জয়পুরহাটরে পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তবর্তী বাগজানা বাজারে প্রচীন বটগাছের নিচে চোখ পড়লেই দেখা যাবে মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি ঔষধী সরবত বিক্রি করছে। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এই বাজারে সরবত বিক্রি করেই চলছে তার সংসার। উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের রতনপুর হিন্দুপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। তার নাম তরণী কান্ত বর্মন(৫০)। সারাদিনের পরিশ্রম ও ক্লান্তি ঝেরে ফেলতে এক গ্লাস শরবত পান করে অনেকেই পানি শূন্যতা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে শরীরকে শীতল করছে। রমজান মাসে সারাদিন রোজা রেখে রোজাদাররা সন্ধ্যার পর একটু প্রশান্তি পেতে তার এই সরবত পান করে থাকে। তিনি বলেন রোজার মাসে সরবত বেশি বিক্রি হয়। আর এ শরবত বিক্রি করেই সংসার চলছে তরণী কান্ত বর্মন এর। তিনি আরো বলেন, বাগজানা বাজারের ছোট্ট দোকানে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে এই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। লেবু, বেল, তোকমার দানা, ইসবগুলের ভূষি, সাদা তিল, হালিম দানা, আয়লা, বয়রা, সোনাপতা, হরিতকী, অর্জুনের পাউডার, উদালেন বীজ, জাম বীজ, চিরতা, শঙ্খমূল, ব্রীজমনি, শতমূল, অর্শগন্ধাসহ বিভিন্ন গাছ-গাছালী পাউডার দিয়ে এ শরবত তৈরি করে বিক্রি করা হয়। প্রতি গ্লাস শরবত বিক্রি করা হয় ১০/১৫ টাকায় ও ভিআইপি শরবত বিক্রি করা হয় ৩০/৫০ টাকায়। গরমের সময় রোদের তাপ বেশি থাকলে প্রতি হাটে বেচা-বিক্রি ৩শ থেকে ৪শ টাকা হয়। শীতের সময় সরবত বিক্রি কিছুটা কম হয়। দিনে কোনো অনুষ্ঠান থাকলে বেচা-বিক্রি একটু বেশি হয়। বিকেলের পর থেকে সিরিয়াল দিয়ে কিনতে হয় তরনী কান্ত বর্মন এর সরবত। আশেপাশে কোন মেলা, অথবা ইসলামিক জলসা থাকলে সেখানে অস্থায়ী দোকান দেন তিনি। ও সেখানে বেশ ভাল বেচাকেনা হয়ে থাকে। তার তিন মেয়ে কোন ছেলে নেই। তিন মেয়েরই বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি জানান এই সরবত বিক্রির টাকা দিয়েই মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার পরিবারে এখন তিনজন সদস্য, বৃদ্ধ মা ও তারা স্বামী-স্ত্রী নিয়ে আমাদের সংসার। গরমের সময় বেচাকেনা ভাল হলেও, শীতের সময় বেচাকেনা কমে যাওয়ায় কষ্টের সাথে দিনাতিপাত করেন তিনি। কেননা, তখন উপার্জন অনেক কমে যায়। তবুও শত কষ্ট ও অভাব অনটানের মাঝেও ধরে রেখেছেন পূর্বপূরুষের এই সরবত বিক্রির পেশা। অভাবের মাঝেও কারো কাছে হাত পাতবো না বলেও জানান তিন সন্তানের জনক তরণী কান্ত বর্মন।