বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৮ অপরাহ্ন

শুঁটকি এখন সবার প্রিয়, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও

কাইছার হামিদ মহেশখালী :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২২

প্রচুর প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিডে এবং স্বাদে ভরা শুঁটকি মাছ এখন সবার প্রিয়, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। সামুদ্রিক এসব শুঁটকি আগেকার দিনে হতদরিদ্রের প্রিয় থাকলেও এখন কিন্তু ঐশ্বর্যশালীদের প্রিয় খাবার। তারা শুঁটকি ভর্তা ছাড়া ভাত খাইনা। যেহেতু শুঁটকিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও রয়েছে। যার দরূণ মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। দেশে শুঁটকির চাহিদা মেটাতে শুষ্ক মৌসুম শুরুতে উপকূলীয় অঞ্চল কক্সবাজার মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম, ঘড়িভাঙ্গা, সোনাদিয়া, ছোট মহেশখালী, ধলঘাট, কালারমারছড়া ও মাতারবাড়ীর সাইরার ডেইলে গড়ে উঠছে একাধিক শুঁটকি মহল। মহেশখালী মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে প্রতি বছরের ন্যায় চলিত মৌসুমে ২১১৫ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন নেমেছে প্রক্রিয়াজাতকারীরা। সহজ, বিশুদ্ধ ও সূচারূপে শুঁটকি উৎপাদন করণের লক্ষ্যে তিনশতাধিক ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই সব শুঁটকি মহলগুলোতে ছুড়ি, লইট্টা, মাইট্টা, চিংড়ী, বোয়াল ও রূপচাঁদাসহ ইত্যাদি বিভিন্ন সাইজ এবং হরেক প্রজাতির স্বাদযুক্ত মাছের প্রচুর সমাহার। সুদিন মৌসুম আসলেই ওইসব শুঁটকি মহলে গড়ে ওঠে বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকির স্তুপ। শুঁটকি একসময় গরিব, হতদরিদ্র দিনমজুরের খাবারের রুটিনে থাকলেও, এখন কিন্তু বিপরীতে বিত্তশালীসহ সকল শ্রেণীর মানুষের পছন্দের এবং দৈনিক রুটিনে অন্যতম। শুঁটকির একটু ভর্তা, খাবারে যুক্ত হলে স্বাদ আর মুগ্ধতা অনুভব হয়। এর স্বাদ নেওয়া না অবধি যেন এততাঞ্চলে প্রকল্পে চাকুরীরত এবং ঘুরতে আসা পর্যটকদেরও দেহ-মন থাকে ক্ষুধার্ত। শুঁটকির স্বাদ নেওয়ার পরই যেন তাদের তৃপ্তি পায় এমনটি জানিয়েছেন মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত জামালপুরের ইঞ্জিনিয়ার মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি আরো জনান, এতদাঞ্চলের নির্ভেজাল শুঁটকি ছুটি কাটাতে বাড়ী যাওয়ার সময়ও কমপক্ষে ২-৩ কিলোঃ নিয়ে যায়। শুঁটকি মহলের মালিক উপজেলার মাতারবাড়ী সাইরারডেইল এলাকার বাদশা মিয়া বাটু জানান, কাঁচা মাছের ন্যায় শুঁটকির চাহিদাও দিনদিন বাড়ছে। পূর্বে তারা শুঁটকি মহলে মাছ শুকিয়ে স্তুপ করে চাটিয়া শহর চট্টগ্রামে বিক্রয়ের জন্য যেতে হতো, কিন্তু এখন ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে জেলে পাড়া গ্রামগঞ্জ বা চড়ে চলে আসে। বর্তমানে কাঁচা মাছ বাড়তি দামে কিনতে হওয়ায় শুঁটকি মাছের দামও বৃদ্ধি। শুষ্ক মৌসুম ছাড়া বর্ষা মৌসুমে শুঁটকি প্রক্রিয়া করা অসম্ভব। তাই তারা সুদিন মৌসুম শুরুতে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ শুঁটকি প্রক্রিয়ায় ব্যস্ততম সময় কাটান বলে জানান। স্বাভাবিকভাবে ছুড়ি মাছ সাড়ে ৩শত থেকে হাজার টাকার অধিক, লইট্টা ২শত ৪০ থেকে সাড়ে ৪শত টাকার অধিক, চিংড়ী ২শত থেকে ২হাজারের অধিক, রূপচাঁদা ২হাজার থেকে ৩ হাজারের অধিক, মাইট্ট ৭ শত থেকে ৯ শত টাকার অধিক কিলো প্রতি বিক্রয় হয়। তবে পুঁজির অভাবে তারা দেশের চাহিদা মিটাতে হিমশিম খাচ্ছে। তারা সরকারের আর্থিক সহায়তা পেলে দেশের শুঁটকির চাহিদা মিটাতে সক্ষম হবে। যেহেতু ওইসব এলাকায় বসবাসকারী বেশিরভাগই সাগর থেকে মাছ আহরণের জেলে। তারা মাছ ধরে আনে নিজেরাই শুকাই। অথবা শুঁটকি মহলের মালিকদের বিক্রয় করে তারাই প্রক্রিয়া করে। এমনকি তারা এধরণের ব্যবসা করেই মূলত জীবন-জীবিকা পরিচালনা করেন। সুদিন মৌসুমে চলে শুঁটকি বিক্রির ধুম। শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়ায় করণে নিয়োজিত শ্রমিকেরাও এহেন কথা জানান। ক্রেতার দেখা মিললে বিক্রেতার মুখেও থাকে প্রচুর হাসির ঝিলিক। এতে আলোকিত হয় শুঁটকি মহলের সাথে সংপৃক্তা পরিবার গুলি। তারা কিন্তু জন্মসূত্রে এপেশায় নির্ভর ও জড়িত হলেও সরকারী বা বেসরকারীভাবে অদ্যাবধি কোন ধরণের সুযোগ, সুবিধা পায়নি বলে সংক্রীর্ণ মনে জানান। মহেশখালী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মোঃ আঃ রহমান খান জানান, দেশের অন্য উপজেলার চেয়ে এদ্বীপের শুঁটকি গুণগত মান অন্যতম। বিশুদ্ধ ও স্বাদযুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com