আবহমান গ্রাম বাংলায় সু-প্রাচীন কাল থেকে ঈদগাহ, মন্দির, বিবাহ, সুন্নতে খাতনা, কাঙ্গালী ভোজ, চেহলাম বা খোলা কোন প্রাঙ্গণে আমন্ত্রিত লোকজনদের কলাপাতায় খাবার পরিবেশন ছিলো কৃষিজীবী সমাজের চিরায়ত ঐতিহ্য। বিশেষত বাংলার এ ঐতিহ্য কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোয়ায় সবই হারিয়ে গেছে। তবে এ ব্যবস্থা এখন পুরনো হয়ে গেলেও প্রবীনরা সেই স্মৃতি মনে করে নষ্টালজিয়ায় ভোগেন। পুরনো দিনগুলোর মধুর স্মৃতি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও কৃষ্টি তামার পাত্রে রান্না করে কলাপাতায় খাওয়া সবই যেন বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্ত গ্রামীন এ ঐতিহ্য ফেরাতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের রশিবপুরা গ্রামবাসী নিয়েছে অভিনব উদ্যোগ। গ্রামের প্রবীন নুরু মাতুব্বর, ইউপি চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ মুন্সীসহ বেশ কয়েকজন প্রবাসী মিলে সম্প্রিতী সন্ধ্যায় পুরনো হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফেরাতে আয়োজন করেন কলাপাতায় খাওয়ার ভোজ উৎসব। টাকা-পয়সার পাশাপাশি কয়েকদিন ধরে চলে তামার পাত্র, বাসনপত্র, কলাপাতা, মাটির পাত্র সহ নানা সামগ্রী সংগ্রহ। গ্রামীণ ঐতিহ্যের মেঝেতে বসে ঘরোয়া পরিবেশে তামার পাত্রে রান্না করে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে কলাপাতা সংগ্রহ করে খাওয়ার স্মৃতি প্রবীণরা যখন স্মরন করেন তখন অনেকেই পুরনো দিনের কথা শুনে আবেগে আপ্লুত হন। তাঁরা নতুন প্রজন্মের কাছে ওই সময়কার এই ঐতিহ্যবাহী রীতি রেওয়াজ ও অনুষ্ঠানের কথা কলাপাতায় জিয়াফত খাওয়ার স্মৃতিচারণ করে বলেন সেই দিনগুলি কতইনা মধুর ছিল। এই ঐতিহ্য ফেরাতে রশিবপুরা গ্রামবাসী, তরুন ইউপি চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ মুন্সীর পৃষ্টপোষকতা এবং প্রবাসীদের সহায়তায় আয়োজন করা হয় কলাপাতায় খাওয়ার এই ভোজসভা। আয়োজন করা হয় প্রায় ৪ হাজার লোকের। রশিবপুরা দাখিল মাদ্রাসা মাঠে মাংস, শির্নি দিয়ে মেঝেতে বসিয়ে কলাপাতায় খাওয়ানো হয় আগতদের। আয়োজন সম্পর্কে প্রবীন নুরু মাতুব্বর বলেন, হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফেরাতে আমরা গ্রামবাসী মিলে এ আয়োজন করেছি। এর মধ্যে দিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে সৌহার্দ্য ফিরে আসবে। ইউপি চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ মুন্সী বলেন, আমাদের গ্রামের যুব সমাজ, প্রবাসীরা এ আয়োজনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। গ্রামীন ঐতিহ্য ফিরে এলে গ্রামবাসী মিলেমিশে থাকতে উদ্বুদ্ব হবে। যুব সমাজ ও মাদকাসক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকবে। আমরা গ্রামীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাব। অভিনব এ ভোজসভায় যোগ দেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যন এস.এম হাবিবুর রহমান, নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার(ভুমি) মাহামুদুল হাসান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন, মৎস্য কর্মকর্তা দেবলা চক্রবর্তী, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মানোয়ার হোসেন, কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ব্যবস্থাপক শাহ আলম, ইউপি চেয়ারম্যান ম,ম, ছিদ্দিক মিয়া, ওলিউর রহমানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন স্থরের লোকজন।