সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন

বরিশালে বাড়ছে নারীদের কর্মসংস্থান

শামীম আহমেদ বরিশাল প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২

মুদি দোকান থেকে শুরু করে শপিং কমপ্লেক্স। বরিশালের সবখানেই বেড়েছে নারী কর্মীদের কর্মসংস্থান। ঊনবিংশ শতাব্দীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন রক্ষণশীল সমাজের শৃঙ্খল ভেঙে বেগম রোকেয়া নারী জাতির মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। বেগম রোকেয়া নারী জাতির যে অগ্রগতি ও উন্নয়নের কথা ভেবেছিলেন, আজ তা সত্যিকারে পরিণত হয়েছে। আর এর পেছনে রয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার, কর্মক্ষেত্রে নারীদের নির্বিঘেœ কাজ করার পরিবেশ তৈরিসহ উন্নয়নের সকলক্ষেত্রে নারীকে সম্পৃক্ত করা। যে কাজটি নিরলসভাবে করেছেন বিশ্ব মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার কারণেই আজ এগিয়ে চলেছে নারী, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমান সমাজে নারী সেকালের বৃত্তের মধ্যে বন্দি নেই। সমাজ ব্যবস্থার আরোপিত শৃঙ্খল ভেঙে আত্মবিশ্বাসে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই নারী শুধু ঘরেই নয়; সকল কর্মকান্ডে নিয়োজিত থেকে তাদের আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় মনোবলের পরিচয় দিয়ে অগ্রগতি উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে শুধু নারীর অগ্রগতি নয়, দেশের অর্থনীতির ভীত শক্ত ও মজবুত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে বরিশালের কোথাও কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মী দেখা যায়নি। সময়ের পরিবর্তন ও ব্যবসায়ীক দিক বিবেচনা করে বর্তমানে বরিশালের অধিকাংশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী কর্মীদের উত্তম ব্যবহার আর ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়ে ক্রেতাদের বুঝিয়ে অতিসহজে পন্য সামগ্রী বিক্রি করতে পারার কারণেই দিন দিন নারী কর্মীদের সংখ্যা বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নারী কর্মীদের নিজেদের চাহিদা কম, দোকান কিংবা শপিং কমপ্লেক্স থেকে নানা অজুহাতে তারা যখন তখন বের হয়ে সময় অপচয় করেনা, এমনকি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করার কারণেই নারী কর্মীদের সর্বত্র কদর বেড়েছে। একাধিক ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, একজন পুরুষ কর্মী কারণে অকারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে ব্যক্তিগত কাজ কর্ম করেন, তাদের বেতনও দিতে হয় বেশি। তাছাড়া পুরুষ কর্মীদের কিছু বললে তারা উল্টো খারাপ ব্যবহার এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করেন। কিন্তু নারী কর্মীদের বেলায় তা ঘটেনা। তাই সবদিক বিবেচনা করে নারী কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। নগরী ঘুরে দেখা গেছে, মুদি দোকান, মিষ্টির দোকান, ফাস্টফুড, স্টেশনারীর দোকান, চায়ের দোকান, জামাকাপড়, জুতা, কসমেটিক্স, ইলেকট্রনিক্সের দোকান, বিভিন্ন শোরুমগুলোতে নারী কর্মীদের উপস্থিত চোখে পরার মতো। এরা সদালাপী ও ক্রেতাদের অতিসহজে বুঝিয়ে পন্য বিক্রি করেন। যা প্রতিষ্ঠান মালিকদের কাছেও জনপ্রিয়। তাই অধিকাংশ দোকানেই নারী কর্মচারীদের গুরুত্ব বেড়েছে। তাছাড়া নারী কর্মীদের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেঁচা বিক্রিও বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীই (বিক্রয় প্রতিনিধি) নয়; ম্যানেজার থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদেও অধিষ্ঠিত রয়েছেন নারী। এদেরমধ্যে অনেকে পড়াশুনার পাশাপাশি বাড়তি টাকা আয়ের জন্য দোকানে চাকরি করছেন। নগরীর আঁচল বুটিকের স্বত্বাধিকারী বিলকিস আহম্মেদ লিলি বলেন, আমার দোকানের ম্যানেজার একজন নারী। সে নিজের মতো করে শোরুম পরিচালনা করেন। কোথায় কি সাজিয়ে রাখতে হবে, কোন অকেশনে কি পোশাক বিক্রি করবে তা তাকে বলে দিতে হয়না। আমি শোরুমে না আসতে পারলেও সে সব হিসেব নিকেশ করে শোরুম গুছিয়ে রাখেন। নগরীর একাধিক মোবাইল শোরুমের মালিকরা বলেন, নারী বিক্রয় প্রতিনিধিদের এক কথা বারবার বলতে হয়না, অল্পতেই তারা বোঝেন। এদের চাহিদা কম, তারা যতোটুকু কাজ করেন তা দায়িত্ব সহকারে করেন। তারা বন্ধও কম দেন। বিশেষ করে ক্রেতাদের অতিসহজে বুঝিয়ে পন্য বিক্রি করতে পারেন বলেই তাদের এতো কদর। নগরীর একটি স্বনামধন্য কসমেটিক্সের দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধি নাজমা আক্তার বলেন, আমি প্রায় চারবছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে নিজের পড়াশুনার খরচ চালাচ্ছি। এখান থেকে যে টাকা পাই তা দিয়েই চলে যায়। প্রতিষ্ঠান মালিক খুব ভালো মনের মানুষ দাবি করে তিনি আরও বলেন, আমি যখন কলেজে যাই তখন মালিক নিজেই দোকানে বসেন এবং দোকানে থাকা অবস্থায় কাস্টমার না আসলে তিনি আমাকে পড়ার জন্য সুযোগ করে দেন। নগরীর একটি মোবাইল শোরুমের বিক্রয় প্রতিনিধি সাদিয়া আফরিন বলেন, আমি গত দুই বছর ধরে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছি। শুরুতে অনেকের অনেক ধরনের আপত্তিকর কথা শুনতে হয়েছে, প্রতিবাদ করতে পারিনি, কারণ তখন আমরা সংখ্যায় খুব কম ছিলাম। এখন আর কেউ কিছু বলেনা। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত কাজ করে বাসায় ফিরে যাই। বর্তমানে নগরীতে অনেক মেয়েরাই এখন এ পেশার সাথে যুক্ত রয়েছেন। সচেতন নাগরিক কমিটির বরিশাল জেলার সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, শতবর্ষ আগে চার দেয়ালে বন্দি নারীদের চোখের জল মুছে শৃঙ্খল ভাঙার গান শুনিয়েছেন মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া। সাহস, আত্মবিশ্বাস আর দৃঢ়তাকে সঙ্গী করে একাই পাড়ি দিয়েছেন দুর্গমগিরি। সেকালের মতো আজকের নারীরা অন্ধকারে নেই। তাদের মধ্যে জাগরণ ঘটেছে তারা আত্মবিশ্বাসী হয়েছে। নিজেকে শিক্ষিত করে কর্মময় জীবনে প্রবেশ করছে। শিক্ষায় তাদের পরিবর্তন করেছে। তাই সেকালের নারীদের অন্ধকার যুগ এখন আর নেই। নারীদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রমে বর্তমানে বাংলাদেশে নারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। রাষ্ট্র পরিচালনা, রাজনীতি, চাকরি, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, সাংবাদিকতা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, কৃষি, এমনকি নারীর ক্ষমতায়নসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে নারীর অগ্রগতি এগিয়ে চলা দৃশ্যমান। নারী নির্যাতন, হত্যা, খুন, ধর্ষণ বন্ধকল্পে নারীর পথচলা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের নারী বিভিন্নক্ষেত্রে তাদের শিক্ষা, মেধা, দক্ষতা ও কর্মের দ্বারা দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com