সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৩ অপরাহ্ন

কাব্যচর্চা: আমরা ক’জনা

হাসান আলীম
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২২

ক.
কাব্য বৈশিষ্ট বিচার বিশ্লেষণ অনেকটাই ব্যক্তি নির্ভর এবং কাল সাপেক্ষ। একটা নির্দিষ্ট সময়ের কবিবৃন্দ বা কবি বিশেষ সাহিত্য ক্ষেত্রে কি অবদান রাখল বা তার/তাদের কাব্য বৈশিষ্টই বা কি তা সাহিত্য ইতিহাসের একটি প্রধান বিষয়। কাল অনেকটা নিরপেক্ষ বা কোন কোন ক্ষেত্রে কারো জন্য অনন্ত প্রায়-কালোর্ত্তীণ। কবি সে যে সময়ের হোক বা যে মাপেরই হোন তাঁকে তাঁর কালকে আশ্রয় করেই, কালকে স্পর্শ করেই বড় হতে হয়। যিনি কালোত্তীর্ণ তিনিও তাঁর কালকে ধারণ করেই সর্বকালীন এবং সার্বজনীন হন। এ-দৃষ্টিতে কাল বিভাজন করে কাউকে বিচার করা বা কোন গোষ্ঠীকে বিশ্লেষণ করা ভুল নয়। বিংশ শতকের আট দশক বা প্রচলিত আশির দশক আমাদের কব্য ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য কালপর্যায়। এসময় একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে যা আমাদের সাহিত্যকে একটি ভিন্নমাত্রা দান করেছে। একটু পেছন থেকে তাকালে ব্যাপারটা সুস্পষ্ট হবে।
আমাদের কাব্য সাহিত্যের আধুনিকতার সুত্রপাত ঘটে মাইকেল মধুসূদনের হাতে। আধুনিকতা অবশ্য যুগের উপর শতাব্দ প্রবাহের উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে অন্যভাবে বলা যায় মধ্যযুগের তলনায় অবশ্যই আধুনিক ছিল। এখনও অনেকের কবিতা আধুনিক নয় কি? মধ্যযগের কালোত্তীর্ণ কবিরা অবশ্যই আধুনিক এবং কালোত্তীর্ণ। এক্ষেত্রে অষ্টাদশ শতক এবং ঊনিবিংশ শতককে আধুনক যুগ বলে সে অর্থে প্রকাশ করা হয় তাকে অনেকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। প্রাচ্যবাদী বা অরিয়েন্টালিজম এবং পোষ্টমর্ডানিস্টরা অবশ্যই পাশ্চাত্যের আধুনিকতার বৈশিষ্টকে প্রত্যাখান করবে। সে যাই হোক আমরা আধুনিকতাকে মোটামুটিভাবে চিন্তা করতে পারি এমনভাবে, যাতে সময়ের স্পর্শ থাকবে, সাধারণ মানুষের কথা, ধর্ম ও ঐতিহ্যের তথা স্বাধীনতা ও বাকস্বাধিকারের বিষয় থাকবে এবং বিশ্বাসের পক্ষে জুলুমের বিপক্ষে থাকবে। চর্যাপদ পর্ব থেকে মধ্যযুগের সাহিত্য বিশ্বাসের পক্ষে সত্য ও সুন্দরের পক্ষে ছিল। তবে অসুন্দরী এবং অশ্লীলতা যে ছিল না তেমন নয়। অপ্রধানকে আলোচনায় না আনাই শ্রেয় মনে করছি। ঊনবিংশ বিংশশতকে আধুনিকতা তথা বিশ্বাস, সত্য সুন্দর স্বাধীনতা ও প্রতিরোধের বিষয় ছিল সাহিত্যে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীম উদদীন, জীবনানন্দ দাশ, ফররুখ আহমদ, সৈয়দ আলী আহসান প্রমুখের কবিতার বিশ্বাস ও সত্য সুন্দরের বাণী প্রস্ফুটিত হয়েছে। প্রতিবাদ প্রতিরোধ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্যের কথা বিপুলভাবে শিল্পময় হয়েছে নজরুল ও ফররুখে। বিংশশতকের তিরিশের কবিরা আধুনিকতায় নতুন মাত্রা বিশ্বাসে অবিশ্বাস তথা নাস্তিবাদ নিয়ে এলেন। ছন্দের বলয় ভেঙে রবীন্দ্র নজরুল বৃত্ত ভেঙে এরা বের হয়ে আসেন। এ দলে ছিলেন জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণুদে, বুদ্ধদেব বসু, অমিয় চক্রবর্তী, সমরসেন প্রমূখ কবিরা।
রবীন্দ্রবলয় ভাঙার উদ্বোধন বিশেষত: প্রকরণ, অলংকার ও বাণীতে করে ছিলেন নজরুল আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিরিশের কবিদের রবীন্দ্র উপেক্ষা অনেকটা সফল হল ছন্দ ভাঙার কল কল্লোলে। তাদের এ প্রচেষ্টা পরবর্তি দশক পর্যন্ত পরিব্যাপ্তি হল। গদ্যছন্দ, ব্যাপকভাবে রমনবাদ, নিরীশ্বরবাদ, বস্তুবাদ বিস্তৃতি লাভ করল। তরুণ কবিরা সংক্রমিত হল। তবে চল্লিশের ফররুখ আহমদ এবং পঞ্চাশের আল মাহমুদ কোন কোন ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ছিলেন। ষাটের আবদুল মান্নান সৈয়দ এদের ফর্ম গ্রহণ করলেও পাশ্চাত্যের পরাবাস্তবতা নতুনভাবে বাংলা কবিতায় পূর্ণরূপে স্থাপন করেন। তার পরাবাস্তবতার রয়েছে বিশ্বাস, আধ্যাÍিকতা ও রহস্যময়তা সত্তুরের কবিরা অনুরূপ। তাদের কবিতায় স্বধীনতা, যুদ্ধ ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা নতুনভাবে স্থাপন পেযেছে। একটি বিষয় লক্ষনিয় তিরিম দশক থেকে সত্তুর দশক পর্যন্ত বাংলা কবিতায়, বস্তুবাদ, ভোগবাদ, রমনবাদ এবং নাস্তিবাদ কামবেশী আদরনিয়ভাবে স্থান পেয়েছিল। এ বিষয়গুলো মূলধারা বা সূচনা যুগ, মধ্যযুগ এবং ঊনিশ বিশ শতক কবিতা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। এদের প্রভাব বাংলা কবিতায় ব্যাপকভাবে পড়েছিল বিশেষত: স্বাধীনতা উত্তর কবিতায়। তবে আশার বিষয় আশির দশকের একদশ প্রত্যয়দীপ্ত কবি তাদের অর্থাৎ বহমান ধারাকে অস্বীকার করে মূলের দিকে নবরূপে ফিরে আসে। তারা নতুন স্থাপত্যকর্ম স্থাপন করেন আশির দশকের প্রায় শতাধিক কবি রয়েছেন তবে তাদের সকলেই মূলানুগামী নয়। বর্তমানে আশির কবির তালিকায় সরবভাবে উপস্থিতির সংখ্যা তিরিশের বেশী নয়। আশির একটি অংশ ছিল পাশ্চাত্য আধুনিকতার অনুসারী অন্য প্রধান অংশে ছিলেন মাত্র ১৫/২০ জন কবি। এই কবিরা বিশ্বাসী গণমানুষের প্রতিফলন, যুগের যন্ত্রণা ও অরিয়েন্টালিজম তথা পাশ্চাত্য বিমুখতা ছিল তাদের কবিতায়। এরা আশরাফ-আল-দীন, মতিউর রহমান মল্লিক, আবদুল হাই শিকদার, হাসান আলীম, সোলায়মান আহসান, মোশাররফ হোসেন খান, মুকুল চৌধুরী, তমিজ উদ্দীন লোদী, রেজাউদ্দিন স্টালিন, বুলবুল সরওয়ার, গাজী রফিক, আসাদ বিন হাফিজ, নাসির হেলাল, গোলাম মোহাম্মদ, গাজী এনামুল হক, আহমাদ আকতার, আহমদ মতিউর রহমান, শরীফ আবদুল গোফরান, মহিউদ্দিন আকবর প্রমূখ কবিবৃন্দ। এই কবিরা স্বত:স্ফুর্ত হয়েই যে যার অবস্থানে থেকে স্বাধীনতা, ধর্মবিশ্বাস, ইতিহাস ঐতিহ্য, সত্য সুন্দরের লক্ষে কবিতা লেখেন। তাদের কারো কবিতায় নাস্তিক্যবাদ তথা বস্তুবাদ, ভোগবাদ, অশ্লীলতা নেই। এরা নাস্তিবাদের বিপক্ষে সত্যের পতাকা উড়িয়েছে কবিতার মিনারে মিনারে। কেন এরা সত্য সুন্দরে বিশ্বাসে ধর্মে ফিরে এলেন? এপ্রশ্নের উত্তরে অনেক বিষয়ই খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে প্রধান বিষয়গুলোই বেকল আলোচনায় প্রাধ্যান্য পাবে।
আশির দশকের প্রথমেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিপরীত উচ্চারণ’ নামে একটি সাহিত্য সংগঠনের জন্ম হয়। এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন ড. মিয়া মুহম্মদ আয়ুব, মাসুদ মজুমদার, ড. মাহবুবুর রহমান, কবি মতিউর রহমান মল্লিক প্রমুখ। এরা ঢাবি কেন্দ্রীক সাহিত্য চর্চা করত। অনেকেই এ সংগঠনের সাহিত্য সভায়যোগ দান করেছে। এরা মূলধারা অর্থাৎ বিশ্বাসের পক্ষে সাহিত্য আন্দোলনের কার্যক্রম চালাত। এক পর্যায়ে এর পরিচালনার ভার আসে ড. মাহবুবুর রহমান এবং এরপরে আমি ক’বছর এর পরিচালনা করি। পঁচাশির দিকে এটি বিস্তার লাভ করে ঢাকা শহর কেন্দ্রিক একটি সাহিত্য সংগঠনে রূপান্তরিত হয়। তখন এর পরিচালকের দায়িত্বপান কবি মতিউর রহমান মল্লিক, আসাদ বিন হাফিজ এবং সর্বশেষ পর্যায়ে নাঈম মাহমুদ। দীর্ঘ পচিশ বছর সংগঠনটি সাহিত্য আন্দোলনের কাজ করে। এ সময়ের মধ্যে বাংলা সাহিত্য পরিষদ গঠন এবং এ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেও সাহিত্য সভা চলতে থাকে। উল্লেখ্য বিপরীত উচ্চরণ নিরলসভাবে এপর্যন্ত সাপ্তাহিক সাহিত্য সভা করে এসেছে। এসব সাহিত্য সভায় যারা যোগ দিয়েছিলেন তাদের অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত।
বিপরীত উচ্চরণে যারা সাহিত্য আন্দোলনের নেতা ও কর্মির মত কাজ করেছেন তাদের মধ্যে আজকের প্রতিষ্ঠিত কবি মতিউর রহমান মল্লিক, আসাদ বিন হাফিজ, মোশাররফ হোসেন খান, মুকুল চৌধুরী, সোলায়মান আহসান, বুলবুল সরওয়ার, গোলাম মোহাম্মদ ও হাসান আলীম প্রমুখ। নব্বই দশকে যারা এ প্রতিষ্ঠান থেকে কবি সাহিত্যিক হিসেবে বেড়ে উঠেছেন তাদের মধ্যে মুর্শিদ-উল-আলম, আজগর তালুকদার, রফিক মুহাম্মদ, ওমর বিশ্বাস, নাঈম মাহমুদ, সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব, নিয়াজ শাহেদী, নকীব হুদা। প্রথম দশকে আজাদ ওবায়দুল্লাহ, আহমদ বাসির, আফসার নিজাম, রেদওয়ানুল হক, মাহমুদ বিন হাফিজ, রকীবুল ইসলাম, ফয়েজ রেজা, শিকদার মোস্তফা, শাহদাত তৈয়ব প্রমুখ। এ সংগঠনের বাইরে একই ধারার আরও কবিবৃন্দ একই সময়ে বরিশাল, যশোর, বগুড়া, সিলেট, রাজশাহী, চিটাগাং এবং ঢাকার অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে বেড় উঠেছে।
বিপরীত উচ্চারণ মূলত একটি সাহিত্য সংগঠন। সাহিত্য আন্দোলন, সাহিত্য সভা, সেমিনার ও বিশেষ বিশেষ স্মরণিকা প্রকাশ করাই ছিল এর প্রধান কাজ। প্রথম দিকে এর কোন প্রকাশনা সংস্থা ছিল না। ফলে এ সংগঠনে বেড় ওঠা কবিদের কাব্যগ্রন্থ দেশের অন্যান্য বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হতে থাকে। পরবির্ততে নব্বই দশকে এসে এরা প্রকাশনা শুরু করে। এখান থেকে কবি মতিউর রহমান মল্লিক, হাসান আলীম, নাঈম মাহমুদ ও সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাবের একটি করে বই প্রকাশ হয়েছে।
বিপরীত উচ্চারণের আমরা সত/আটজন কাব্যসতীর্থ বেশ ঘনিষ্টভাবে সাহিত্য আন্দোলন, সাহিত্যসভা, সেমিনার এবং সাহিত্য কেন্দ্রিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মূখবদ্ধ ছিলাম। আমাদের নকীবের কাজ করেছেন কবি মতিউর রহমান মল্লিক। আজ কর্মব্যস্ততা ও যান্ত্রিক জটিলতার সময়ে আমরা পরস্পর দুস্তর ফারাকে না রইলেও যথেষ্ট কাছে নেই। তবে যে যার মত যে যার ভূবনে আপন রঙের মাধুরী মিশিয়ে কাব্যচর্চা করছেন নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কেউ কেউ। ব্যাপক প্রভাব রেখেছেন অনুজ কবি বৃন্দ নব্বইয়ের সম্ভাবনাময় কবিদঙ্গলে। আমরা সবাই বিশ্বাসী, স্বাপ্নিক, রোমান্টিক, ঐতিহ্যবাদী আমাদের লেখায় তার প্রমাণ রয়েছে।
খ.
আগেই বলেছি, তিরিশ দশক থেকে আধুনিক বাংলা কবিতা অন্যদিকে মোড় নিয়েছিল, যে ধারাটি ছিল নাস্তিবাদ, নৈরাশ্যবাদী, সংশয়বাদী বস্তুতান্ত্রিকতার স্থুল জঠরবদ্ধ যা ছিল আবহমান বাংলা সাহিত্যের মূল ধারা থেকে ছিটকে পড়া এক উচক্রমন। এটি সত্তুর দশক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল প্রবলবেগে। যদিও চল্লিশ দশকের ফররুখ আহমদ, সৈয়দ আলী আহসান, আহসান হাবিব, ড. আশরাফ সিদ্দিকী. ড. সৈয়দ আলী আমরাফ এ ধারার সংশ্লিষ্ট ছিলেন না।
আশির এই সাহসী কবি দল সাহিত্যে একটি ভিন্ন স্রোত, ভিন্ন ধারা নির্মাণ করলেন, যা মূলধারার সাথে সামঞ্জস্যশীল। এই বিশ্বাসী কবিদের অনেককেই বিভিন্ন জানেরা বিবেচনার বাইরে সাখেন। তাই এই একচক্ষু বিচরকদের রায়ের বিপক্ষে, সত্যের পক্ষে বস্তুনিষ্ঠ এই কিঞ্চত মূল্যায়ন করা সামাজিক দায়িত্ব মনে করছি। বিশ্বাসের মূল ধারায় নিষিক্ত নাবিক কবিদলকে জ্যোতি জোসনার কবিকন্ঠ বলতে দ্বিধা নেই। এই কবিদল কেবর জোসনারলোকে পরিশ্র“তই হননি বরং নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্বাসী কাব্যকলার পংক্তি নির্মাণে। যুথবদ্ধতায় সর্বক্ষেত্রে কাব্যসৃষ্টি হয় না, তবে সৃষ্টিমুখর শিল্পীরা যুথব্ধ হলে, নেতৃত্ব দিলে, একটি ধারার সৃষ্টি হয়, একটি বেগবন্ত স্রোতপল্লবের নির্মিতি সম্পন্ন হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তরুণ কবি মতিউর রহমান মল্লিক, আসাদ বিন হাফিজ, হাসান আলীম ও বুলবুল সরওয়ার প্রবল বিরুদ্ধ স্রোতের মোকাবেলায় এ ধারা সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন আশির দশকের একেবারে গোড়ার দিকে। বিপরীত উচ্চারণের ব্যানারে তাদের সে সাহসী উদ্যোগ দশক পেরোনোর আগেই পল্লবিত হয়ে একটি স্বাতন্ত্র কাব্যধারা রূপে জাতির প্রাণে নব প্রাণপ্রবাহের সৃষ্টি করে। রাজধানী ঢাকা থেকে এ নবতর স্রোতধারার লাভাস্রোত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে লাব্বাইক বলে তাতে শামিল হয়ে যান চট্টগ্রাম থেকে সিলেটের সোলায়মান আহসান, সিলেট থেকে মুকুল চৌধুরী, যশোর থেকে মোশাররফ হোসেন খান, মাগুড়া থেকে গোলাম মোহাম্মদ প্রমুখ। সিলেটের সংলাপ সাহিত্য সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের কর্মীরা এগিয়ে আসে কবি আফজাল চৌধুরীর নেতৃত্বে। অল্প সময়ের ব্যবধানে এ ধারায় জ্যোর্তিময় সাক্ষর রাখতে এগিয়ে আসেন আরো অনেকে। আসেন আবদুল হাই শিকদার, তমিজউদ্দিন লোদী, রেজাউদ্দিন স্টালিনের মতো ঐতিহ্যপ্রিয় দেশপ্রেমিক কবিবৃন্দ। পালাবদল ঘটিয়ে এ স্রোতে শামিল হয়ে যান শক্তিমান কবি আল মাহমুদ। নতুন সাহসে উজ্জীবিত হন সৈয়দ আলী এহসান, আবদুস সাত্তার, আবুল খায়ের মুসলেউদ্দিন প্রমুখ অগ্রজ কবিবৃন্দ। এভাবেই বিশ্বাসের হিরন্ময় প্রভাব আবার স্নাত হয় আমাদের কবিতা। তিরিশের দশক থেকে চলে আসা কাব্য নৈরাজ্যর বিরুদ্ধে যা আমাদেরকে আবার আবহমান বাংলা কাব্যের মূলধারায় ফিরিয়ে আনে। বিশুষ্কপ্রায় আস্তিবাদের প্রাণময় স্ফুরণ ঘটে সকলে যুথবদ্ধ প্রচেষ্টায়। তাই আশির এই সাহসী প্রত্যয়বাদী কবিবৃন্দের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে চিহ্নিত করার সময় এসেছে। সময় এসেছে অগ্রজ ও অনুজদের মেলবন্ধনে এ ধারাটিরে আরো পরিপুষ্ট ও সুশোভিত করার।
বর্তমান সময়ের সাহসী কবিদলের কাব্য প্রতিভায় ভ্রান্ত ইউরোপিয় কনসেপ্ট দূরীভূত হতে শুরু করেছে। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘এখানে বলা অসঙ্গত হবে না, বাংলা কবিতায় আধুনিকতার ছদ্মবেশে অবিশ্বাসের যে সুরটি ক্রমবর্ধমান ছিল বিশ্বাসের সাহিতকৈ আচ্ছন্ন করে যে হয়ে উঠেছিল দিগন্ত বিস্তৃত আষাঢ় শ্রাবণের ঘণকালো মেঘের মতো, সে বিশ্বাস হেমন্ত আকাশের আলোয় গুটিয়ে গেছে। তার সম্পূর্ণ অন্তর্ধান হয়নি কিন্তু আপাতত: কাল শীতের স্পর্শ তার চোখের দীপ্তি নি®প্রভ।’ [চতুদর্শ শতাব্দীর বাংলা কবিতা] আশির কবিরা বিভিন্ন মতপথের হলেও এদের কবিতা পূর্বের দশকগুলোর কবিদের সৃষ্টিশীলতার চেয়ে আরও স্বচ্ছ, বেগবান ও আবেদনময়। আশির একজন কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেনের জবানীতে এর পরিচয় পাওয়া যায়, ‘আশির কবিদের ঐতিহ্য চেতনার একটি দিক তাদের কবিতায় মীথের পুনর্ব্যবহার। ভারতীয় কিংবা বৈশ্বিক মীথ যেমন তেমনি ইসলামী মীথের ব্যবহারও ঘটেছে কারো কারো কবিতায়।’ [একবিংশ, পৃষ্ঠা-৮৭-৮৮]
আশির কবিরা ঐতিহ্য সচেতন। এদের কবিতায় আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য শিল্পীসম্মতভাবে উপস্থিত হয়েছে। এদরে কবিতায় শ্লোগান, চিৎকার নেই বরং প্রাজ্ঞ প্রতিভার দীপ্তি রয়েছে। আশির দশকের বিশ্বাসী শিকড়সন্ধানী কবিদের সম্পর্কে আশির কবি আসাদ বিন হাফিজ একটি চমৎকার নিবদ্ধ লিখেছিলেন, ‘একগুচ্ছ বিদ্রোহী শব্দমালা’ শীর্ষক তাঁর এই নিবন্ধটিতে তিনি আশির দশকের ঐতিহ্যবাদী কবিদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘একদল তরুণের হাত থেকে আশ্চর্যজনকভাবে বেরিয়ে এসেছে একগুচ্ছ কবিতার বই। আশ্চর্যজনক এ অর্থে যে, বিশ্বাসের শব্দমালা আগে যারা উচ্চারণ করতেন, তাৎক্ষণিক, অর্থে তারা ছিলেন নি:সঙ্গ কিন্তু এখন সম্ভাবনাময় একদল কবিতাকর্মী, তরুণ্যের ব্যাপ্তি নিয়ে সমস্বরে আগের চাইতেও দৃঢ়তার সাথে হিরন্ময় বিশ্বাসের ধ্বনি উচ্চকিতকরে তুলে ধরেছেন। এসব কবিরা যদি বিশ্বাসের এ জোটবদ্ধতা বজায় রাখতে পারেন, নি:সন্দেহে বাংলা কাব্যে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক আরেকটি দিক হলো খ্যতিমান কবিদের মধ্যেও বিশ্বাসের এ পালাবদল ঘটেছে।’ অগ্রজদের কেউ কেউ আবশ্য এ উত্থানে নাখোশ হয়েছেন। আশির কবিদের নিয়ে অশোভন অকাব্যিক ক্লেদাক্ত উচ্চারণ করতেও বাঁধেনি কবি শামসুর রাহমানের। তিনি বলেছেনÑ
আশির দশক যায় মাদি ঘোড়ার মত
পাছা দোলাতে দোলাতে।
আল মাহমুদ দ্বিধাগ্রস্থ। আশির দশকের গোড়াতেই তিনি টের পেয়েছিলেন, বাংলা কাব্যে এমন এক নতুন শক্তির উত্থান ঘটছে, যাদের উচ্চারণে আছে এ দেশের বৃহত্তর গণমানুষের আশা ও স্বপ্নের সৌরভ। এ তারুণ্যের জোয়ার বাংলা কাব্যের ক্ষয়িষ্ণু ভূগোল তছনছ করে বিশ্বাসের প্রাসাদ গড়বে জাতির বিবেকে। সময়ের ব্যবধানে শিল্পী ও সৌন্দর্যের সকল শাখায় এদের নেতৃত্ব অনিবার্য হয়ে উঠবে। সাথে সাথে তিনি ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ নিয়ে ছুটে এলেন ময়দানে। আশির এ কাব্যান্দোলনে চার তরুণ সেনাপতি মতিউর রহমান মল্লিক, সোলায়মান আহসান, আসাদ বিন হাফিজ ও বুলবুল সরওয়ারকে উৎসর্গ করলেন ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’। এটা ১৯৮৪-র শেষ লগ্নের ঘটনা। সেই থেকে তিনি এই বিশ্বাসী বলয়ের মুরুব্বী হিসাবে যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে বরিত হয়ে আসছেন। একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভ পর্যন্ত তিনি একাধিক জাতীয় দৈনিকের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এই সুদীর্ঘ সময় প্রতি সপ্তাহেই তাঁকে পতিকায় নিয়মিত সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে কলাম লিখতে হয়েছে, কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য আশির হিরন্ময় কবিদের বিষয়টি চাতুর্যের সাথে এড়িয়ে গেছেন তিনি। সাহিত্য সভাগুলোতে এসব কবিদের সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেও লিখিতভাবে আশির দশকের কবিদের কবিতাকে কবিতা বলতে তিনি দ্বিধা করেছেন। এদের কবিতাকে বলেছেন কবি ভাষা। আশির দশকের কবিদের কবি বলে স্বীকৃতি দিতে তিনি দীনতায় ভুগেছেন। সাম্প্রতিক বাংলা কবিতা শীর্ষক এক নিবদ্ধে কবি আল মাহমুদ বলেছেন, ‘ভাষার অন্তরনিহিত সম্পদ যতই কাব্যতান ও ব্যঞ্জনায় সমৃদ্ধ হোক না কেন গদ্যে উৎসারিত হলে সেখানে গদ্য বলেই আখ্যায়িত করতে হবে। এমন কবিতা কবির রচনা বা কবির দ্বারা প্ররোচিত হলেও আমরা বড়জোর বলতে পারি কবির চিত্ররূপময় কবিভাষা। কবিভাষা কিন্তু কবিতা নয় সাম্প্রতিক কালের কবিরা এ যুক্তি সম্ভবত: এই মুহূর্তে মানতে প্রস্তুত হবেন না, কারণ তাদের সাম্প্রতিক কালের কবিভাষা পয়ারের গন্ডি অতিক্রম করতে গিয়ে বহমান গদ্যই স্ফূর্ত লাভ করেছে তবে ব্যতিক্রম যে সেই এমন নয়। কেউ কেই দোটানার মধ্যেও উভয় তরঙ্গে সাঁতার কাটছেন। এ ধরনের কবিদের মধ্যে আশির দশকের রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন, নাসিমা সুলতানা, ইকবাল আজিজ, বুলবুল সরওয়ার, মতিউর রহমান মল্লিক, মোশাররফ হোসেন খান, সোলায়মান আহসান, মোহাম্মদ সাদিক, আসাদ বিন হাফিজ, তমিজউদ্দিন লোদী, আবদুল হাই শিকদার, তুষার দাশ, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, আবদুল হালীম খাঁ, হাসান আলীম, ফরিদ কবির, মুকুল চৌধুরী, মুসতাহিদ ফারুকী, আহমদ আখতার, নিজাম উদ্দীন সালেহ, গাজী রফিক, গাজী এনামুল হক, খসরু পারভেজ, বিলোরা চৌধুরী, আহমদ রাকীব, মঈন চৌধুরী ৃ। সাম্প্রতিক কাব্যভাষা বিষয়ে দোদূল্যমান তরুণতম কবি গোষ্ঠীর এই তালিকাটি বলাবাহুল্য একটি অসম্পূর্ণ তালিকা মাত্র।’ আশির দশকের কবিদের কম্পর্কে কবি আল মাহমুদের এ দ্বিধা-জড়তা রহস্যময় ও দু:খজনক। আশির দশকের যে কবিদের তালিকা তিনি পেশকরেছেন তাদের সকলেই কবিতা রচনা করতে অপটু বা কাব্যভাষা বিষয়ে অস্পষ্ট দোদুল্যমান বোঝাতে চেয়েছেন। আল মাহমুদের এই গড়পড়তা ভবিষ্যৎবাণী কতটুকু যুক্তিগ্রাহ্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু তিনিই নন, পঞ্চাশের কবিদের গাত্রদাহ মূরত আশির শক্তিমান কবিদের প্রতিভার বহ্নিশিখাতে দাহ্য হওয়ার যন্ত্রণা থেকেই উত্থিত হয়েছে। আমার বিবেচনায় আশির দশকের এমন ক’জন কবি রয়েছেন যাদের কবিতা চিত্রকল্প প্রকৃত অর্থে নতুন এদের কবিতা গবেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
আশির দশকের কবিতা প্রসংগে কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ বলেন, ‘যে জোয়ার এসেছিল সত্তর দশকে দশক ফুরাতে না ফুরাতে তার জল নেমে গেল। খানিকটা হতাশায়, খানিকটা স্থিততে। ফলে আশির দশকে যে কবিদল উদিত হলেন, তারা অনেক স্থিত, অনেক নিরাবেগ, অনেক শান্ত। এর একটি প্রমাণ এই যে, আশির দশকের তরুণ কবিদের গোত্রে গোত্রে যতো বিভক্তিই থাকেÑ তারা তাদের লক্ষ ও গন্তব্য সম্পর্কে অনেক বেশী দৃঢ় নিশ্চয়। আশির দশকের কবিরা আবার কবিতায় এসেছেনÑ মূল কবিতার কাছে। তারা জেনেছেন আবেগই কবিতা নয়, আবেগের শব্দ পিশল্পরূপ কবিতা।’ [দরজার পর দররোজা, পৃষ্ঠা-৭৭-৭৮]
গ.
এতো গেলো কবি সমালোচকদের বাক-বিতন্ডা আশির কবিদের সম্পর্কে অম্লবধুর বয়ান। এখন প্রায় পঁচিশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। সময় এসেছে আশির কবিদের আÍসমালোচনার। সাহিত্যের জন্য এ সময়টি নেহায়েত কম নয়। এ সময়ের অর্জন কতটুক তার বস্তুনিষ্ট সমালোচনা হওয়া দরকার। দেশজাতি তথা জাতী সাহিত্যে তরা কতটুকু দিলেন আর নিজেরাই বা পেলেন কতটুকু। এ প্রসঙ্গে সব কতাই এখন খোলামেলা করে বলা যাবে না তবে খয়িানটা মেলে ধরতে দ্বিধা নেই। আমাদের অর্জন মূলত: কতটি কাব্য গ্রন্থ আমাদের হাতে সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে কতটি সময়ের উল্লেখ যোগ্যে, কতটি প্রভাব ফেলেছে চলমান সাহিত্যে এটিই প্রধান। এরপর রয়েছে যুথবদ্ধ কাব্য আন্দোলন যার শুরু হয়েছিল প্রবল বেগেÑ তার বর্তমান অবস্থাটাই বা কি তারও নিকেশ।
আমাদের নকিব কবি মতিউর রহমান মল্লিক তার সংগীতসহ কাব্য গ্রন্থ বের হয়েছে ৫টি যথা: ১. আবর্তিত তৃণলতা [১৯৮৭] ২.অনবরত বৃক্ষের গান [২০০১] ৩.রঙিন মেঘের পালকি [শিশুতোষ, ২০০২] ৪.ঝংকার [গান, ১৯৭৮, ১৯৯৩, ৫.যতগান গেয়েছি। কবি সোলায়মান আহসানের ৪টি কাব্য গ্রন্থ যথা: ১. দাঁড়াও স্বকাল বিরূপতা [১৯৮৫] ২. কৃষ্ণস্বর প্রত্যুষের [১৯৯১] ৩. নক্ষত্রের বিলাসিতা [২০০৩] ৪. শূন্য ও শূন্যতা [২০০৫] কবি মোশাররফ হোসেন খানের ১১টি কাব্যগ্রন্থ যথা: ১. হৃদয় দিয়ে আগুন [১৯৮৫] ২. নেচে উঠা সমুদ্র [১৯৮৭] ৩. আরাধ্য অরণ্যে [১৯৯১] ৪. বিরল বাতাসের টানে [১৯৯১] ৫. পাথরে পারদ জ্বলে [১৯৯৫] ৬. ক্রীতদাসের চোখ [১৯৯৭] ৭. নতুনের কবিতা [২০০০] ৮. বৃষ্টি ছুঁয়েছে মনে মৃত্তিকা [২০০২] ৯. দাহন বেলায় [২০০২] ১০.কবিতা সমগ্র [২০০৩] ১১.আমার ছড়া [২০০৫]
কবি আসাদ বিন হাফিজের ৮টি কাব্যগ্রন্থ যথা: ১. কি দেখো দাঁড়িয়ে একা সুহাসিনী ভোর [১৯৯০, ১৯৯৭, ২০০০৩] ২. অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার [১৯৯৬, ২০০০, ২০০৩] ৩. নাতিয়াতুন্নবী [২০০৩] ৪. হরফ নিয়ে ছড়া [১৯৮৯-২০০২] ৫. আলোর হাসি ফুলের গান [১৯৯০, ১৯৯৮, ২০০২] ৬. কু কুরু কু [১৯৯২, ১৯৯৮, ২০০২] ৭. আল্লাহ মহান [২০০১] ৮. কারবালা কাহিনী [২০০১] কবি মুকুল চৌধুরীর কাব্যগ্রন্থ ৪টি যথা: ১. অস্নষ্ঠ বন্দর [১৯৯১] ২. ফেলে আসা সুগন্ধি রুমাল [১৯৯৪] ৩. চা বারান্দার মুখ [১৯৯৭] ৪. সোয়শা কোটি কবর [২০০৩]
কবি বুলবুল সরওয়ারের কাব্যগ্রন্থ ৫টি যথা: ১. ঝড় আসুক বৃষ্টি আসুক [১৯৮৮] ২. রুবাইয়াত [১৯৯০] ৩.চোখ বুজলেই মন [১৯৯২] ৪. অন্ধনগরী [২০০১] ৫. ডুবেও মরন হায় বিহনে মরন [১৯৯৭]
হাসান আলীমের কাব্যগ্রন্থ ১২টি যথা: ১. শ্বাপদ অরণ্যে অগ্নিশিশু [১৯৮৩] ২. নি:সঙ্গ নিলয় [১৯৮৭] ৩. মৃগনীল জোসনা [১৯৯০] ৪. সবুজ গম্বুজের ঘ্রাণ [১৯৯১] ৫. তোমার উপমা [১৯৯৪] ৬. ডানাওয়ালা অট্টালিকা [১৯৯৭] ৭. যে নামে জগত আলো [১৯৯৮] ৮. কাব্য মোজেজা [২০০০] ৯. কোথায় রাখি এ অলংকার [২০০৩] ১০. দ্রাবিড় বাংলায় [২০০৫] ১১. হৃদয়ে রেখেছি যারে [২০০৫] ১২. পান্না সোনা মান্না [২০০৪] এ কবিদের কাব্যগ্রন্থ তাদের কবিতা সাহিত্য সমাজের বেশ সাড়া এবং আশার আলো জুগিয়েছে বিশ্বাসী কবিদের বিশ্বাস নি:সৃত কবিতা যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে পারে অনুজ কবিদের সমসাময়িক কবিদেরও প্রভাবিত করতে পারে- তার প্রমান আজকের বিশ্বাসী কবিদের কাফেলা। এদের কবিতা সাহিত্যে বিশেষত: আধুনিক সাহিত্যে একটি প্রবল ধারা সৃষ্টি করেছে। এ কবিদের উত্তরসুরী নজরুল, ফররুখ, আল মাহমুদ হলেও এদের প্রত্যেকের স্বাত্যন্ত্র রয়েছে এবং চমক রয়েছে। এদরে কেউ কেউ, কোন কোন কাব্যগ্রন্থ নিশ্চয়ই সময়ের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে সক্ষম হবে। ইতিহাসে আলোচনার কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। তবে অনেকের অনেক কাব্যের বেশ কিছু কবিতা বিশেষত্ব অর্জন করতে পারেনি। এদের অনেকেই এখন সৃষ্টিশীলতায় মুখর নেই- বিশেষত: কাব্য জগতে যুথবদ্ধতাও নেই তেমন। এদের সৃষ্টিশীলতা সুপ্রচুর না হলেও অনুল্লেখযোগ্য নয়। বিশ্বাস এদের কেউ কেউ কালোত্তীর্ণ কবি খ্যাতিতে বরিত হবেন। কারণ তাদের কারো কারো লেখায় পরীক্ষা নীরিক্ষা রয়েছে। রয়েছে নতুনত্ব, তত্ত্ব ও বিজ্ঞানময়তী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com