আবহাওয়া এখন বেশ ঠান্ডা। সারাদিন রোদের তাপে গরম অনূভূত হলেও, সন্ধ্যা থেকেই টের পাওয়া যায় শীতে আগমনী বার্তা। শীতে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। শুধু ফ্লু নয়, শীতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে যেমন-হাতে, পায়ে, ঘাড়ে, পিঠে, কোমরে ব্যথা বেড়ে যায়। ফলে চলাফেরায় বেশ কষ্ট পোহান অনেকেই।
তবে ঠান্ডা আবহাওয়া বা শীতে পায়ের ব্যথাতেই বেশিরভাগ মানুষ কষ্ট পান। তবে শীতে পায়ে ব্যথা হওয়ার কারণ কী ও কীভাবে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়?
এ বিষয়ে হায়দ্রাবাদের কেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট, অর্থোপেডিক ও জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জন ডা. মনোজ কুমার গুডলুরু জানিয়েছেন ঠিক কী কী কারণে শীতে বাড়ে পায়ে ব্যথা ও ঘরোয়াভাবে কীভাবে এই ব্যথা সারানো যায়-
পায়ে ব্যথার কারণ কী? >> অতিরিক্ত পায়ের পরিশ্রম >> জয়েন্ট, হাড়, পেশী, লিগামেন্ট, টেন্ডন বা অন্যান্য নরম টিস্যুতে আঘাত >> পানিশূন্যতা >> রক্তে পটাসিয়াম, ভিটামিন ডি, সোডিয়াম বা ম্যাগনেসিয়ামের অভাব
>> পেশী ক্লান্ত হলে >> নমনীয়তার অভাব আপনি যদি গুরুতর ও একটানা পায়ের ব্যথায় ভোগেন তাহলে দ্রুত ডাক্তার দেখান। না হলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
ঠান্ডা আবহাওয়া কি পায়ের ব্যথার জন্য দায়ী? শীতকালে জয়েন্টে ব্যথা বা পায়ে অস্বস্তি হওয়া খুবই সাধারণ বিষয় বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ। বিশেষ করে বয়স্ক ও যারা আসীন জীবনযাপন করেন তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়। মূলত দুটি কারণে শীত জয়েন্টে ব্যথা বাড়ে, সেগুলো হলো- প্রথমত শীতকালে গতিশীলতা কমে যায় ফলে হঠাৎ পায়ে চাপ পড়লে ব্যথা হতে পারে। এছাড়া শীতে সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন পাওয়ার সম্ভাবনাও কমে। যা শীতকালে পায়ে ব্যথার দ্বিতীয় প্রধান কারণ।
পায়ের ব্যথা কমানোর উপায়
স্বাস্থ্যকর খাবার খান: ভিটামিন ডি, সি, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আদা, সয়াবিন, সালমন মাছ, সবুজ শাকসবজি, বাদাম, বীজ ও কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার পাতে রাখতে হবে শীতে। এই খাবারগুলো হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
যোগব্যায়াম করুন: শীতে বেশিরভাগ মানুষই অলস হয়ে পড়েন। এ কারণে অনেকেই শরীরচর্চা কম করেন। আর পর্যাপ্ত চলাচল ও শরীরচর্চার অভাবে পায়ের ব্যথা বাড়তে পারে। এ কারণে নিয়মিত ২০-৩০ মিনিট যোগব্যায়াম করুন। যা পায়ের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে পায়ের জন্য উপকারী এমন কয়েকটি যোগাসন করুন ১০ মিনিটের মতো। এতে আপনার ভারসাম্য উন্নীত হবে। এছাড়া স্নায়ুতন্ত্রকে প্রশমিত করবে, রক্ত স ালন উন্নত হবে, নিতম্ব, পা, পায়ের পেশীতে চাপ ও উত্তেজনাও কমবে। একই সঙ্গে গোড়ালির ব্যথা ও ফোলাভাবও কমবে।
ওজন কমান: পায়ে ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা। তাই আপনি যদি ওভারওয়েট বা স্থূলকায় হন তাহলে এখন থেকেই ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। তাহলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে পায়ের ব্যথা থেকেও মুক্তি মিলবে।
ম্যাসেজ করুন: ওয়ার্কআউটের পরে শরীরের যেসব অংশে বেশি চাপ পড়েছে সেসব স্থানের পেশীতে ম্যাসেজ করুন। ফলে ব্যথা কমবে। আর অবশ্যই শরীরচর্চার আগে ও পড়ে স্ট্রেচিং করুন, না হলে রগে বা পেশিতে টান লাগতে পারে।
হাইড্রেটেড থাকুন: পায়ে ক্র্যাম্পের সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো ডিহাইড্রেশন। ক্র্যাম্প হলো একটি অনিয়ন্ত্রিত পেশী সংকোচন। শরীর পর্যাপ্ত আর্দ্র থাকলে পেশীর শিথিলতা বজায় থাকে।
অন্যদিকে শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে পেশীগুলো উত্তেজিত হয়ে ওঠে ও ক্র্যাম্পিং বা পেশীর খিঁচুনি বাড়ে। তাই সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
গরম ও ঠান্ডা সেঁক: পেশীর ব্যথা কমাতে ঠান্ডা সেঁক নিন। এটি পেশীর খিঁচুনি, ফোলাভাব ও ব্যথা কমাতে পারে। অন্যদিকে গরম সেঁক কম্প্রেস ক্লান্ত পেশী পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। সূত্র: হেলথশটস