শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

এক শতাংশ দূষণ বাড়লে ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে ২০ শতাংশ: গবেষণা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২

বায়ু দূষণের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। দূষিত এলাকাগুলোর মধ্যে ডিপ্রেশনের রোগী দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি। তার চেয়ে কম ডিপ্রেশনের রোগী পাওয়া গেছে যারা ইটভাটার আশেপাশের এলাকায় থাকেন। ৬৫ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে ডিপ্রেশনের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, পুরুষ থেকে নারীরা বেশি ডিপ্রেশনে ভোগেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত দূষণের মাত্রা থেকে এক শতাংশ দূষণ বাড়লে ডিপ্রেশনের সম্ভাবনা ২০ গুণ বেড়ে যায়। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশ করা ‘ব্রিদিং হেভি’ শীর্ষক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে। রবিবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি বছর বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ এবং ঢাকা দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসাবে স্থান পেয়েছে। বায়ু দূষণকে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে মৃত্যু এবং অক্ষমতার দিকে নিয়ে যাওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুঁকির কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছিল। দেশে আনুমানিক ৭৮ হাজার থেকে ৮৮ হাজার মৃত্যুর জন্য বায়ু দূষণ দায়ী। বায়ু দূষণের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, যার প্রভাব দেশের জিডিপিতে পড়ে। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে ঢাকা ও সিলেটের ১২ হাজার ২৫০ জন ব্যক্তির তথ্য ব্যবহার করে বহিরঙ্গন বা পরিবেষ্টিত বায়ু দূষণের কারণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর স্বল্পমেয়াদি প্রভাবের মূল্যায়ন করা হয়েছে। বায়ু দূষণের দিক থেকে সবার প্রথমেই আছে ঢাকা। ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণের শিকার বরিশাল বিভাগ। অন্যদিকে সিলেট বিভাগে বায়ু দূষণ অপেক্ষাকৃত কম। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে তিনটি ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই আছে ক্রমাগত ট্রাফিক জ্যাম। এরপর আছে নির্মাণাধীন এলাকা, যানবাহন ও ইটভাটা। ট্রাফিক জ্যাম ও নির্মাণাধীন প্রকল্পের কারণে যে পরিমাণ বায়ু দূষণ হয় তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বায়ুমান সূচকের থেকে ১৫০ গুণ বেশি এবং ইটভাটার কারণে যে দূষণ হয় তা ১৩৬ শতাংশ বেশি।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন বয়স্ক, শিশু এবং যাদের কমরবিডিটি অর্থাৎ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ আছে। প্রতিনিয়ত কফ এবং শ্বাসকষ্ট এসব দূষিত এলাকার প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য বক্ষব্যাধিও এসব এলাকার বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে দেখা গেছে। যাদের ইতোমধ্যে কমোরবিডিটি আছে তারা এসব এলাকায় সাধারণ সুস্থ ব্যক্তিদের থেকেও অতি মাত্রায় ঝুঁকিতে আছেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে আমাদের পালমোনারি ডিজিজ সামলানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা। এটাও কিন্তু ফুসফুসে প্রভাব ফেলে। এটার চিকিৎসা প্রাথমিক পর্যায়ে করতে হয়, হাসপাতালে যেতে হয়, ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনও কোনও জায়গায় খুবই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েন। অনেক জায়গায় অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত থাকেন। তাদের ক্ষেত্রে কিছু করা যায় না। তারপরও কর্মকর্তারা তাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করছেন। শহরে দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ কন্সট্রাকশন। শহরের উন্নয়নের জন্য কন্সট্রাকশন কাজ চলবেই। তবে এই দূষণ কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সে জন্য কিছু আগাম ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এটা অনেকেই করে না। এই জায়গায় অনেক প্রভাবশালী লোকজন কাজ করেন। তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা যায় না। তারপরও আমরা দায় এড়াতে পাড়ি না, আমাদের পারতেই হবে।’ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমার অনেকেই বিষয়টাকে যথাযথভাবে দেখি না। এর একটি হলো, আমরা যে জ্বালানি ব্যবহার করি সেটি থেকে দূষণ পেয়েছি। তারপরও কেন ব্যবহার করি– সেটি আমরা সরকারকে জানিয়েছি। বাংলাদেশে আমাদের যে রিফাইনিং সক্ষমতা আছে এটার মাধ্যমে আমরা তেল পরিশোধন করতে পারি। আমাদের যদি দূষণের মাত্রা কমাতে হয়, তাহলে ওই মানের তেল আমদানি করতে হবে– যেটার মাধ্যমে দূষণ কম হবে। এটি সম্পর্কে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে।’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান ড্যান চেন। বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের হেলথ স্পেশালিস্ট ওয়ামেগ আজফার রাজাসহ অনেক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com