও পদ্ধতিকে তরিক্বত বলে। শরিয়ত অনুযায়ী আমল করার জন্য যেমন মাযহাব, আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য তেমনি তরিক্বত। শরিয়ত অনুযায়ী আমল করার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ করে প্রজ্ঞাবান হওয়াই তরিক্বতের উদ্দেশ্য। এ সাধনায় অগ্রসর ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভে ধন্য হয়। সে ইহ এবং পারলৌকিক জীবনে আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামত দ্বারাও সিক্ত হয়। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মজলিসুল ওলামা বাংলাদেশ এর মহাসচিব মাওলানা মামুনুর রশীদ নূরী। আলোচনা পেশ করেন অধ্যক্ষ মাওলানা আবু সালেহ মুহাম্মদ ছলিমুল্লাহ। মাওলানা মুহিউদ্দিন মাহবুবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্স-মাস্টার্স) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ(ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, অধ্যক্ষ ড. মাওলানা আবদুল কাদের নিজামী, কাজী মাওলানা শিহাব উদ্দীন, মাওলানা মুফতি আহমদুর রহমান, ড. মাওলানা মুহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ মুঈন, মাওলানা কাজী জাফর আহমদ, অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল হামিদ, সুপার মাওলানা নুরুল আলম ফারুকী, মুফতি হাফেজ মুহাম্মাদ ইসহাক, অধ্যক্ষ মাওলানা বদিউল আলম, অধ্যক্ষ মাওলানা হামেদ হাছান, ড. মাওলানা মাহবুবুর রহমান প্রমুখ। আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রফেসর ড. আ ক ম আবদুল কাদের উপস্থিত আলেম-ওলামাগণের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। উক্ত সভায় বিভিন্ন কামিল ও ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, মুহাদ্দিস, শিক্ষক ও ওলামা- মাশায়েখ উপস্থিত ছিলেন।