শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ অপরাহ্ন

বুড়িচংয়ে বিরল প্রজাতির পদ্মফুল

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রাম বিল। প্রতি বছর এখানে গোলাপি, সাদা ও নীল ও হলুদ পদ্মের মেলা বসে। এবারও বিস্তৃত বিলজুড়ে ছড়িয়েছে পদ্মফুলের সৌরভ। শরতের নীল আকাশের নিচে দিগন্তজোড়া পদ্মফুলের মেলা দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ঘুরতে আসেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। তবে এবার হলুদ রঙের নতুন প্রজাতির পদ্মফুলে বাড়তি আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। কীভাবে এ প্রজাতির পদ্ম এখানে এলো তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছেন খোদ উদ্ভিদবিদ ও গবেষকেরাই। পদ্মের এ প্রজাতি দেশে আগে কখনো দেখা যায়নি, এমনকি পুরো এশিয়ার জন্য এটি বিরল। উত্তর আমেরিকার একটি প্রজাতির সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে, তবে ওই পদ্মের সঙ্গেও কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতাও পেয়েছেন গবেষকেরা।

সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরে বিষয়টি নজরে আসলে এটি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের গবেষকরা। তারা ইতিমধ্যে কয়েকবার ওই এলাকায় গেছেন এবং নমুনা সংগ্রহ করেছেন। গবেষণার মাধ্যমে এই বিশেষ পদ্ম ফুলটিকে যথাযথভাবে শনাক্ত করার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তারা। গবেষকেরা আরো জানান, বিশ্বে পদ্মের দুই প্রজাতি রয়েছে। এর একটি এশিয়ান পদ্ম (বৈজ্ঞানিক নাম-নিলাম্বো নুসিফেরা গেয়ার্টনার। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ পদ্ম জন্মে। এর রং হয় সাদা এবং হালকা বা গাঢ় গোলাপি। গোলাপি ও সাদা রঙের পদ্মফুল দেখতে আমরা অভ্যস্ত এবং আমাদের দেশের সর্বত্র এই পদ্মটিই বেশি পাওয়া যায়। আরেক প্রজাতির পদ্ম হলো আমেরিকান লোটাস বা ইয়োলো লোটাস। এ প্রজাতির পদ্ম শুধু উত্তর ও মধ্য আমেরিকায় জন্মে। রঙের দিক থেকে বুড়িচংয়ে পাওয়া এ পদ্ম আমেরিকান লোটাসের কাছাকাছি। কিন্তু বুড়িচংয়ের পদ্মের সঙ্গে আমেরিকান লোটাসের কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান রাখহরি সরকার। তিনি বলেন, আমেরিকান লোটাসের পাপড়ির সংখ্যা যেখানে ২০ থেকে ২৫টি হয়, সেখানে নতুন এ পদ্মের পাপড়ির সংখ্যা ৭০টির মতো। আবার এর পুংকেশরের গঠনও আমেরিকান লোটাস থেকে আলাদা। রাখহরি সরকার বলেন, এই নতুন প্রকৃতির পদ্মফুল নিঃসন্দেহে ভিন্নতর। এমন পদ্ম আগে কোথাও পাওয়া যায়নি। আমাদের উদ্ভিদ জীববৈচিত্র্যে এটি একটি নতুন সংযোজন। এটা কীভাবে এখানে এল তা সত্যিই আশ্চর্যের। বেঙ্গল প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শিকদার আবুল কাসেম শামসুদ্দীন বলেন, সাধারণ পদ্মের সঙ্গে এর আরেক ভিন্নতা হলো এটি আকারে বড়। এর গঠন শৈলী এবং বর্ণ বৈচিত্র্যময়। হালকা হলুদ বর্ণের এমন পদ্ম ইতিপূর্বে কোথাও পাওয়া যায়নি। কাজেই হলুদ বর্ণের পদ্মটি বাংলাদেশে পাওয়া সমস্ত পদ্মফুল থেকে ভিন্নতর এবং উদ্ভিদ জীববৈচিত্র্যের দৃষ্টিতে অত্যন্ত উৎসাহজনক।
এই পদ্ম এখানে এল কীভাবে সেই প্রশ্নটি এখন গবেষকদের ভাবাচ্ছে। তাদের ধারণা, হয়তো অনেক আগে এলাকার কেউ এই পদ্ম যেখানে পাওয়া যায় সেখান থেকে নিয়ে এসেছিলেন। অর্থাৎ কেউ হয়তো উত্তর বা মধ্য আমেরিকার কোনো দেশ থেকে নিয়ে এসেছিলেন। হয়তো দীর্ঘদিনের বিবর্তনে গঠন বৈচিত্র্যের দিক থেকে এ পদ্মে ভিন্নতা এসেছে। তবে বুড়িচংয়ের দক্ষিণ গ্রামের প্রবীন ব্যক্তিরা বলছেন, তারা ছোটবেলা থেকেই এ পদ্ম দেখছেন। আর এ গ্রামের কোনো ব্যক্তি এখন বা অতীতেও ওসব দেশে গিয়েছিলেন এর কোনো নজির নেই।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com