সময় মহান আল্লাহর অমূল্য নিয়ামত। মানুষের বরাদ্দপ্রাপ্ত হায়াতের প্রতিটি মুহূর্ত দামি। চন্দ্র-সূর্যের ছুটে চলা, রাত-দিনের পালাবদলে প্রতিটি মুহূর্তকে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন সূর্য ও চাঁদকে, যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুবর্তী এবং তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিনকে। তিনি তোমাদের সে সব কিছুই দিয়েছেন, যা তোমরা চেয়েছ (তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় সব কিছুই পেয়েছ) আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করতে চাইলে কখনো তার সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারবে না। মানুষ অবশ্যই বড় জালিম, বড়ই অকৃতজ্ঞ। ’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৩-৩৪)
সময়ের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের একাধিক জায়গায় সময়ের কসম করেছেন। যেমন সুরা আসরের প্রথম আয়াতে ‘ওয়াল আসর’ বলে মহাকালের শপথ করেছেন। সুরা ফাজরের শুরু ‘ওয়াল ফাজর’ বলে ঊষার কসম করেছেন। সুরা লাইলের শুরুতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘শপথ রাতের, যখন তা (আলোকে) ঢেকে দেয়, শপথ দিনের যখন তা উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। ’ শুধু তা-ই নয়, মহান আল্লাহর ফরজ উপাসনাগুলোও সময়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যে ইবাদত যে সময় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা তখনই করা আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যখন তোমরা নামাজ আদায় করে নেবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে, অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন (যথানিয়মে) নামাজ কায়েম করবে। নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। (সুরা নিসা, আয়াত : ১০৩) প্রতিটি মুহূর্তেই মুমিন আল্লাহর উপাসনা করে অগণিত সওয়াব লাভের সুযোগ পায়, যা কল্পনাকেও হার মানায়। আবু মালিক আল-আশআরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অজু ঈমানের অর্ধেক। আলহামদুলিল্লাহ দাড়ি পাল্লাকে পূর্ণ করে দেয়। সুবাহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ এক সঙ্গে আকাশম-লী ও জমিনের মধ্যবর্তী জায়গা ভর্তি করে দেয়। … (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৭)
আমাদের নবীজি (সা.) সময়ের পূর্ণ মূল্যায়ন করতেন। তাঁর আগের পরের সমস্ত গুনাহ মাফের ঘোষণা পেয়েও তিনি প্রতিটি মুহূর্তকে ইবাদতে কাটানোর চেষ্টা করতেন। এ ব্যাপারে মুগিরাহ (রা.) বলেন, নবী (সা.) এত অধিক নামাজ আদায় করতেন যে তাঁর পদযুগল ফুলে যেত। তাঁকে বলা হলো, আল্লাহ তো আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?’ (বুখারি, হাদিস : ৪৮৩৬)
বিশিষ্ট তাবেঈন হাসান বসরি (রহ) বলেন, যেখানে হাসান বসরি (রহ.) বলেন, আমি এমন লোকদের পেয়েছি এবং সংশ্রবে থেকেছি, যাঁরা তাঁদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে সোনা-রুপার চেয়েও বেশি মূল্যবান মনে করতেন। মানুষ যেভাবে সোনা-রুপাকে বড়ই হিফাজতে রাখে, যাতে চুরি বা বিনষ্ট হতে না পারে। এভাবে তাঁরাও জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে বর্ণনাতীতভাবে হিফাজত করতেন, যাতে জীবনের একটি মুহূর্তও কোনো অযথা বা অসমীচীন কাজে ব্যয় না হয়। তাঁরা ভাবতেন, সময় আল্লাহর দেওয়া একটি বড়ই অমূল্য নিয়ামত। যার নেই কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা। আর কত দিন এ নিয়ামত বিদ্যমান থাকবে তাও জানা নেই। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ব্যয় করতে হবে এই সময়কে। (জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ; মুফতি তাকি উসমানি দা. বা., পৃ. ২২) তাই আমাদের উচিত, প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে ব্যয় করে তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। কিয়ামতের দিন প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব দেওয়া ছাড়া কেউ এক পা-ও নড়তে পারবে না।
আবু বারজা আল-আসলামি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো বান্দার পদদ্বয় (কিয়ামত দিবসে) এতটুকুও সরবে না, তাকে এ কয়টি বিষয় সম্পর্কে যে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ না করা হবে; কিভাবে তার জীববনকালকে অতিবাহিত করেছে; তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী কী আমল করেছে; কোথা থেকে তার ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে ও কোন কোন খাতে ব্যয় করেছে এবং কী কী কাজে তার শরীর বিনাশ করেছে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৭) মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সময়ের পূর্ণ মূল্যায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।