নির্মাণকাজ সম্পন্নের আড়াই বছর পর ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছিলেন ত্রিশাল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবনটি। উদ্বোধনের পর পেরিয়ে গেছে আরো সাড়ে ৪ বছর। অতিক্রম করেছে প্রায় ৭ বছর। অর্ধযুগ কেটে গেলেও এখনো মুক্তিযোদ্ধারা ছন্নছাড়া। ভবনটি ব্যবহার করতে না পেরে, পুরাতন সেই জীর্ণ কার্যালয় অথবা এখানে সেখানে বসে আড্ডা দিয়ে সময় কাটান মুক্তিযোদ্ধারা। ২০১৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর ত্রিশাল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবন নির্মাণে অনুমোদন দেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়। এক কোটি ৭৫ লাখ ১২ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয়ে চারতলা বিশিষ্ট ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৬ সালের ৩০ জুন। নির্মাণকাজ সম্পন্নের পর উদ্বোধনের অপেক্ষার প্রহর গুনেন মুক্তিযোদ্ধারা। অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহে আওয়ামীলীগের জনসভায় যোগদান করতে এসে জেলার ১৯৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে ত্রিশাল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবনটিরও উদ্বোধন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে স্বস্তি নেমে এলেও অতিবাহিত হয় আরো ৪ বছর। নির্মাণকাজ সম্পন্ন ও উদ্বোধনের পর পেরিয়ে গেল প্রায় ৭ বছর। বছরে শুধুমাত্র স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসসহ ৫ দিবসে তালা খোলা হলেও অধ্যাবদি ওই ভবনটি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারছেন না মুক্তিযোদ্ধারা। এনিয়ে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামানের নজরে আসলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখা শুরু করেন। তিনি সরেজমিনে মুক্তিযোদ্ধা ভবনটি পরিদর্শন করেন এবং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেন এবং তা নিরসন করে ব্যবহার উপযোগী করার উদ্যোগ নেন। ইউএনও মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, মুক্তিযোদ্ধা ভবনটি নির্মাণ, হস্তান্তর ও ব্যবহার উপযোগী নয় মর্মে বিষয়টি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে জানতে পেরে সরেজিমনে পরিদর্শন করি। এ সময় ভবনটিতে বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করি। ভবনটিতে পানির ব্যবস্থা ছিল না, ঠিকাদার যে সাবমারসেবল সেটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পানির ব্যবস্থা ছিল না, এছাড়াও ভবনটি দীর্ঘদিন ব্যবহারে না থাকায় কয়েকটি দরজা ও জানালা ভাঙ্গা রয়েছে। ভবনটির এমন পরিস্থিতি দেখে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের সমস্যা নিরসন, সাবমারসেবল স্থাপন করে পানির ব্যবস্থা লাইন চালু করন, দরজা জানালা মেরামত করে ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদ নূরুল ইসলাম মোমেন, মোফাজ্জল হোসেন, আব্দুল মোতালেব জানান, ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলা মার্কেট ও তৃতীয় তলায় করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যালয়। মুক্তিযোদ্ধাগণ এখন বয়সের ভারে নূয়ে পড়েছেন। অনেক মুক্তিযোদ্ধারা ভাল ভাবে হাটতেও পারেন না এবং চলতেও পারেন না। তাহলে ওই সকল মুক্তিযোদ্ধাগণ কিভাবে তিন তলায় উঠবেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ যাতে করে তাদের কার্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে পারে এবং নিজ কার্যালয়ে উঠতে এবং বসতে পারে তার জন্য ভবনটিতে একটি লিফট স্থাপনের দাবী জানান। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, দীর্ঘদিন যাবত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কোন কমিটি নেই, তাই ভবনটি তাদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে না। কমিটি না থাকলেও কাউকে না কাউকে দায়িত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় নানা কর্মকান্ড পরিচালিত হয়, তবু তালাবদ্ধ রয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবন। কেন হচ্ছে না মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমিটি, তা জানা নেই কারো। তবে কি, কমিটির কারণে বছরের পর বছর এভাবেই অযতœ, অবহেলা আর অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হল এক কোটি ৭৫ লাখ ১২ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওই ভবনের অবকাঠামো? আর কত কাঙ্খিত ভবনের বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াবো? এমনটাই প্রশ্ন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের। তবে এমন প্রশ্নের সমাপ্ত হবে ১৬ ডিসেম্বর। ভবনটি কবে উন্মুক্ত করা হবে এমন প্রশ্নে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দেওয়া হয়েছে, পানিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে, এছাড়াও দরজা জানালাসহ যে সমস্যাগুলো ছিল তা সমাধান করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ভবনটি ১৬ ডিসেম্বর হস্তান্তর করা হবে বলে তিনি নিশ্চত জানান।