প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে আদর্শ স্থান হিসেবে বর্ণনা করে পারস্পরিক সুবিধার্থে বৃহত্তর বিদেশী ও স্থানীয় বিনিয়োগ কামনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে আদর্শ জায়গা। কারণ আমরা সর্বোচ্চ বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছি। তাই আমি আশা করি বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে বিনিয়োগ আসবে এবং স্থানীয় জনগণও নিজ দেশে বিনিয়োগ করতে অনুপ্রাণিত হবেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটির বেশি মানুষের বাজার হতে পারে। প্রায় ১৭ কোটি মানুষ আমাদের নিজেদেরই। আর পূর্ব দিকে ৫০ কোটি, উত্তর দিকে ১৫০ কোটি, পশ্চিমে ১০০ কোটি মানুষের বাজার রয়েছে। যোগাযোগ অবকাঠামো বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহনে বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই অর্থনৈতিক অ লে যারা বিনিয়োগ করবেন, তারা সমৃদ্ধ হবেন, আমাদের দেশেরও উন্নতি হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারে বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনে (বিএসইজেড) স্থাপিত জাপান অর্থনৈতিক অ লের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই অর্থনৈতিক অ ল উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে বিনিয়োগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। কারণ আমরা সবচেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি। এখানে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিশেষ ইউটিলিটি সার্ভিস দেয়ার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। বিনিয়োগ বান্ধব আইন বা নীতিমালা করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রতিযোগিতামূলক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি অবকাঠামোর বিস্তৃত করা হয়েছে। বিভিন্ন সেবা পরিষেবা প্রদানে ওয়ান স্টপ সার্ভিসও চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি এখানে যাতে বিনিয়োগকারীদেও কোনরকম কালক্ষেপন না হয় তাঁর ব্যবস্থা সরকার করে দিচ্ছে।
ভৌগলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এমন একটা জায়গায় অবস্থান করছে যেখানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের একটি সেতুবন্ধন রচনা হতে পারে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বাজারের পাশাপাশি আ লিক বাজার ধরার সুবিধার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নিজস্ব মার্কেটের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বড় বাজার রয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ উন্নত করেছি। তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, সেখানেও আমাদের বাজার আছে। কাজেই বিনিয়োগের সবচেয়ে উত্তম জায়গা বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং সুমিতোমো করপোরেশন গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসায়ুকি হায়োডো।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অ ল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অ লের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবধরনের সুযোগ-সুবিধা রেখে তাঁর সরকার বিভিন্ন অর্থনৈতিক অ লগুলোতে যেন জি টু জি বিনিয়োগ হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েছে। আজকে যে অর্থনৈতিক অ ল উদ্বোধন হয়েছে তা বাংলাদেশ এবং জাপান সরকারের মধ্যে জিটুজি চুক্তির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে এই অ লটি গড়ে উঠছে। সেখানে যোগাযোগ ও বন্দর ব্যবস্থাসহ সবধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। প্রায় এক হাজার একর জমির ওপর জাপান সরকার এই অর্থনৈতিক অ লটা প্রতিষ্ঠা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করে বলেন, ২০১৪ সালে তাঁর জাপান সফরের সময় প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
বন্ধুপ্রতীম দেশ জাপানের সহযোগিতায় বাংলাদেশে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে জানিয়ে তিনি মেট্রোরেল, বিমান বন্দরের ৩য় টার্মিনাল, মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ডিপ সী পোর্ট এবং পাওয়ার প্লান্টের কথা উল্লেখ করেন।
জাপান-বাংলাদেশ ক’টনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি বলেন, এটা আমাদের ৫০ বছরের বন্ধুত্বের নিদর্শন যে জাপান সবসময় বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছে এবং আমরাও সবসময় জাপানের সঙ্গে একটা চমৎকার সম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছি। আমাদের এই বন্ধুত্ব অটুট।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান সফরের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি যখন ১৯৫৪ সালে প্রথম মন্ত্রী হয়েছিলেন, তখনই তিনি প্রথম এই অর্থনৈতিক অ লগুলো গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। পরে আবারও তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে দেশব্যাপী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। সেসময় তিনি শ্রম ও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু কলকারখানা জাতীয়করণ করে পুনরায় চালু করেছিলেন। জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল আমাদের কৃষি-প্রধান দেশে শিল্পায়নও ঘটবে। জাতির পিতা সবসময় জাপানকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করতেন। তিনি যমুনা ও রপসা সেতুসহ পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থে নির্মাণ করলেও জাপানের সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক অ লগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। আরো কয়েকটি দেশ যেমন ভারত, চীন, সৌদি আরব এবং সিঙ্গাপুরের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে এবং আরো কয়েকটি দেশ বিনিয়োয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি। সেই সুবিধাগুলোও তারা ভোগ করতে পারবেন। তাছাড়া আমাদের চট্টগ্রাম, মোংলা এবং পায়রা বন্দর ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। মাতারবাড়িতে ডিপ সী পোর্ট হচ্ছে। ফলে নদীপথে তারা পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবেন। আর রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সারা বাংলাদেশের মধ্যে একটা সংযোগ আমরা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। এখানে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে সমুদ্র, আকাশ ও রেলপথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহনের সুযোগ রয়েছে। কাজেই বাংলাদেশে একটি চমৎকার বিনিয়োগ অনুক’ল পরিবেশ রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
যত্রতত্র কল-কারখানা না করার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি জমি যাতে নষ্ট না হয়। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ১০টি অর্থনৈতিক অ ল উৎপাদন শুরু করেছে। তাতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করতে পারছি। ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। একদিকে পরিবেশ অপরদিকে ভূমি রক্ষা করে এগুলো করছি।